( বিভাব নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর,‘বিভাব’ নাটকের সাজেশন, bibhab natok proshno, উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2022, ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ পাঁচটি প্রশ্নোত্তোর ।২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ পাঁচটি প্রশ্নোত্তোর । উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২২,Higher Secondary Bengali Suggestion 2022, hs bengali suggestion 2021 pdf, hs bengali suggestion 2022 pdf, ‘ভাত’ গল্পের প্রশ্নোত্তর |bhaat golpo by Soiyod mostafa siraj || উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২২ |Higher Secondary Bengali Suggestion Question and Answer | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের সাজেশন অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির উত্তর PDF Download এর লিঙ্ক নীচে দেওয়া হল।’বিভাব’ নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর,‘বিভাব’ নাটকের সাজেশন, Higher Secondary Bengali বা WBCHSE HS Bengali উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্য বিভাব নাটক । বিভাব নাটকের গুরুত্ত্বপূর্ণ পাঁচটি বড় প্রশ্ন ও উত্তর এখানে আলোচনা করা হলো। বিভাব নাটক থেকে যেসকল বড় প্রশ্ন গুলি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বা দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বিষয়ের বিভাব নাটকের এই প্রশ্নগুলি পড়লে তোমরা যথভাবে উত্তর লিখতে পারবে । HS bengali suggestion 2022 এর জন্য সমগ্র গল্প কবিতা , নাটক ,ভাষা , শিল্প সংস্কৃতির ইতিহাসের প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য এই ওয়েবসাইটটি ফলো করো। )
প্রশ্নোত্তরের শেষে PDF download এর লিঙ্ক দেওয়া আছে । তোমরা সাজেশনের সবগুলো প্রশ্ন উত্তরসহ download করে নিতে পারো ।
*** ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ পাঁচটি প্রশ্নোত্তোর ।👇
প্রশ্ন:১। “বুদ্ধিটা কী করে এল তা বলি।”—বুদ্ধি বলতে কি বোঝানো হয়েছে? বুদ্ধি কেমন করে এসেছিল ? (১+৪=৫)
অথবা
“তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি।”—কে কোন প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করেছেন তা আলোচনা কর। (১+৪=৫)
উত্তর: শম্ভু মিত্র তাঁর ‘বিভাব’ নাটকের সূচনাতেই জানিয়েছেন-দুরন্ত অভাব থেকেই তাঁর এই নাটকের জন্ম হয়েছে। কেননা তাদের ভালো স্টেজ,সিনসিনারি,আলো,ঝালর কিছুই নেই। আর মঞ্চ সজ্জার এই উপকরণগুলি না থাকা সত্ত্বেত্ত ভঙ্গী নির্ভর উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে কীভাবে নাটক মঞ্চস্থ করা যায় -সেই উপায় খুঁজে বের করতেই নাট্যকার শম্ভু মিত্র বুদ্ধি শব্দটি ব্যাবহার করেছেন।
