প্রশ্নঃ ১। “বাদার ভাত খেলে তবে তো আসল বাদাটার খোঁজ পেয়ে যাবে একদিন।” –‘বাদা’কাকে বলে?উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এরকম মনে হওয়ার কারণ কী ? (১+৪=৫) (২০১৬,২০১৯)
অথবা
“সে বাদাটা বড় বাড়িতে থেকে যায় অচল হয়ে।” –এখানে ‘বাদা’কী ? তা বড় বাড়িতে অচল হয়ে থেকে যায় কেন ? (১+৪=৫)
উত্তর: স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পে প্রশ্নদ্ধৃত মন্তব্যটি করা হয়েছে।সাধারণভাবে ‘বাদা’ শব্দটির অর্থ হল জঙ্গলে পূর্ণ নীচু জায়গা ।আলোচ্য গল্পে লেখিকা ‘বাদা’ শব্দটিকে দুটি ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করেছেন।বড়ো বাড়ির অধিকৃত বাদা হল-জলাময়।অন্যদিকে উৎসব যে বাদায় বাস করে সেটা অনুর্বর ভূমি,সেখানে কেবল গুগলি,গেঁড়ি,কচুশাক,সুশনোশাক পাওয়া যায়।
বন্যায় উৎসবের স্ত্রী,পুত্র,কন্যা এবং শেষ সম্বল ভিটে বাড়ি হারিয়ে একমুঠো ভাত খাওয়ার আশায় বাসিনীর মনিব বাড়িতে আসে।সেখানে সে ভাত খাওয়ার লোভে আড়াই মণ কাঠও ভাতের নেশায় কেটে ফেলে।দুর্ভিক্ষের দিনে বাসিনীর মনিব বাড়িতে বিভিন্ন রকমের চাল দেখে এবং শোনে এই চালের উৎস বাদা–“কেনা চাল নয় বাদা থেকে চাল আসছে?”বাড়ির আয়ের উৎস বাদা।তাই এ বাড়ির ছেলেরা কেউ চাকরি-বাকরি করে না।লেখিকার ভাষায়–“আঠারোখানা দেবত্র বাড়ি আর বাদা অঞ্চলে অসাগর জমি থাকলে কাজ বা করে কে?” এ বাড়িতে এক একজন বাবুর জন্য এক একরকমের চালের ভাত রান্না করা হয়।
অন্যদিকে উৎসব যে বাদায় ছোটো থেকে বড়ো হয়েছে এমন দুর্ভিক্ষের দিনে সে বাদায় শুধু গুগলি,গেঁড়ি,কচুশাক প্রভৃতি দিয়ে ভরা—“সব নাকি বাদার দৌলতে,সে কোন বাদা?উচ্ছবের বাদায় শুধু গুগলি-গেঁড়ি-কচুশাক-সুশনো শাক।”
তাই উৎসব এই আসল বাদাটা খুঁজে বের করতে চায়।আসলে সে বাদা শুধু উৎসবের একারই স্বপ্ন নয়,প্রতিটি নিরন্ন মানুষের স্বপ্ন এমন এক বাদা খুঁজে বের করা উৎসব তাদের সকলের হয়ে মনের মধ্যে এই আকাঙ্খা লালন করে।
অশৌচ বাড়ির চুরি করা ভাত খেতে খেতে তার চন্নুনীর মার কথা মনে পড়ে।লেখিকার ভাষায়—- “বাদার ভাত খেলে তবে তো সে আসল বাদাটার খোঁজ পেয়ে যাবে একদিন।”
—————————————-