আমার বাংলা
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
২০২৩ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ আটটি প্রশ্নোত্তোর
‘ছাতির বদলে হাতি’
উত্তর: সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের ‘ছাতির বদলে হাতি’ নামক রচনায় গারো পাহাড়ের এক ছোটো ব্যবসায়ী চেংমানের কথা এখানে বলা হয়েছে।
■ আজ থেকে পঁচিশ-ত্রিশ বছর আগে হালুয়াঘাট বন্দরে সওদায় এসেছিল এক গারো চাষি তার নাম ছিল চেংমান।আর ঠিক সেই সময়ই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়।বৃষ্টি কমবার কোন লক্ষণ না দেখতে পেয়ে সে ভাবতে থাকে কীভাবে বাড়ি ফিরবে।ভাবতে ভাবতে সে মনমোহন মহাজনের ঝাঁপির নীচে আশ্রয় নেয়।বৃষ্টি কমার লক্ষণ না দেখে মনমোহন মহাজন খাস কলকাতা থেকে কিনে আনা নতুন ছাতা চেংমানের মাথার উপর মেলে দিয়ে বলল–
“যা যা,ছাতিটা নিয়ে বাড়ি চলে যা। নিজে ভিজিস তাতে কিছু নয়, কিন্তু এতগুলো পয়সার সওদা যে ভিজে পয়মাল হয়ে যাবে।”
মনমোহন মহাজনের এই দরদ দেখে চেংমান দোমনা হয়ে ভাবে যে ছাতাটা নেওয়া তার ঠিক হবে কি না? তাছাড়া তার কাছে কোন পয়সাও নেই।অনেক দাম হবে হয়তো ছাতাটার।কিন্তু মহাজন চেংমানকে ভরসা দেয় এবং জানায়–
“নগদ পয়সা নাই বা দিলে।যখন তোমার সুবিধে হয় দিয়ে গেলেই হল।ওর জন্যে কিছু ভেবো না।”
অর্থাৎ ছাতার জন্য নগদ পয়সা চেংমানকে দিতে হবে না।তার সুবিধামতো দিলেই হবে।একথা শোনার পর চেংমান ভাবে এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিৎ নয়।কেননা তার বউ-ছেলে- মেয়ে তার পথ চেয়ে বসে আছে।সে বাড়ি ফিরে গেলে তবেই হাড়ি চড়বে।তাই নিরুপায় চেংমান নতুন ছাতি মাথায় দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়।হালুয়াঘাট বন্দরে সওদায় এসে বৃষ্টিতে আটকে পড়ে চেংমান মনমোহন মহাজনের কাছ থেকে নতুন ছাতিটি পেয়েছিল।
উত্তর: সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত-‘আমার বাংলা’ গ্ৰন্থের ‘ছাতির বদলে হাতি’ নামক রচনায় চেংমান হল গারো পাহাড়ে বসবাসকারী গারো সম্প্রদায়ের এক ছোটো ব্যবসায়ী।
■ আজ থেকে পঁচিশ-ত্রিশ বছর আগে চেংমান হালুয়াঘাট বন্দরে সওদায় এসেছিল।আর ঠিক সেই সময়ই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়।বৃষ্টি কমবার কোন লক্ষণ না দেখতে পেয়ে সে ভাবতে থাকে কীভাবে বাড়ি ফিরবে।ভাবতে ভাবতে সে মনমোহন মহাজনের ঝাঁপির নীচে আশ্রয় নেয়।বৃষ্টি কমার লক্ষণ না দেখে মনমোহন মহাজন খাস কলকাতা থেকে কিনে আনা নতুন ছাতা চেংমানের মাথার উপর মেলে দিয়ে বলল–
“যা যা,ছাতিটা নিয়ে বাড়ি চলে যা।নিজে ভিজিস তাতে কিছু নয়,কিন্তু এতগুলো পয়সার সওদা যে ভিজে পয়মাল হয়ে যাবে।”
