tags: শাক্ত পদ কাকে বলে, অষ্টাদশ শতকে শক্ত পদ সৃষ্টির কারণ, বৈষ্ণব পদ এর সাথে শাক্ত পদ এর পার্থক্য, শাক্ত কথাটির অর্থ, ‘মালসি’ কাকে বলে, প্রসাদী সুর, রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত , মা আমায় ঘুরাবি কত, আগমনী ও বিজয়া ,”ওরে নবমী নিশি না হই ও রে অবসান , ”কালী” নামের কারণ কী, শাক্তপদে তৎকালীন গার্হস্থ্য জীবন, আগমনী ও বিজয়া কী,
নিচে PDF দেওয়া হল। Download করে নিতে পারো।
প্রশ্ন ১.শাক্ত পদ কাকে বলে ? অষ্টাদশ শতকে শক্ত পদ সৃষ্টির কারণগুলি কী কী ?
উত্তর:- শাক্তপদ:-মধ্যযুগে রচিত শক্তির দেবীর আরাধনা ও সাধনা মূলক যে গান রচিত হয় ,তাদের শাক্তপদ বলা হয় ।
■■ অষ্টাদশ শতকে শাক্তপদগুলি সৃষ্টির কারণ:–
i) জমিদার ও উচ্চশ্রেণির অত্যাচার এবং আত্মরক্ষার অনিবার্য প্রেরণা ।
ii)বর্গী, মগ ও ফিরিঙ্গি পর্তুগিজ জলদস্যুদের অত্যাচার ও আক্রমণের প্রভাব।
iii)সামাজিক কুপ্রথা ও কুসংস্কারের প্রভাব।
iv) নৈতিক ও অর্থনৈতিক অবক্ষয় ।
v) শক্তিহীনতায় একজন শক্তি ও অভয়দাত্রীর কল্পনা করার প্রয়োজন পড়েছিল।
২. বৈষ্ণব পদ এর সাথে শাক্ত পদ এর পার্থক্য গুলি কী কী ?
উত্তর-প্রথমত – বৈষ্ণব পদ অধ্যাত্ম্য ভাবের সাধনা মুলক । শাক্ত পদ মূলত তন্ত্র সাধনা মুলক ।
দ্বিতীয়ত – বৈষ্ণব পদ আরাধ্য পরমাত্মা কৃষ্ণা আর শাক্ত পদে আরাধ্য দেবী, চণ্ডী, শ্যামা,
তৃতীয়ত -বৈষ্ণব পদে সাধনা মূলত জীবাত্মা রূপে রাধা ভাবে ভাবিত। শাক্ত পদ এর সাধনা মূলত মাতা ,সন্তান প্রভৃতি গার্হস্থ্য সম্পর্কে ভাবিত।
চতুর্থত-বৈষ্ণব পদ তত্ত্বমূলক ,অনেক বেশি গভীর ও উপলব্ধিমুলক।শাক্ত পদ সহজ-সরল মানবিক সম্পর্ক মূলক।
পঞ্চমত -বৈষ্ণব পদ নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ে সীমাবদ্ধ শাক্ত পদ অসম্প্রদায়িক ।
প্রশ্ন ৩। শাক্ত কথাটির অর্থ কী ? শাক্ত কারা ?
উত্তর- শাক্ত কথার অর্থ শক্তির উপাসক। মধ্যযুগে চন্ডী উমা ও কালী দেবীর আরাধনা করতেন বা সংগীত রচনা করতেন যারা তারা শাক্ত নামে পরিচিত ।
প্রশ্ন ৪। শাক্ত পদ এর শ্রেণিবিভাগ করো ।
উত্তর :-শাক্ত পদের শ্রেণিবিভাগ -অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এর মতে শাক্ত পদের শ্রেণিবিভাগ
১। উমা বিষয়ক (আগমনী ও বিজয়া)
.২। সাধন বিষয়ক (তন্ত্র সাধনা )
৩। দেবীর বিরাট স্বরূপ বিষয়ক
৪। তত্ত্ব ও নীতি বিষয়ক।
প্রশ্ন ৫। ‘মালসি’ কাকে বলে ? মালসি শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর :-মালসি :-অষ্টাদশ শতকে শাক্ত পদকে মালসি বলে অভিহিত করা হত।
■■ মালসি শব্দের উৎপত্তি অনুমান করা হয় মালবশ্রী রাগ । এই রাগেই শাক্তপদগুলি গাওয়া হত বলে এর নাম মালসি ।
প্রশ্ন ৬। প্রসাদি সুর কাকে বলে ? এর স্রষ্টা কে ?
