প্রশ্নঃ ৫। ‘ভাত’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর। (৫)
উত্তর: সাহিত্যে নামকরণ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বিভিন্ন ধরনের নামকরণ সাহিত্যে প্রচলিত যেমন–চরিত্রকেন্দ্রিক,বিষয়কেন্দ্রিক,ব্যঞ্জনাগত ইত্যাদি।মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পের নামকরণটি বিষয়গত বা ব্যঞ্জনাগত দিক দিয়ে কতটা সার্থক হয়ে উঠেছে তা আলোচিত হল—
গল্পের মূল ভাব: আলোচ্য গল্পের বাদা অঞ্চলের স্ত্রী পুত্র পরিবার সর্বস্ব হারানো উৎসব নামক চরিত্রটির অসহয়তার কথা বর্ণিত হয়েছে।মাতলা নদীর গর্ভে সর্বস্ব হারিয়ে অভুক্ত উৎসব ‘পেটে ভাত নেই বলে উৎসব প্রেত হয়ে আছে’
বাসিনীর মনিব বাড়িতে ভাতের প্রাচুর্যের কথা শুনে উৎসব ভাবে ওই বাড়ির সমস্ত কিছু যে বাদার দৌলতে সে বাদা একদিন সে খুঁজে বের করবে।বাড়ির কর্তা মারা যাওয়ায় অশৌচ বাড়ির পেতলের ডেকচি ভরা ভাত খেয়ে অচৈতন্য হয় উৎসব।ডেকচি চুরির অপরাধে উৎসবকে পরদিন পুলিশ ধরে নিলেও তার চৈতন্য হয় না,আর সেই বাদাটারও খোঁজ করা হয় না।
# ভাত নামকরণের তাৎপর্য: আলোচ্য গল্পে নিরন্ন উৎসবের কাছে ‘ভাত’ একমাত্র জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।গল্পটিতে দুটি বাদার কথা বলা হয়েছে।উৎসবের বাদায় গুগলি,গেঁড়ি,শাকপাতা ছাড়া কিছুই হয় না,আর অন্যদিকে বাসিনীর মনিব বাড়ির বাদায় ‘হেলা ঠেলা ভাত’।যেখানে একমুঠো ভাতের জন্য মানুষ প্রেত হয়ে ওঠে সেখানে কনকপানি,পদ্মজালি,ঝিঙেশাল,রামশাল,মোটাশাপটা প্রভৃতি চালের বাহার লক্ষ করা যায় বড়বাড়িতে।লেখিকা এই ভাতকে কেন্দ্র করে দুটি বিপরীতধর্মী চিত্র তুলে ধরেছেন।
৩) নামকরণের সার্থকতা ও সিদ্ধান্ত: কত সুন্দর ব্যঞ্জনায় ‘ভাত’ কথাটিকে কেন্দ্রে স্থাপন করে দরিদ্র অসহায় মানুষের আকাঙ্খাকে তুলে ধরেছেন লেখিকা।এই ভাত আসলে আপামোর বাঙালির স্বচ্ছলতার আকাঙ্খার প্রতীক।
তাই বিষয়কে অতিক্রম করে ‘ভাত’ কথাটি অত্যন্ত ব্যঞ্জনাকে দারুন ভাবে তুলে ধরেছে আলোচ্য গল্পে।তাই বলা যায় ‘ভাত’ গল্পের নামকরণটি ব্যঞ্জনাগত দিক দিয়ে হয়ে উঠেছে অত্যন্ত সার্থক ও সর্বাঙ্গ সুন্দর।তাই আলোচ্য গল্পে বিষয়কে অতিক্রম করে ‘ভাত’ কথাটি অত্যন্ত ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠেছে।
—————————————-