প্রশ্ন:- “বুড়ির শরীর উজ্জ্বল রোদে তপ্ত বালিতে চিত হয়ে পড়ে রইল।”–বুড়ির চেহারা ও পোশাকের পরিচয় দাও।তার তপ্ত বালিতে পড়ে থাকার কারণ কী ? ৩+২
উত্তর: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটিতে বৃদ্ধার চরিত্রটি সুনিপুন ভাবে অঙ্কন করেছেন। গল্পটির প্রধান চরিত্র হল বৃদ্ধা । গল্পটিতে বৃদ্ধার চেহারা ও পোশাকের যে বর্ণনা পাই তা হল-থুত্থুরে কুঁজো ভিক্ষিরি,রাক্ষুসে চেহারা,একমাথা সাদা চুল,পড়নে একটা ছেঁড়া নোংরা কাপড়,গায়ে জড়ানো চিটচিটে তুলোর কম্বল,একহাতে বেটে লাঠি,ক্ষয়া খর্বুটে তার মুখ,মুখে সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন প্রকট।
■ গল্পটিতে আমরা দেখি, বুড়ি চায়ের দোকানে চা খাবার পর চায়ের দাম মিটিয়ে দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে বটতলায় এসে হাজির হয়।বুড়ি বটতলায় এসে বটগাছের গুড়ির কাছে মোটা শিকড়ে বসে,শিকড়ের পিছনে গুড়ির গায়ে যে খোঁদল ছিল সেখানে পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এ প্রসঙ্গে লেখক জানিয়েছেন– “বোঝা গেল,বুড়ির এ অভিজ্ঞতা প্রচুর আছে।অর্থাৎ সে বৃক্ষবাসিনী।” এরপর অনেক বেলা হয়ে যাবার পর বুড়িকে উঠতে না দেখে চাওলা জগা অনুমান করে যে, বুড়িটা নির্ঘাত মরে গেছে।এইকথা শোনার পর বটতলাতে ভিড় বাড়তে থাকে।লোকজন বলতে থাকে সর্বনাশ হয়েছে এবার বুড়ির মৃতদেহকে শেয়াল-কুকুরে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে আর চারপাশে গন্ধে টেকা যাবে না।তাই গ্ৰামের চৌকিদারকে খবর দেওয়া হয়।চৌকিদার জানায় যে,ফাঁপিতে এক ভিখারি বুড়ি মারা গেছে তার জন্য থানা পুলিশ করার কোন প্রয়োজন নেই।তাছাড়া বটতলা থেকে থানার দূরত্ব পাঁচ ক্রোশ,সেখান থেকে খবর দিয়ে আসতে আসতে বুড়ির মৃতদেহ থেকে গন্ধ ছুটবে।তাই শেষ পর্যন্ত চৌকিদার বুড়ির মৃতদেহকে নদীতে ফেলে দিয়ে আসতে পরামর্শ দেন।চৌকিদারের কথামতো কয়েকজন লোক বুড়ির মৃতদেহকে বাঁশের চ্যাংদোলায় করে ঝুলিয়ে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে।আর বুড়ির মৃতদেহ শুকনো নদীর উপর তপ্ত বালিতে চিৎ হয়ে পড়ে থাকে ।প্রসঙ্গত লেখক জানিয়েছেন– “বুড়ির শরীর উজ্জ্বল রোদে তপ্ত বালিতে চিত হয়ে পড়ে রইল।”
শুধু তাই নয়,শব বহনকারীরা বুড়ির মৃত দেহকে নদীতে ফেলে এসে দিগন্তে চোখ রাখে এবং দেখে যে কখন ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন নেমে এসে বুড়ির মৃত দেহকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে।
গল্পটিতে আমরা দেখি যে,বুড়ি ছিল ভিক্ষারি,অসহায়,অজ্ঞাতপরিচয়হীন।তাই তার মৃত্যুর পর দেহ সৎকারের কোন লোক না থাকার জন্য চৌকিদার বুড়িকে নদীতে ফেলে দিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন।আর এই সমস্ত কারণেই বুড়ির শরীর উজ্জ্বল রোদে তপ্ত বালিতে চিত হয়ে পড়ে ছিল।