■ শম্ভু মিত্র গ্ৰুপ থিয়েটারের নাটক অভিনয়ের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা উপস্থাপন করেছেন।নাট্যকার জানিয়েছেন,দুরন্ত অভাব থেকেই তাঁর এই নাটকের জন্ম হয়েছে। তাঁদের অভিনয়ের জন্য ভালো স্টেজ,সিনসিনারি,আলো,ঝালর কিছুই নেই-থাকার মধ্যে আছে কেবল নাটক করার বোকামিটা।আর সেই সঙ্গে সরকারী পেয়াদাদের খাজনা আদায়।তারা পেশাদারী থিয়েটারকে ছাড় দিলেও গ্রুপ থিয়েটারের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে।ফলে গ্ৰুপ থিয়েটার আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়।শম্ভু মিত্র এই সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য একটা প্যাঁচ বের করেন-যেখানে মঞ্চ,সিনসিনারি,আলো,ঝালর,টেবিল,বেঞ্চ,দরজা,জানালা কোন কিছুরই প্রয়োজন হবে না।একটা যে কোন প্ল্যাটফর্ম হলেই চলবে। আর এই সমস্ত উপকরণ না থাকা সত্ত্বেত্ত কীভাবে নাটক মঞ্চস্থ করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করতেই তিনি বলেছেন—-
“বুদ্ধিটা কী করে এল তা বলি।”
কীভাবে যাবতীয় প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে গ্ৰুপ থিয়েটারকে এগিয়ে নিয়ে যাত্তয়া যায় এই প্রসঙ্গে নাট্যকার বলেছেন—-
“তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি।”
শম্ভু মিত্র নাটকের প্রাচীন ঐতিহ্য থেকেই অভিনয় রীতির অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।তাই ‘বিভাব’ নাটকে পুরোনো নাটকের প্রসঙ্গকে তিনি বার বার এনেছেন।নাট্যকার পুরোনো একটি বাংলা নাটকে দেখেছিলেন-“রাজা রথারোহণম নাটয়তি।” –অর্থাৎ,রাজা রথে চড়ার ভঙ্গি করলেন।এছাড়া উড়ে দেশের যাত্রায় দেখেছিলেন,ঘোড়ার অনুপস্থিতিতে দূতকে লাঠি সম্বল করে খবর নিয়ে আসতে।এমনকি মারাঠি তামশাতেও দেখেছিলেন ভঙ্গি নির্ভর অভিনয়।এইভাবে দর্শকদের কল্পনার সাহায্য নিয়ে ভঙ্গি নির্ভর নাটক অভিনয়ের যে ঐতিহ্য রয়েছে সেখান থেকেই শম্ভু মিত্র নাটক মঞ্চস্থ করার বুদ্ধি পেয়েছিলেন।
—————————————-
প্রশ্ন ২) “জীবন কোথায় ?”–কে কাকে একথা বলেছেন?বক্তা জীবনকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে করেছেন ? (১+১+৩=৫)
অথবা
“কোথায় জীবনের খোরাক,হাসির খোরাক নেই।”–বক্তা কে ? বক্তার এইরকম মনে হওয়ার কারন কি ছিল ? (১+৪=৫)
অথবা
“এই চার দেওয়ালের মধ্যে ,এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না-হাসিও পাবে না।”–বক্তা কে ? মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা কর। (১+৪=৫)
অথবা
“এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে?”–বক্তা কে ? সমগ্ৰ নাট্য কাহিনির নিরিখে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর: শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটকের উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন শম্ভু মিত্র। আর শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলি তথা অমরকে একথা বলেছেন।
■ আলোচ্য নাটকে শম্ভু মিত্র জানিয়েছেন যে তাদের একটা হাসির নাটক করতে হবে।তাই শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলির বাড়িতে আসে হাসির খোড়াক জোগার করার জন্য।কারণ তার নাকি দারুণ বক্স অফিস।তাই হাসির নাটক প্রযোজনার জন্য প্রথমে কাল্পনিক ভঙ্গীর মাধ্যমে অভিনয় ও পরে মূলত বৌদি তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনায় ‘লভ সিন’ এবং ‘প্রগ্ৰেসিভ লভ সিন’ করা হয়।এরপরও
