এখানে আলোচনা করা হল- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের নামকরণ, শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কাব্য pdf, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বৈশিষ্ট্য, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বিষয়বস্তু, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচনাকাল সম্পর্কে।
১। বাংলা ভাষায় আবিষ্কৃত দ্বিতীয় প্রাচীনতম গ্রন্থ কোনটি ? কে কবে কোথা থেকে আবিষ্কার করেন ?
উত্তরঃ– বাংলা ভাষায় আবিষ্কৃত দ্বিতীয় প্রাচীনতম গ্রন্থ হল ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ ।
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ পুঁথিটি বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় গোয়ালঘরের মাচা থেকে আবিষ্কার করেন ।
২। বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম আখ্যানকাব্য কোনটি ? অথবা, মধ্যযুগে রচিত প্রথম আখ্যানগ্রন্থ কোনটি ?
উত্তরঃ– বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম আখ্যানকাব্য বড়ু চন্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ ।
৩। কবে কোথা থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুঁথিটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ- বসন্তরঞ্জন রায়ের সম্পাদনায় ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুঁথিটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ।
৪। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রচনাকাল সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উত্তরঃ- শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রচনাকালঃ-
ক) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ১৩৮৫ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ।
খ) নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে ১৪৬৬ খ্রিস্টাব্দের প্রাচীনতর ।
গ) রাধাগোবিন্দ বসাকের মতে ১৪৫০-১৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ।
ঘ) যোগেশচন্দ্র রায়ের মতে ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দ ।
ঙ) সুকুমার সেন আবিষ্কৃত পুঁথিটি অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি । মূল পুঁথিটি ষোড়শ শতক ।
৫। কে কেন শ্রীকৃষ্ণকীর্তনকে নাটগীতি পাঞ্চালিকা বলেছেন ?
উত্তরঃ- ডঃ সুকুমার সেন শ্রীকৃষ্ণকীর্তনকে নাটগীতি পাঞ্চালিকা বলেছেন ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে ।
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি আসলে গেয় , সংলাপধর্মী , অভিনয়যোগ্য ও পাঁচালি রীতিতে রচিত । সংলাপের জন্য ‘নাট’ , রাগ ও তালের উল্লেখ থেকে ‘গীতি’ এবং মধ্যযুগীয় পাঁচালি সুরের জন্য ডঃ সুকুমার সেন গ্রন্থটিকে বলেছেন ‘নাটগীতি পাঞ্চোলিকা’ ।
৬। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে ব্যবহৃত কয়েকটি রাগরাগিণী ও তালের নাম লিখুন ।
উত্তরঃ- রাগরাগিণীর নাম — আহেরী , গুজ্জরী , দেশাগ , ধানুষী , পটমঞ্জুরী , ভৈরবী , মল্লার , ভাটিয়ালি ।
তালের নাম — একতালী , আঠতালা , যতি , লঘুশেখর , ক্রীড়া ।
৭। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে পূর্ববর্তী কার কোন গ্রন্থে প্রভাব রয়েছে ?
উত্তরঃ- ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যে জয়দেবের গীতগোবিন্দ , ঝুমুর গান , ভাগবত , বিষ্ণুপুরাণ , হরিবংশ , ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ প্রভৃতি গ্রন্থের প্রভাব রয়েছে।
৮। চন্ডীদাস সমস্যা কী ?
উত্তরঃ- চন্ডীদাস সমস্যাঃ-
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুঁথিটি আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে পুঁথিটির রচয়িতা চন্ডীদাস নিয়ে বাংলা সাহিত্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকে চন্ডীদাস সমস্যা বলে । সমস্যাটির মূল বিষয় গুলি হল —
ক) চন্ডীদাসের সংখ্যা জনিত সমস্যা ।
খ) ভণিতা জনিত সমস্যা ।
গ) কোনটি কার রচনা — নির্ণয় জনিত সমস্যা ।
৯। চন্ডীদাস সমস্যার সমাধান কীভাবে করা সম্ভব ?
উত্তরঃ– চন্ডীদাস সমস্যা সমাধানঃ-
সামগ্রিক বিচারে চারজন চন্ডীদাসের অস্থিত্ব স্বীকার করে নিয়ে আপাত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব । তাঁরা হলেন —
ক) শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের বড়ু চন্ডীদাস ।
খ) পদাবলির চন্ডীদাস ।
গ) রজকিনী চন্ডীদাস ।
ঘ) দীন চন্ডীদাস ।
১০। ‘রাধাবিরহ’ খণ্ডটি প্রক্ষিপ্ত কিনা উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দিন ।
উত্তরঃ- শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের শেষখণ্ডটিকে দুইটি কারণে প্রক্ষিপ্ত মনে করা হয় —
ক) এখানে খণ্ড কথাটি উল্লেখ নেই ।
খ) বিরহী রাধার চরিত্রটি পূর্ববর্তী খণ্ডগুলি থেকে আলাদা হয়ে উঠেছে ।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ‘রাধাবিরহ’ প্রক্ষিপ্ত নয় । কারণ —
ক) কাব্যটিতে প্রতিটি খণ্ডে রাধার ক্রমবিকাশ ঘটেছে ।
খ) কিশোরী রাধার মান-অভিমান , আনন্দ ও প্রেমলীলার পরে এতটাই বিদ্রোহী হয়েছে যার সঙ্গে পূর্ববর্তী খণ্ডের মিল থাকা সম্ভব নয় ।
১১। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মোট কয়টি খণ্ড রয়েছে ? খণ্ড গুলির নাম ক্রমান্বয়ে লিখুন ।
উত্তরঃ– ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি মোট ১৩ টি খণ্ডে বিভক্ত । খণ্ডগুলি হল — জন্ম খণ্ড , তাম্বুল খণ্ড , দান খণ্ড , নৌকা খণ্ড , ভার খণ্ড , ছত্র খণ্ড , বৃন্দাবন খণ্ড , কালীদমন খণ্ড , যমুনা খণ্ড , হার খণ্ড , বাণ খণ্ড , বংশী খণ্ড ও রাধাবিরহ ।
১২। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রকৃত নাম কী ?
উত্তরঃ- ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের প্রকৃত নাম ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’ । একথা প্রথম বলেন নলিনীনাথ দাশগুপ্ত ।
১৩। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে উল্লেখিত চারটি প্রবাদ বাক্য লিখুন ।
উত্তরঃ- শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে উল্লেখিত প্রবাদ বাক্যঃ-
ক) ললাট লিখিত খণ্ডন না জাএ ।
খ) পোত্রর মুখে পরবত টলে ।
গ) আপনার মাঁসে হরিণী জগতের বৈরী ।
ঘ) সাপের মুখেতে কেহ্নে আঙ্গুল দেসী ।
১৪। “শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রাধার যেখানে শেষ , পদাবলীর রাধার সেখানে আরম্ভ ।” — কথাটির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করুণ ।
উত্তরঃ- শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে তেরোটি খণ্ডে বিধৃত স্বাভাবিক মানবিক গুণগুলি বিবর্তিত হয়ে ‘রাধাবিরহ’ এ এসে আধ্যাত্বিক মহিমা লাভ করে । বৈষ্ণব পদাবলীতে জীবাত্মা-পরমাত্মার প্রতিভূ রাধা-কৃষ্ণের আধ্যাত্মিক মহিমা শুরু থেকে প্রকাশিত হয় । তাই বলা হয় “শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রাধার যেখানে শেষ , পদাবলীর রাধার সেখানে আরম্ভ” ।