উত্তর :-রামপ্রসাদ সেনের সহজ-সরল ভাষায় গাওয়া শাক্তপদের সুরকে প্রসাদি সুর বলা হয়। এর স্রষ্টা রামপ্রসাদ সেন।
প্রশ্ন ৭। রামপ্রসাদ সেন ও কমলাকান্ত এর শাক্ত পদ এর প্রধান পার্থক্য লিখ ?
উত্তর :- রামপ্রসাদ সেন ও কমলাকান্ত এর শাক্ত পদ এর প্রধান পার্থক্যঃ-
১। রামপ্রসাদের গানে রয়েছে লোকসুর ও গ্রামীণ সরলতা আর কমলাকান্তের পদে গূঢ় তত্ত্ব, ছন্দ- অলংকারের শিল্প বেশি ।
২। শাক্ত পদ রচনায় রামপ্রসাদ সেন ‘ভক্তের আকুতি’ পর্যায়ে শ্রেষ্টত্বের অধিকারী। আর কমলাকান্ত ভট্টাচার্য ‘আগমণি ও বিজয়া ‘ পর্যায়ে শ্রেষ্টত্বের দাবিদার।
৩। রামপ্রসাদ সেন তুলনায় অনেক আগের কবি, আর কমলাকান্ত অনেক পরে আবির্ভুত হন।
৪। রামপ্রসাদ সেন ছিলেন কবি ও ভাবুক, আর কমলাকান্ত ছিলেন শিল্পী ও নাগরিক প্রভাবযুক্ত।
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে চৈতন্যজীবনী কাব্য।
৮। কোন শাক্ত পদকর্তাকে, কে এবং কেন “কবিরঞ্জন” উপাধি দান করেন ?
উত্তরঃ মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রামপ্রসাদ সেন-কে তাঁর মধুর শাক্তপদ রচনার জন্য “কবিরঞ্জন” উপাধি দান করেন।
৯ । সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে চারটি করে শাক্ত পদের উদাহরণ দাও । রামপ্রসাদ সেন , কমলাকান্ত ভট্টাচার্য ।
উত্তরঃ রামপ্রসাদ সেন ও কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ
রামপ্রসাদ সেন
রামপ্রসাদ সেন-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ
শাক্ত পদকর্তা রামপ্রসাদ সেন চব্বিশ পরগনা জেলার হালি শহরের কুমার হট্ট গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত বৈদ্য বংশে জন্মগ্রহণ করেন (ঈশ্বর গুপ্ত সংগৃহীত তথ্য অনুসারে)।
পিতা :-রামরাম সেন,
সন্তান:- পুত্র রামদুলাল ও কন্যা পরমেশ্বরী ।
কলকাতার এক জমিদার দুর্গাচরণ মিত্রের বাড়িতে মুহুরির কাজ করতেন । রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে কবিরঞ্জন উপাধিতে ভূষিত করেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা গঙ্গা বক্ষে নৌকা ভ্রমণের সময় রামপ্রসাদ সেন-এর শুনতে পান। এবং গানে মুগ্ধ হয়েছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর অন্যান্য দুটি কাব্যের নাম কৃষ্ণ কীর্তন ও কালী কীর্তন। তাঁর শাক্ত পদের সংখ্যা তিনশতাধিক। বক্তের আকুতি পর্যায়ের পদ রচনায় তিনি শ্রেষ্ঠ।
রামপ্রসাদের কয়েকটি বিখ্যাত গান বা শাক্ত পদঃ –
১. ”মা নিম খাওয়ালে চিনি বলে কথায় ক’রে ছলো /ও মা মিঠার লোভে তেতো মুখে সারাদিনটা গেল।”
২। “মা আমায় ঘুরাবি কত ? / কলুর চোখ ঢাকা বলদের মত।।”
৩। ” কেবল আসার আশা ভবে আসা আসা মাত্র সার হল ।/যেমন চিত্রের পদ্মতে পরে ভ্রমর ভুলে রলো ।
৪। ” নিজে হই সরকারি মুটে মিছে মরি বেগার খেটে ।/আমি দিনমজুরি নিত্য করি পঞ্চভূতে খায়গো বেটে ।”
৫। “দেখো সুখ পেয়ে লোক গর্ব করে ।/আমি করি দুঃ খের বড়াই। ”
