মঙ্গলকাব্যের, গুরুত্বপূর্ণ SAQ প্রশ্ন ও উত্তর্ মধ্যযুগ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস , মনসা নামের উৎপত্তি, মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্যধারা সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ গুলি, মঙ্গলকাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য, চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবি মানিক দত্ত, ধর্মমঙ্গল কাব্যকে কেন “রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য”, ধর্মমঙ্গলকে কী রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য বলা যায়, ক্ষেমানন্দের, মুকুন্দ চক্রবর্তী, মুকুন্দরাম, ঘনরাম চক্রবর্তী, ধর্মমঙ্গলকে রাঢ়ের জাতীয় কাব্য বলার কারণ, মুকুন্দ চক্রবর্তীকে ‘কবিকঙ্কন’ উপাধি কে দেন,
১। মঙ্গলকাব্যের এই ‘মঙ্গল’ কথাটির অর্থ কী ? মঙ্গলকাব্যের ‘মঙ্গল’ নামের কী কী কারণ অনুমান করা হয় ?
উত্তরঃ- ‘মঙ্গল’ কথাটির অর্থ: ‘মঙ্গল’ কথাটির অর্থ- কল্যান।
মঙ্গলকাব্যের ‘মঙ্গল’ নামের কারণ: মঙ্গলকাব্যের ‘মঙ্গল’ নামের কারণ হিসেবে অনেকগুলি মত পাওয়া যায়। সেগুলির মধ্যে প্রধান চারটি হলঃ
ক) এই কাব্য পাঠে পাঠক ও শ্রোতার মঙ্গল বা কল্যান হয় — এই বিশ্বাস থেকে।
খ) এই কাব্যগুলি এক মঙ্গলবার থেকে আরেক মঙ্গলবার আটদিন ব্যাপী গাওয়া হত।
গ) মঙ্গল নামক দেবীর পূজাপ্রচার থেকেই এই শ্রেণির কাব্য মঙ্গলকাব্য নাম ধারণ করে।
ঘ) মঙ্গল রাগে এই কাব্যগুলি গাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল বলে এই কাব্যগুলির নাম মঙ্গলকাব্য হয়।
২। মঙ্গলকাব্য কাকে বলে ? মঙ্গলকাব্যের দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ- মঙ্গলকাব্য: মধ্যযুগে রচিত দৈবি মাহাত্ম্য প্রচারমূলক আখ্যানকাব্যকে মঙ্গলকাব্য বলে।
মঙ্গলকাব্যের দুটি উদাহরণ হলঃ চণ্ডীমঙ্গল কাব্য ও মনসামঙ্গল কাব্য।
৩। মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্যধারা সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ গুলি কী কী ?
উত্তরঃ- মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্যধারা সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ:
১। তুর্কি আক্রমণের ফলে সৃষ্ট অরাজকতা মানুষকে দেব-দেবী নির্ভর করে তোলে।
২। বিপন্ন আর্য ও অনার্যের মিলনের ফলে অনার্য দেবদেবীর পূজা ও তাঁর প্রচার শুরু হয়।
৩। আগ্রহী ও প্রতিভাধর কবির আবির্ভাব।
৪। নদী-জঙ্গলাকীর্ণ বাংলাদেশে মানুষের ভয়ভীতি।
৪। মঙ্গলকাব্য রচনার ধারা কত শতাব্দী থেকে কত শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ? কয়েকটি অপ্রধান মঙ্গলকাব্যের নাম বলো।
উত্তর : মঙ্গলকাব্য রচনার ধারা ত্রয়ােদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
কয়েকটি অপ্রধান মঙ্গলকাব্য হলঃ রায়মঙ্গল, ষষ্ঠীমঙ্গল, শীতলামঙ্গল, কমলামঙ্গল।
৫। মঙ্গলকাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তরঃ- আঙ্গিকগত বৈশিষ্ট্য :
১। চারটি ভাগে বিভক্ত। যথা- বন্দনা অংশ, গ্রন্থোৎপত্তির কারণ, দেব খণ্ড ও নর খণ্ড ।
২। মঙ্গলকাব্যগুলি গেয় কাব্য।
৩। মিশ্র কলাবৃত্ত ছন্দে আখ্যানগুলি রচিত।
বিষয়গত বৈশিষ্ট্য :
১। স্বর্গের চরিত্রগুলি অভিশপ্ত হয়ে মর্ত্যে প্রেরিত হয়ে পূজা প্রচার করে।
২। কাহিনির মধ্যে নায়িকার বারোমাস্যা, রন্ধন প্রণালি, নারীগনের পতি নিন্দা, ইত্যাদি বিষয় সাধারণত থাকে।