যখন দর্শনের হাসি পেল না তখন শম্ভু মিত্র প্রশ্ন করেন--“জীবন কোথায়?” আবার পরোক্ষনেই শম্ভু মিত্র জানায়—-
“এই চার দেওয়ালের মধ্যে ,এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না-হাসিও পাবে না।”
শম্ভু মিত্র উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে,ঘরের মধ্যে জীবনকে তথা জীবনের প্রকৃত সত্যকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।গন্ডীবদ্ধ ভাবে অবস্থান করে কখনোই জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না আর হাসিও পাবে না। তাই হাসির খোরাক,পপুলার জিনিসের খোরাক পাবার জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাইকে বাইরে বেড়িয়ে আসার পরামর্শ দেন।কিন্তু বাইরে বেড়িয়ে আসার পর কিছুই দেখতে না পেয়ে শম্ভু মিত্র মন্তব্য করেন—
“নাঃ কোথায় জীবনের খোরাক,হাসির খোরাক নেই।”
এরপর শোভাযাত্রীদের একটি মিছিল দেখা যায়।তারা “চাল চাই,কাপড় চাই।”শ্লোগান দিতে থাকে।অন্যদিকে পুলিশ এসে সেই মিছিল আটকানোর চেষ্টা করে।পুলিশ শোভাযাত্রীদের ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয় কিন্তু শোভাযাত্রীরা পুলিশের কথার অবাধ্য হলে পুলিশ গুলি চালায়। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে মাটিতে পড়ে যায়,শোভাযাত্রীরা সকলেই বসে পড়ে।তাদের মধ্যে হাহাকার ও গোঙানির শব্দ শোনা যায়। সারা স্টেজ তখন লাল আলোতে ভরে যায়। এরপর শম্ভু মিত্র ও অমর গাঙ্গুলি মঞ্চে প্রবেশ করেন।শম্ভু মিত্র দর্শকের দিকে তাকিয়ে বলেন–
“এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে ?”
শম্ভু মিত্র বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষ
নির্মমতার মধ্যেও বিনোদন খোঁজে। আর এই সস্তা জনপ্রিয়তা খোঁজার প্রবণতাকে ব্যঙ্গ করে বিদ্রুপের সঙ্গেই তিনি এই মন্তব্যটি করেছেন।
—————————————-
প্রশ্ন ৩) ‘বিভাব’ -নাটকে যে অভিনবত্ব প্রকাশ পেয়েছে নাটকটি বিশ্লেষণ করে তা আলোচনা করো। (৫)
উত্তর: শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ -নাটকটি একটি একাঙ্ক নাটক(One Act Play)। নাটকটি শম্ভু মিত্র পরিচালিত ‘বহুরূপী‘ নাট্যগোষ্ঠীর একটি অসামান্য উপস্থাপনা।শম্ভু মিত্র তাঁর এই নাটকটিতে নানা দিক দিয়ে অভিনবত্ব বা নূতনত্বের সৃষ্টি করেছেন।আর সেই দিকগুলি নিয়েই আমরা এখানে আলোচনা করছি—
১) নামকরণের দিক দিয়ে অভিনবত্ব: ‘বিভাব’ কথার অর্থ হল-‘বিশেষ ভাব’। সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্র অনুযায়ী কাব্য বা নাটকে রতি,হাস,শোক ইত্যাদি নয় প্রকার ভাবের উদ্ভবের কারণ-কেই ‘বিভাব’ বলা হয়।শম্ভু মিত্র তাঁর এই নাটকের নামকরণ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন–“কোন এক ভদ্রলোক পুরোনো সব নাট্যশাস্ত্র তল্লাশ করে আমাদের এই নাটকের নাম দিয়েছেন ‘বিভাব’ নাটক।”— অর্থাৎ ‘বিভাব’ নামটি নাট্যকারের দেওয়া নয়,কোনো এক ভদ্রলোকের দেওয়া।তাই বলা যায় এর ভিত্তি পুরোনো নাট্যশাস্ত্র।এছাড়াও তিনি বলেছেন তাঁর এই নাটকের নাম ‘বিভাব’ না হয়ে ‘অভাব নাটক’ হওয়া উচিত ছিল।কেননা দুরন্ত অভাব থেকেই এই নাটকের জন্ম হয়েছে।এইভাবে নামকরণের দিক থেকে শম্ভু মিত্র নূতনত্ব সৃষ্টি করেছেন।
