প্রশ্নঃ৩। “যা আর নেই,যা ঝড় জল মাতলার গর্ভে গেছে তাই খুঁজে খুঁজে উচ্ছব পাগল হয়েছিল।” –দুর্যোগটির বর্ণনা দাও।দুর্যোগটি উচ্ছবকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল ? (৩+২=৫) (২০১৭) অথবা
“সকাল হতেই বোঝা গিয়েছিল সর্বনাশের বহরখানা।”–কার সর্বনাশ ? সর্বনাশের বহর-এর পরিচয় দাও।(১+৪=৫) অথবা
মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্প অবলম্বনে ঝড়-জল-বন্যার রাতটির বর্ণনা দাও। (৫) অথবা
“উচ্ছবের সংসার মাটিতে লুটোপুটি গেল।”–উচ্ছব কে ? তাদের সংসার মাটিতে লুটোপুটি যাওয়ার কারণ কী? (১+৪=৫) অথবা
“কপালটা মন্দ তার।”–এখানে কার কপাল মন্দের কথা বলা হয়েছে ? তার কপাল মন্দ হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ কর। (১+৪=৫)
উত্তর: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটিতে উচ্ছবের কথাই বলা হয়েছে। উচ্ছব হল আলোচ্য গল্পের কেন্দ্রিয় চরিত্র।সে সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা।মাতলা নদীর বন্যায় সংসার ,স্ত্রী,পুত্র কন্যা সর্বস্ব হারিয়ে সে কাজের খোঁজে গ্ৰাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর মনিব বাড়ি অর্থাৎ কোলকাতার বড় বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে।
একদিন তুমুল ঝড়-বৃষ্টিতে মাতলার জল ফুলে ওঠে।জলের স্রোতে উৎসবের ঘরের চাল পড়ে যায়।স্ত্রী,কন্যা,পুত্র ভেসে যায়,সহায় সম্বলহীন উচ্ছবের একটি টিনের কৌটো,তাতে রাখা ছিল জমি চেয়ে দরখাস্ত করা নকল কাগজ ,সেটিও বন্যায় ভেসে গেছে। এখানে ‘যা আর নেই’— বলতে হত-দরিদ্র উচ্ছবের সর্বস্ব হারানোর কথা বলা হয়েছে।
ঝড় জল বন্যার রাতে উচ্ছব সপরিবারে হিঞ্চে সেদ্ধ,গুগলি সেদ্ধ,নুন আর লঙ্কা পোড়া দিয়ে ভাত খেয়েছিল।সেদিন আকাশের অবস্থা খারাপ ছিল।উচ্ছবের স্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে যে,যারা নৌকা নিয়ে বেড়িয়েছে তারা হয়তো ডুবে মারা যাবে। এমন সময় প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে তাদের বাড়ির খুটিটা ধনুষ্টঙ্কার রোগীর মতো কাঁপতে থাকে। বিপদ বুঝে উচ্ছব খুটিটা মাটির দিকে চেপে ধরে এবং ভগবানকে ডাকতে থাকে।অন্যদিকে চন্নুনীর মা ছেলে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে থাকে।হঠাৎ আচমকা বিদ্যুতের ঝলকানির আলোয় সফেন জলরাশিতে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।কিন্তু উচ্ছব বেঁচে থেকেও ভাগ্যের বিড়াম্বনায় স্ত্রী,পুত্র,কন্যাকে খোঁজে এবং খিদের জ্বালায় সে প্রায় পাগল হয়ে ওঠে।
এইভাবে লেখিকা ‘ভাত’ গল্পে দুটি চিত্রকে তুলে ধরেছেন।দুটি চিত্র পরস্পর বিপরীতধর্মী।বড়লোক বাড়িতে ‘হেলা ঠেলা ভাত’-আর উচ্ছবের মতো মন্দ কপাল যাদের তাদের জীবনে একটু ভাতের জন্য হাহাকারের শেষ নেই।
—————————————-