৬। “কোন অবিচারে আমার পরে করলে দুঃখের ডিক্রি জারি ।/একা আসামি ছয়টা প্যাদা বলমা কিসে সামাই করি। ”
কমলাকান্ত ভট্টাচার্য
কমলাকান্ত ভট্টাচার্য-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ
কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে । পৈতৃক নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার কালনা গ্রামে। পৈতৃক উপাধি- বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমান রাজা তেজশচন্দ্রের সভা পন্ডিত ছিলেন । মহারাজ তেজচন্দ্র কোটালহাটে কমলাকান্তের সাধন ভজনের জন্য মন্দির করে দেন। সেখানে কমলাকান্ত কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসে সাধনা করতেন। শাক্ত পদাবলী তে রামপ্রসাদ সেনের পরেই কমলাকান্তের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। ১৮২০ খ্রীষ্টাব্দে কমলাকান্ত মৃত্যুবরণ করেন । তাঁর লিখিত পদের সংখ্যা প্রায় তিনশত । আগমণি ও বিজয়ার পদ রচনায় তিনিই শ্রেষ্ঠ।
কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের রচিত বিখ্যাত গান বা শাক্ত পদঃ –
১। ”ওরে নবমী নিশি না হই ও রে অবসান ।”
২। ” কি হল নবমী নিশি হইল অবসান গো ।”
৩। ”ফিরে চাও গো মা উমা তোমার বিধুমুখ হেরি। ”
৪। “ওহে গিরিরাজ গৌরী অভিমান করেছে/ মনো দুঃখে নারদে কত না কয়েছে। ”
৫। ” আমি কী হেরিলাম নিশি-স্বপনে । ”
৬। ” শ্যামা মা কি আমার কালো রে! ”
১০। আগমনী ও বিজয়া কী ? একটি করে উদাহরণ দিন ।
উত্তরঃ আগমনী গানঃ মধ্যযুগে সৃষ্ট শাক্ত সঙ্গীতের যে ধারায় উমার গৃহে আগমনকে কেন্দ্র করে মেনকার কণ্ঠে বাঙালির মাতৃ হৃদয়ের আশা, উৎকণ্ঠা , ব্যাকুলতা প্রকাশিত হয়েছে, তাকে আগমনী বলা হয়। যেমন–
” আমি কী হেরিলাম নিশি-স্বপনে । “ (কমলাকান্ত)
বিজয়াঃ মধ্যযুগে সৃষ্ট শাক্ত সঙ্গীতের যে ধারায় উমার পিতৃগৃহ ছেড়ে স্বামীর গৃহে প্রত্যাগমনকে কেন্দ্র করে মেনকার কণ্ঠে বাঙালির মাতৃ হৃদয়ের বেদনা, উৎকণ্ঠা , ব্যাকুলতা প্রকাশিত হয়েছে, তাকে বিজয়া বলা হয়। যেমন–
”ওরে নবমী নিশি না হই ও রে অবসান ।” (কমলাকান্ত)
১১। ‘আগমনী’ কাকে বলে ? এই জাতীয় পদ রচনায় কে শ্রেষ্ঠ কে ? তাঁর একটি ‘আগমণি’ পদের উদাহরণ দিন।
উত্তরঃ আগমনী গানঃ মধ্যযুগে সৃষ্ট শাক্ত সঙ্গীতের যে ধারায় উমার গৃহে আগমনকে কেন্দ্র করে মেনকার কণ্ঠে বাঙালির মাতৃ হৃদয়ের আশা, উৎকণ্ঠা , ব্যাকুলতা প্রকাশিত হয়েছে, তাকে আগমনী বলা হয়। যেমন–
” আমি কী হেরিলাম নিশি-স্বপনে । “ (কমলাকান্ত)
১২। ‘বিজয়া’ কাকে বলে ? এই জাতীয় পদ রচনায় কে শ্রেষ্ঠ কে ? তাঁর একটি ‘বিজয়া’ পদের উদাহরণ দিন।
উত্তরঃ বিজয়াঃ মধ্যযুগে সৃষ্ট শাক্ত সঙ্গীতের যে ধারায় উমার পিতৃগৃহ ছেড়ে স্বামীর গৃহে প্রত্যাগমনকে কেন্দ্র করে মেনকার কণ্ঠে বাঙালির মাতৃ হৃদয়ের বেদনা, উৎকণ্ঠা , ব্যাকুলতা প্রকাশিত হয়েছে, তাকে বিজয়া বলা হয়। যেমন– ”ওরে নবমী নিশি না হই ও রে অবসান ।” (কমলাকান্ত)
১৩। শক্তিতত্ত্বে শক্তির কয়টি রূপের কথা বলা হয়েছে ? সেগুলি কী কী ?