২) মঞ্চসজ্জার দিক থেকে অভিনবত্ব:– ‘বিভাব’ নাটকের মূল প্রেরণা জাপানি কাবুকি থিয়েটার। শম্ভু মিত্র জানিয়েছেন,তাঁর এই নাটকের জন্ম হয়েছে দুরন্ত অভাব থেকে।কেননা তাদের ভালো স্টেজ,সিনসিনিরি,আলো,ঝালর কিছুই নেই।আর সেই সঙ্গে সরকারি পেয়াদাদের খাজনা আদায়।আর এই সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য,প্রয়োজনীয় মঞ্চ সজ্জার যাবতীয় উপাদান গুলিকে অগ্ৰাহ্য করে কীভাবে ভঙ্গি নির্ভর অভিনয়ের মাধ্যমে নাটক উপস্থাপন করা যায় তা তিনি জাপানি কাবুকি থিয়েটারের অভিনয়,পুরোনো সব বাংলা নাটকের অভিনয় থেকে প্রেরণা পান।ফলে মঞ্চ সজ্জার আর প্রয়োজন হয়না,যে কোন একটি প্ল্যাটফর্মেই নাট্যকার তাঁর নাটক মঞ্চস্থ করেন।মঞ্চে বাস চলাচল বোঝাতে বাসের ছবি নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করতে বলেন,চেয়ারে বসার সময় কল্পিত ভঙ্গি করেন,ট্রাম চলাচল বোঝাতে মুখ দিয়ে শব্দ,রক্তের প্রবাহকে বোঝাতে লাল আলোর ব্যবহার করেন।এই ভাবে তিনি মঞ্চসজ্জার দিক থেকে নানা অভিনবত্ব সৃষ্টি করেছেন।
৩) সংলাপ সৃষ্টিতে অভিনবত্ব:- আলোচ্য নাটকের চরিত্ররা তাদের বাস্তব জীবনের পরিচিতি নিয়েই উপস্থিত হয়েছেন।আর তাই নাটকটিতে চরিত্র উপযোগী সংলাপ ব্যবহৃত হয়েছে।’লভ সিন’ ও ‘প্রোগ্ৰেসিভ লভ সিন’ -এ নায়ক-নায়িকার ভূমিকায়,এমনকি পুলিশের ভূমিকায় অভিনয় করতে হলে কীভাবে সংলাপ ব্যবহৃত হবে তা শম্ভু মিত্র,অমর গাঙ্গুলি,তৃপ্তি মিত্র প্রমুখ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন।ফলে চরিত্র উপযোগী সংলাপ ব্যবহৃত হওয়াতে নাটকটিতে নূতনত্ব এসেছে।
৪) বিষয়গত অভিনবত্ব:- ‘বক্স অফিসে’ দারুণ সাড়া ফেলার জন্য মূলত তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনায় ‘লভ সিন’ ও ‘প্রোগ্ৰেসিভ লভ সিন’ করা হয়।কিন্তু এতেও যখন লোকের হাসি পায়নি তখন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বাইরে বেড়িয়ে আসেন কেননা–“এই চার দেওয়ালের মধ্যে ,এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না-হাসিও পাবে না।” কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাটকটি হাসির আর থাকে না।তথাপি ব্যঙ্গ করে নাট্যকার জানিয়েছেন–“এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে?” অর্থাৎ হাসির ‘বিভাব’ পরিনত হয় কান্নায়।এইভাবে বিষয়গত দিক দিয়েও নাট্যকার অভিনবত্বের সৃষ্টি করেছেন।
—————————————-
প্রশ্ন ৪) “আর একবার এক মারাঠি তামশায় দেখেছিলাম।”—বক্তা মারাঠি তামশায় কী দেখেছিলেন ? বক্তা কোন প্রসঙ্গে মারাঠি তামশার কথা বলেছিলেন ? (৪+১=৫) (২০১৬)
