প্রশ্ন: ” সেই সময় এল এক বুড়ি।”-বুড়ির চেহারার বর্ণনা দিয়ে গল্পের শেষে বুড়ির ভূমিকা কি ছিল তা লিখ।(২+৩=৫)
অথবা
‘ভারতবর্ষ’ গল্পের বৃদ্ধার চরিত্রটি বিশ্লেষন করে বৃদ্ধার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে লেখকের যে অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছে তা লিখ।(৫)
অথবা
‘ভারতবর্ষ’ গল্পের অজ্ঞত পরিচয় বৃদ্ধা কীভাবে ভারতবর্ষের প্রতীক হয়ে উঠেছে তা লিখ।(৫)
উত্তর: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর ‘ভারতবর্ষ‘ গল্পটিতে বৃদ্ধার চরিত্রটি সুনিপুন ভাবে অঙ্কন করেছেন। গল্পটিতে বৃদ্ধার যে বর্ণনা পাই তা হল-থুত্থুরে কুঁজো ভিক্ষিরি,রাক্ষুসে চেহারা,একমাথা সাদা চুল,পড়নে একটা ছেঁড়া নোংরা কাপড়,গায়ে জড়ানো চিটচিটে তুলোর কম্বল,একহাতে বেটে লাঠি,ক্ষয়া খর্বুটে তার মুখ,মুখে সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন প্রকট।
■ বুড়ি অসহায় এবং ভিখারি হলেও অত্যন্ত তেজি ও আত্মসম্মান বোধ জাগ্ৰত ছিল।আর তার প্রমান আমরা পাই চায়ের দোকানের আড্ডাধারী লোকেরা যখন বুড়িকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে বলেছিল-
” এই বাদলায় তেজি টাট্টুর মতন বেরিয়ে পড়েছে।”
এর উত্তরে বুড়ি জানায় –“তোমাদের কত্তাবাবা টাট্টু।”
এছাড়া বুড়ি চরিত্রের মধ্যে রঙ্গ-রসিকতা বোধ ও কম ছিল না।গল্পের শেষে আমরা দেখি দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর মারমুখী জনতাদের কান্ড কারখানা দেখে বুড়ি ফ্যাকফ্যাক করে হেসে উঠেছিল।
গল্পটিতে লেখক বৃদ্ধা চরিত্রটিকে ভারতমাতার প্রতীক হিসাবে অঙ্কন করেছেন।এই বুড়ি চরিত্রের মধ্যে দিয়ে ভারতমাতার প্রাচীনত্ব,দারিদ্র্য ও অসহয়তা যেমন প্রকাশ পেয়েছে তেমনি প্রকাশিত হয়েছে লেখকের ধর্ম নিরপেক্ষতা। এখানে বুড়িকে ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রতীক হিসাবে দেখানো হয়েছে।তাই গল্পের শেষে হিন্দু-মুসলমান উভয় পক্ষই যখন বুড়িকে প্রশ্ন করে –“বুড়ি,তুমি হিন্দু না মুসলমান।” আর তখন বুড়ি ক্ষিপ্ত হয়ে জানায় -“চোখের মাথা খেয়েছিস মিনষেরা।” সুতরাং বৃদ্ধা চরিত্রের মধ্যে দিয়ে লেখক পাঠকদের এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন যে-এই দেশ হিন্দুর নয়,মুসলমানের নয় এই দেশ সমগ্ৰ ভারতবাসীর দেশ। এইভাবে গল্পকার এই গল্পে বৃদ্ধার চরিত্রটিকে প্রধান চরিত্র হিসাবে দেখানোর পাশাপাশি তিনি বৃদ্ধাকে ভারতবর্ষের প্রতীক হিসেবেও তুলে ধরেছেন।