উত্তরঃ শক্তিতত্ত্বে শক্তির তিনটি রূপের কথা বলা হয়েছে। সেগুলি হলঃ-
১। অব্যক্ত ২। ব্যক্তাব্যক্ত ৩। ব্যক্ত ।
১৪। শাক্ত দেবীর ”কালী” নামের কারণ কী ?
উত্তরঃ ★ কালিকা পুরাণ অনুসারে বলা যায়- যে শক্তি কালকে গ্রাস করে সেই ” কালী”।
(★ জগতের সংহারকারী হলো -‘ মহাকাল’ সেই প্রলয় রূপী মহাকাল সকল ভূতের ( পঞ্চভূত) সংহার করেন তাই তার নাম ‘ মহাকালী ‘। যিনি মহাকালের কলন ( ধ্বংস) করেন তিনি কালিকা, আর যিনি সকল কালকে গ্রাস করেন তিনি কালী।)
১৫। তত্ত্বের বিচারে শাক্তপদ প্রধানত কত প্রকার ও কী কী ?
উত্তরঃ তত্ত্বের বিচারে শাক্তপদ প্রধানত তিন প্রকার ।
যথা- ১। লীলাতত্ত্ব ২। উপাস্য তত্ত্ব ৩। উপাসনা তত্ত্ব ।
১৬। শাক্তপদে তৎকালীন গার্হস্থ্য জীবন ও সমাজ জীবনের কী কী পরিচয় পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ ★ শাক্ত পদে তৎকালীন গার্হস্থ্য ও সমাজ জীবনের যে পরিচয় গুলি পাওয়া যায় তা নিম্নরূপ-
ক) জননী ও সন্তানের আবেগময় সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়।
খ) গার্হস্থ্য জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা এবং বাস্তবতার এক নিখুঁত চিত্র পাওয়া যায় এসব গানে।
গ) মায়ের প্রতি সন্তানের ও স্নেহের জন্য ব্যকুলতার পরিচয় পাওয়া যায়।
ঘ) অসাম্প্রদায়িক সাধন পদ্ধতির প্রতি মানুষের আগ্রহ।
ঙ) সামাজিক অস্থিরতা, শোষণ, আশ্রয়হীনতা, পীড়ণ ইত্যাদি।
চ) কৌলিন্য প্রথার পরিচয় পাওয়া যায়।
১৭। দুজন মুসলমান শাক্তপদকর্তার নাম লিখে একটি করে পদের উদাহরণ লিখুন।
দুজন মুসলমান শাক্তপদকর্তা হলেন গোলমাহমুদ ও কেয়ামত আলী খাঁ মুন্সী ।
পদের উদাহরণঃ
১। “উন্মত্তা, ছিন্নমস্তা এ রমণী কা’র-” — গোলমাহমুদ ।
২। “হরিকে কালী বলা ভুল,/ কালীকে হরি বলা ভুল।/ আমি ভেবে ভেবে হলাম পাগল, পেলাম না তার মূলামূল।।” — কেয়ামত আলী খাঁ মুন্সী
প্রস্তুতির জন্য আরও পরীক্ষাগুলি দিতে পারোঃ👇
১। সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন ও মধ্যযুগ) MCQ
৪। কারক অ-কারক SAQ Practice SET
৫। শব্দভাণ্ডার MCQ Practice SET
৬। কাব্যসাহিত্যের ইতিহাস (আধুনিক যুগ) MCQ
৭। ধ্বনি ও বর্ণ MCQ practice SET