উত্তর: শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন শম্ভু মিত্র। ‘বিভাব’ নাটকের ভিত্তি হল পৌরানিক সব নাট্যশাস্ত্র্য।তাই আলোচ্য নাটকে পৌরানিক নাটকের প্রসঙ্গ বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে। নাট্যকার একবার এক মারাঠি তামশায় দেখেছিলেন— মঞ্চের একপাশে দাঁড়িয়ে এক চাষি তার জমিদারের কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করছে। কিন্তু চাষিটির মনোরথ পূর্ণ না হওয়ায় চাষিটি মন্দিরের দিকে অগ্ৰসর হয়-ভগবানের কাছে নালিশ জানানোর জন্য।চাষিটি মন্দীরের দিকে চলল কিন্তু মঞ্চ থেকে এক পাও নামল না।মঞ্চের তক্তার উপরেই কয়েক বার গোল হয়ে ঘুরপাক খেল,যেন মনে হল চাষিটি গ্ৰামটিকে অতিক্রম করে মন্দিরের চলে এসেছে। এরপর চাষিটি মঞ্চের অপর পার্শ্বে গিয়ে কাল্পনিক মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে তার মনের সমস্ত দুঃখের কথা ভগবানকে জানায়।অন্যদিকে যে অভিনেতা জমিদার সেজে এতক্ষণ চাষিটির উপর গর্জন করছিল,সে দর্শকের সামনেই মুখে দাড়ি-গোঁফ লাগিয়ে পুরুত সেজে মঞ্চের অপর পার্শ্বে চাষির সামনে গিয়ে আবার ধর্মীয় তর্জন শুরু করে দেয়।আর মাঠ ভর্তি লোক নিঃশব্দে মেনে নিয়ে সেইসব দেখছিল। শম্ভু মিত্র এই দৃশ্যগুলিই মারাঠি তামশায় দেখেছিল।
■ শম্ভু মিত্র মঞ্চ সজ্জার প্রয়োজনীয় উপাদানকে অগ্ৰাহ্য করে,ভঙ্গি নির্ভর উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে কীভাবে নাটক মঞ্চস্থ করা যায়- এই প্রসঙ্গেই তিনি পুরোনো বাংলা নাটকের ভঙ্গী নির্ভর অভিনয় এবং উড়ে দেশের যাত্রার ভঙ্গি নির্ভর অভিনয়ের কথা আলোচ্য নাটকে উপস্থাপন করেছেন। এগুলির পাশাপাশি তিনি মারাঠি তামশায় দেখা ভঙ্গি নির্ভর অভিনয়ের কথাও বলেছেন। এককথায় ভঙ্গি নির্ভর নাটক উপস্থাপনার যে পন্থা তিনি খুঁজে পেয়েছেন সেই প্রসঙ্গেই তিনি মারাঠি তামশার কথা বলেছেন।
—————————————-
প্রশ্ন ৫) ‘বিভাব’-কথাটির সাধারণ অর্থ কী ? ‘বিভাব’ নাটকটির নামকরণ কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ তা আলোচনা কর। (১+৪=৫) (২০১৮)
অথবা
“আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক।”—অভাবের চিত্র নাটকে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে তা লিখ। প্রসঙ্গত এর নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর। (৩+২=৫)
উত্তর: শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব‘ -নাটকটি একটি একাঙ্ক নাটক (One Act Play)। ‘বিভাব’ কথার অর্থ হল–‘বিশেষ ভাব’।
সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্র অনুযায়ী কাব্য বা নাটকে রতি,হাস,শোক ইত্যাদি নয় প্রকার ভাবের উদ্ভবের কারণ-কেই ‘বিভাব’ বলা হয়।শম্ভু মিত্র তাঁর এই নাটকের নামকরণ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন —– ” কোন এক ভদ্রলোক পুরোনো সব নাট্যশাস্ত্র তল্লাশ করে আমাদের এই নাটকের নাম দিয়েছেন ‘বিভাব’ নাটক।”— অর্থাৎ ‘বিভাব’ নামটি নাট্যকারের দেওয়া নয়,কোনো এক ভদ্রলোকের দেওয়া।তাই বলা যায় এর ভিত্তি পুরোনো নাট্যশাস্ত্র।এছাড়াও তিনি বলেছেন —–“আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক।” কারণ দুরন্ত অভাব থেকেই এই নাটকের জন্ম হয়েছে।কেননা তাদের একটা ভালো স্টেজ নেই, সিনসিনারি,আলো ,ঝালর কিছুই নেই। থাকার মধ্যে আছে কেবল নাটক করার বোকামিটা। সেই সঙ্গে সরকারী পেয়াদাদের খাজনা আদায়। আর এই সমস্ত অভাবের চিত্র নাটকে প্রতিফলিত হওয়ায় শম্ভুমিত্র ‘বিভাব’ নাটকটিকে ‘অভাব নাটক’ বলেছেন।