মনমোহন মহাজনের এই দরদ দেখে চেংমান দোমনা হয়ে ভাবে যে ছাতাটা নেওয়া তার ঠিক হবে কি না ? তাছাড়া তার কাছে কোন পয়সাও নেই।অনেক দাম হবে হয়তো ছাতাটার।কিন্তু মহাজন চেংমানকে ভরসা দেয় এবং জানায় যে-ছাতার জন্য নগদ পয়সা তাকে দিতে হবে না।তার সুবিধামতো দিলেই হবে।একথা শোনার পর চেংমান ভাবে এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিৎ নয়।কেননা তার বউ-ছেলে- মেয়ে তার পথ চেয়ে বসে আছে।সে বাড়ি ফিরে গেলে তবেই হাড়ি চড়বে।তাই নিরুপায় চেংমান নতুন ছাতি মাথায় দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়।এরপর চেংমান একদিন মহাজনকে তার পাওনা মিটিয়ে নিতে বলে।কিন্তু মহাজন তাকে তাড়াহুড়ো করতে বারণ করে।এরপর কয়েক বছর কেটে যায় এবং চেংমান ছাতির প্রসঙ্গ ভুলে যায়।কিন্তু হঠাৎ একদিন হাটবারে মনমোহন চেংমানকে পাকড়াও করে এবং জানায়–
“কী বাছাধন,বড়ো যে পালিয়ে বেড়াচ্ছ।পাওনা মাটিয়ে দিয়ে যাও।”
মনমোহনের একথা শোনার পর চেংমানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।সে বুঝতে পারে যে,এবার সে ইঁদুর কলে পড়েছে।মনমোহন তার লাল জব্দা খাতা বের করে পাওনার হিসাব দেখায়।এই কয়েক বছরে চক্রবৃদ্ধি হারে ছাতির দাম ও সুদ সমেত পাওনা হয়েছে হাজার টাকা-যা একটা হাতির দামের সমান।আর এই হিসাবের খাতাটি দেখার পর চেংমানের চোখ কপালে ওঠে।
উত্তর: সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের ‘ছাতির বদলে হাতি’ নামক রচনায় লেখক গারো পাহাড়ের প্রজা তথা চাষিদের উপর মনমোহন মহাজন ,কুটিশ্বর মহাজনের অত্যাচারের কথা যেমন তুলে ধরেছেন তেমনি তুলে ধরেছেন জমিদারের অত্যাচারের কথাও।কীভাবে মনমোহন মহাজন চেংমানকে একটি ছাতা ধারে দিয়ে হাজার টাকা অর্থাৎ একটি হাতির সমান দাম আদায় করেছে।আর অন্যদিকে মহাজন কুটিশ্বর সাহা কীভাবে দেনার দায়ে নিবেদন সরকারের ছেষট্টি বিঘা জমি কেড়ে নিয়েছে।শুধু মহাজনই নয় জমিদার,তালুকদারদের অত্যাচারের কথা বলতে গিয়েই লেখক জানিয়েছেন–
“ছিল জোতদার আর তালুকদারদের নিরঙ্কুশ শাসন।”
গারো পাহাড়ে ডালু,হাজং,গারো প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক বাস করত।তারা বুকের রক্ত জল করে চাষ করত।ফসল কাটার পর সেই ফসল তাদের জমিদারের খামারে তুলতে হতো।জমিদারের পাওনা মিটিয়ে তবেই তারা তাদের ঘরে ধান নিয়ে যেতে পারত।চুক্তির ধান তে তাদের দিতেই হতো সেই সঙ্গে কর্যার ধান হিসাবে প্রতি এক টাকায় এক মন ধান দিতে হতো।তাছাড়াও ছিল হাজার রকমের দেয় কর।ফলে বুকের রক্ত জল করে ফসল ফলানোর পরেও চাষিদের শুধু পালা হাতে ঘরে ফিরতে হতো। এছাড়াও এ অঞ্চলে আরো এক রকমের প্রথা -সেটা হল ‘নানকার প্রথা’। এই নানকার প্রজাদের অবস্থা ছিল শোচনীয়।নানকার প্রজাদের জমিতে স্বত্ব ছিল না।জমির ফসলে তাদের অধিকার ছিল না।জমি জরিপের পর তাদের উপর আড়াই টাকা পর্যন্ত খাজনা ধার্য হতো।খাজনা না দিতে পারলে তহশীলদার প্রজাদের কাছারিতে ধরে নিয়ে যেত,পিছমোড়া করে মারত।তারপর মালঘরে আটকে রাখত।নিলামে সব সম্পত্তি খাস করে নিত।মহাজনেরা কর্যা ধানে এক মনে দু -মন সুদ আদায় করত।এইভাবে গারো পাহাড়ের চাষিদের উপর মহাজন,জমিদার,তালুকদাররা নির্মম অত্যাচার করত।
