You are currently viewing ভারতবর্ষ গল্প/প্রশ্নমান-৫

ভারতবর্ষ গল্প/প্রশ্নমান-৫

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন- 2022

প্রশ্ন: “শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল।”-এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? দৃশ‍্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো । (১+৪=৫)


উত্তর: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা “ভারতবর্ষ” গল্পের প্রধান চরিত্র বৃদ্ধার কথা এখানে বলা হয়েছে।
‘ভারতবর্ষ’ গল্পটিতে আমরা দেখি,গ্ৰামের বটতলাতে পড়ে থাকা বুড়িকে মৃত মনে করে গ্ৰামের হিন্দুরা তাকে নদীর চরায় ফেলে দিয়ে আসে আর মুসলমানেরা বুড়ির মৃত দেহকে বাঁশের চ‍্যাংদোলায় করে পুনরায় ফিরিয়ে আনে।এরপর বুড়ির মৃতদেহ সৎকারকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ‍্যে ঝগড়া শুরু হয়।দুই সমম্প্রদায়ের মানুষই বৃদ্ধাকে তাদের নিজ নিজ সমম্প্রদায়ের লোক বলে দাবী করতে থাকে এবং নানা রকম প্রমান দিতে শুরু করে।কেউ বলেন বুড়িকে ‘হরিবোল‘ বলতে শুনেছেন,আবার কেউ বলেন বুড়িকে ‘লাইলাহা ইল্লাল’বলতে কিংবা স্পষ্ট ‘কলমা’ পড়তে শুনেছেন।এরপর উভয় পক্ষের মধ‍্যে তুমুল সংগ্ৰাম শুরু হয়।একপক্ষ আওয়াজ তোলে-‘আল্লা হু আকবর’ আর একপক্ষ আওয়াজ তোলে-‘জয় মা কালী’।এইরকম পরিস্থিতিতে গ্ৰামের চৌকিদার উভয় পক্ষকে ঠেকিয়ে রাখতে রাস্তায় লাঠি ঠুকে গর্জন করে ‘সাবধান‘, ‘খবরদার‘।তারপরই দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ‍্য-বুড়ির মৃতদেহটি নড়ছেএবং বুড়ি আস্তে আস্তে উঠে বসার চেষ্টা করছে।লড়াই ফেলে সশস্ত্র জনতা বুড়ির দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।বুড়ি উঠে দাঁড়িয়ে জনতার ভিড় দেখে বিকৃত মুখে হেসে ওঠে।বুড়িকে প্রশ্ন করা হয় – বুড়ি তুমি হিন্দু না মুসলমান ? বুড়ি উত্তরে জানায়—–
চোখের মাথা খেয়েছিস মিনষেরা?দেখতে পাচ্ছিস নে, …চোখ গেলে দোব যা,যা,পালা।”
শুধু এই কথাতেই শেষ নয় বুড়ি জনতাদের উদ্দেশ‍্যে ‘নরকখেকো’,’শকুনচোখো‘ প্রভৃতি গালাগালি বর্ষণ করে।এরপর বৃদ্ধা রাস্তা ধরে চলতে থাকে।লোকজন সরে গিয়ে বৃদ্ধাকে পথ করে দেয়।বৃদ্ধা শেষ রোদের আলোয় দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে যায়।গল্পটিতে দূরের দিকে আবছা হয়ে যাওয়া বৃদ্ধা যেন ভারতবর্ষের প্রতীক হয়ে উঠেছে।গল্পকার বৃদ্ধা চরিত্রের মধ‍্যে দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন -এখানে ধর্মিয় বিদ্বেষ ও উগ্ৰতার কোন জায়গা নেই।কেননা ধর্মিয় বিদ্বেষ আমাদেরকে একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে,আর এগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখতেই হবে।আর বুড়ির চলে যাওয়ার দৃশ‍্যটা যেন তারই ইঙ্গিত দেয়।

Leave a Reply