■ আলোচ্য নাটকে শম্ভু মিত্র জানিয়েছেন যে তাদের একটা হাসির নাটক করতে হবে।তাই শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলির বাড়িতে আসে হাসির খোড়াক জোগার করার জন্য।কারণ তার নাকি দারুণ বক্স অফিস।তাই হাসির নাটক প্রযোজনার জন্য প্রথমে কাল্পনিক ভঙ্গীর মাধ্যমে অভিনয় ও পরে মূলত বৌদি তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনায় ‘লভ সিন’ এবং ‘প্রগ্ৰেসিভ লভ সিন’ করা হয়। এরপরও যখন দর্শনের হাসি পেল না তখন শম্ভু মিত্র জানায়—-
“এই চার দেওয়ালের মধ্যে ,এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না-হাসিও পাবে না।”
শম্ভু মিত্রের কথামতো হাসির খোরাক,পপুলার জিনিসের খোরাক পাবার জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাই বাইরে বেড়িয়ে আসেন।কিন্তু বাইরে বেড়িয়ে আসার পর কিছুই দেখতে না পেয়ে শম্ভু মিত্র মন্তব্য করেন—
“নাঃ কোথায় জীবনের খোরাক,হাসির খোরাক নেই।”
এরপর শোভাযাত্রীদের একটি মিছিল দেখা যায়।তারা “চাল চাই,কাপড় চাই।”শ্লোগান দিতে থাকে।অন্যদিকে পুলিশ এসে সেই মিছিল আটকানোর চেষ্টা করে।পুলিশ শোভাযাত্রীদের ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয় কিন্তু শোভাযাত্রীরা পুলিশের কথার অবাধ্য হলে পুলিশ গুলি চালায়। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে মাটিতে পড়ে যায়,শোভাযাত্রীরা সকলেই বসে পড়ে।তাদের মধ্যে হাহাকার ও গোঙানির শব্দ শোনা যায় এরপর শম্ভু মিত্র ও অমর গাঙ্গুলি মঞ্চে প্রবেশ করেন। শম্ভু মিত্র দর্শকের দিকে তাকিয়ে বলেন–
“এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে ? “
শম্ভু মিত্র বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষ নির্মমতার মধ্যেও বিনোদন খোঁজে,জীবনের কঠিন স্বরূপকে এড়িয়ে চলতে চায়।আর তখনই হাসির ‘বিভাব’ মানুষের রক্তক্ষরণ ও আত্ম চিৎকারে পরিণত হয়।আর এই তাৎপর্যেই নাটকের নামকরণ ‘বিভাব’ সার্থক হয়েছে ।
………………………………
এই প্রশ্নগুলির উত্তরের পি ডি এফ(PDF) ডাউনলোড করো 👇
@ গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি বিষয় দেখে রাখো @
পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন কবিতা
‘কে বাঁচায় কে বাঁচে ‘ গল্পের বড় প্রশ্ন
‘রূপনারানের কূলে’ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ৩ টি প্রশ্নোত্তর
‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার বড় প্রশ্ন
আমার বাংলা থেকে আটটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ বাংলা সাজেশন এর জন্য এখানে ক্লিক করো