নিজেকে যাচাই করে নাও MCQ practice করে । এখানে ক্লিক করো। https://shekhapora.com/%e0%a6%89%e0%a6%9a%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a8%e0%a7%a7-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-mcq/
কলের কলকাতা
(খুব শিঘ্রই আপডেট দেওয়া হবে)
হাত বাড়াও
উত্তর: সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আমার বাংলা’ গ্ৰন্থের ‘হাত বাড়াও’ নামক রচনাটি পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় রচিত হয়েছে।যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষে বিপন্ন যে মানুষ দুপায়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তাদের লেখক হাত বাড়িয়ে সাহায্য করতে বলেছেন।প্রসঙ্গত লেখক জানিয়েছেন–
“তোমরা হাত বাড়াও তাকে সাহায্য করো।”
■ লেখক পঞ্চাশের মন্বন্তরের কুয়াশাচ্ছন্ন এক সকালে মিলিটারি ব্যারাকের পাশে এক অদ্ভুত জানোয়ারকে দেখতে পান।জানোয়ারটি চারপায়ে এগিয়ে আসছে।রাস্তা থেকে খুঁটে খুঁটে চাল আর ছোলা খাচ্ছে।পরিচিত কোন জন্তুর সঙ্গে তার মিল নেই।কুয়াশার মধ্যে তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।জন্তুটির চাহনিতে এমন একটি মায়া ছিল যা লেখকের বুকের রক্তকে হিম করে দেয়।জন্তুটি কাছে আসতেই লেখক স্তম্ভিত হয়ে যান।বারো-তেরো বছরের এক উলঙ্গ ছেলে ,মাজা পড়ে গেছে,হাঁটতে পারে না,জানোয়ারের মতো চার পায়ে চলছে।এই দৃশ্যটি দেখার পর লেখক সেখান থেকে পালিয়ে যান।কিন্তু সেই দুটি জ্বলন্ত চোখ যেন লেখককে থেকে থেকে পাগল করে।লেখক উপলব্ধি করেন যে,দুর্ভিক্ষে মানুষের এই যে শোচনীয় অবস্থা এরজন্য মানুষই একমাত্র দায়ী। তাই এই যুদ্ধ কিংবা দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পেতে হলে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন,সাহায্যের প্রয়োজন।আর লেখকের মতো সেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত বারো-তেরো বছরের উলঙ্গ ছেলেটিও যেন শান্তি চায়।লেখকের ভাষায়–
“সেই দুটি জলন্ত চোখ শান্তি চায়।”
বাংলার বুক জুড়ে সবুজ মাঠের সোনালী ফসলে,চাষির গোলা ভরা ধানে,কারখানার কারখানার বন্ধনমুক্ত আন্দোলিত বাহুতে,কোটি কোটি বলিষ্ঠ মানুষের হাত দিয়ে স্বাধীন সুখী জীবনে শান্তি আসবে।
লেখকের মতে মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই সাহায্যের প্রয়োজন।শহরে কিংবা গ্ৰামে যারা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে,মাথা উঁচু করে বাঁচতে দিচ্ছে না-তাদের অন্যায়ের অবসান ঘটানোর জন্যই সাহায্যের প্রয়োজন।যুদ্ধ আর অনাহারে মৃত্যুকে বন্ধ করার জন্য,সুখ আর শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লেখক সবাইকে হাত বাড়িয়ে সাহায্য করতে বলেছেন।
উত্তর: সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আমার বাংলা’ গ্ৰন্থের ‘ হাত বাড়াও‘ নামক রচনায় বারো-তেরো বছরের এক উলঙ্গ ছেলে তার সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে খুনিদের শনাক্ত করছে।
■ লেখক পঞ্চাশের মন্বন্তরের কুয়াশাচ্ছন্ন এক সকালে মিলিটারি ব্যারাকের পাশে এক অদ্ভুত জানোয়ারকে দেখতে পান।জানোয়ারটি চারপায়ে এগিয়ে আসছে।রাস্তা থেকে খুঁটে খুঁটে চাল আর ছোলা খাচ্ছে।পরিচিত কোন জন্তুর সঙ্গে তার মিল নেই।কুয়াশার মধ্যে তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।জন্তুটির চাহনিতে এমন একটি মায়া ছিল যা লেখকের বুকের রক্তকে হিম করে দেয়।জন্তুটি কাছে আসতেই লেখক স্তম্ভিত হয়ে যান।বারো-তেরো বছরের এক উলঙ্গ ছেলে ,মাজা পড়ে গেছে,হাঁটতে পারে না,জানোয়ারের মতো চার পায়ে চলছে।এই দৃশ্যটি দেখার পর লেখক সেখান থেকে পালিয়ে যান।কিন্তু সেই দুটি জ্বলন্ত চোখ যেন লেখককে থেকে থেকে পাগল করে।কিন্তু সেই দৃশ্যটি লেখকে বার বার উতলা করে।প্রসঙ্গত লেখক জানিয়েছেন–
“কিন্তু আজও সেই দুটি জ্বলন্ত চোখ আমাকে থেকে থেকে পাগল করে।”
লেখক দুর্ভিক্ষ পীড়িত এই ভয়াবহতার ছবিটি প্রতক্ষ করে উপলব্ধি করেন যে,দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষের এই যে অবস্থা তার জন্য মানুষই একমাত্র দায়ী।শুধু লেখকই নয়,সেই উলঙ্গ ছেলেটিও যেন চোখে আঙুল দিয়ে সেই সব অপরাধী তথা খুনিদের দেখাতে চায়।তাই লেখক জানিয়েছেন–
“সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে সেইসব খুনিদের শনাক্ত করছে।” এখানে ‘খুনি’ বলতে গ্ৰামের সেইসব শোষক মহাজনদের দিকেই অঙুলি নির্দেশ করা হয়েছে-যারা শহরে,গ্ৰামে,বন্দরে জীবনকে হত্যা করছে,মানুষকে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে দিচ্ছে না।শুধু গ্ৰামই নয় শহরের বিভিন্ন কলকারখানার মালিক ও পুঁজিপতিরাও এই শ্রেণিতে পড়ে।যারা কৃত্রিম ভাবে অভাব সৃষ্টি করে,দুর্ভিক্ষকে প্রকট করে,মানুষের শ্রমের যথাযথ মূল্য না দিয়ে,মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্নকে ধ্বংস করেছে তাদেরকেই এখানে ‘খুনি’ বলা হয়েছে।
@ গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি বিষয় দেখে রাখো @
পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন কবিতা
‘কে বাঁচায় কে বাঁচে ‘ গল্পের বড় প্রশ্ন
‘রূপনারানের কূলে’ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ৩ টি প্রশ্নোত্তর
নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর
‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার বড় প্রশ্ন
২০২৩ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ বাংলা সাজেশন এর জন্য এখানে ক্লিক করো
ভালো
Nice