৩। পূজা প্রচার শেষে মূল চরিত্র স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করে ।
৬। মঙ্গল কাব্যের প্রধান ধারা কয়টি ও কী কী ? প্রতিটি ধারার একজন করে কবি ও তার কাব্যের নাম লেখো।
উত্তরঃ- মঙ্গল কাব্যের প্রধান ধারা:- মঙ্গলকাব্যের প্রধান ধারা তিনটি। যথাঃ- মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল।
প্রতিটি ধারার একজন করে কবি ও তার কাব্যের নাম:
মনসামঙ্গলঃ কবি বিজয় গুপ্ত। কাব্যের নাম- ” পদ্মাপুরাণ”
চণ্ডীমঙ্গলঃ কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী। কাব্যের নাম- ” অভয়ামঙ্গল” ।
ধর্মমঙ্গলঃ কবি ঘনরাম চক্রবর্তী। কাব্যের নাম- শ্রীধর্মপুরাণ” ।
৭। মঙ্গলকাব্যের প্রাচীনতম ধারা কোনটি ? এই ধারার কয়টি উপধারা পাওয়া যায় ও কী কী ? অথবা মনসামঙ্গল ধারার প্রধান তিনটি উপধারার নাম ও দুজন করে কবি নাম কাব্যের নামসহ লেখো।
উত্তরঃ- মনসা মঙ্গল কাব্যের প্রধান ধারা: মনসা মঙ্গল কাব্যের প্রধান ধারা হল তিনটি। যথাঃ-
রাঢ়ের ধারা , পূর্ববঙ্গের ধারা ও উত্তরবঙ্গের ধারা।
প্রতিটি ধারার একজন করে কবি ও তার কাব্যের নাম:
রাঢ়ের ধারাঃ কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ। কাব্যের নাম “ক্ষেমানন্দী”
পূর্ববঙ্গের ধারা: কবি বিজয় গুপ্ত। কাব্যের নাম- ” পদ্মাপুরাণ”
উত্তরবঙ্গের ধারাঃ কবি তন্ত্রবিভুতি। কাব্যের নাম- ” মনসামঙ্গল”
৮। ক্ষেমানন্দের কাব্যে কোন্ কবির প্রভাব আছে ? কত খ্রিস্টাব্দে কোথা থেকে তাঁর কাব্যটি প্রথম মুদ্রিত হয় ?
উত্তরঃ ক্ষেমানন্দের কাব্যে ‘অভয়ামঙ্গল’ কাব্যের রচয়িতা মুকুন্দ চক্রবর্তীর প্রভাব আছে।
১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে কাব্যটি শ্রীরামপুর মিশন থেকে মুদ্রিত হয়।
৯। মুকুন্দ চক্রবর্তী কোন্ সময়ের কবি ? তাঁর কাব্যে উল্লিখিত দুজন ঐতিহাসিক চরিত্রের নাম বলাে।
উত্তরঃ মুকুন্দরাম ষােড়শ শতকের কবি।
তাঁর কাব্যে উল্লিখিত দুই ঐতিহাসিক চরিত্র হল—মােগল সেনাপতি মানসিংহ এবং ডিহিদার মামুদ শরিফ।
১০। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবি কে ? মুকুন্দ চক্রবর্তীর আদি নিবাস কোথায় ছিল ?
উত্তরঃ চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবি মানিক দত্ত।
মুকুন্দরামের আদি নিবাস ছিল বর্ধমানের দামিন্যা গ্রামে।
১১। ‘ধর্মমঙ্গল কাব্যের চারজন কবির নাম লেখো।
উত্তরঃ ‘ধর্মমঙ্গল কাব্যের চারজন কবি হলেন—রূপরাম চক্রবর্তী, ঘনরাম চক্রবর্তী, সীতারাম দাস এবং যদুনাথ রায়।
১২। ‘ধর্মমঙ্গল কাব্যে কটি কাহিনি পাওয়া যায় ও কী কী ? ‘ধর্মমঙ্গল’-এর দুটি ঐতিহাসিক চরিত্রের নাম বলাে।
উত্তরঃ ‘ধর্মমঙ্গল কাব্যের দুটি কাহিনি পাওয়া যায়—(১) রাজা হরিশচন্দ্রের গল্প ও (২) লাউসেনের গল্প।
ধর্মমঙ্গল’-এর দুটি ঐতিহাসিক চরিত্র হল—ধর্মপাল ও ইছাই ঘােষ।
১৩। মধ্যযুগের কোন কবি সম্পর্কে বলা হয় আধুনিক যুগে জন্মালে ঔপন্যাসিক হতেন ? কে , কেন এ কথা বলেছেন ?
উত্তরঃ আধুনিক যুগে জন্মালে ঔপন্যাসিক হতেন: চণ্ডীমঙ্গলের কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী সম্পর্কে বলা হয় আধুনিক যুগে জন্মালে ঔপন্যাসিক হতেন।
কে , কেন এ কথা বলেছেন: ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ” বঙ্গ সাহিত্যে উপন্যাসের ধারা” গ্রন্থে এ কথা বলেছেন।
ঔপন্যাসিকের যে বৈশিষ্ট্য তিনি মুকুন্দ চক্রবর্তীর মধ্যে লক্ষ্য করেছেন সেগুলি হলঃ-
ক) ঔপন্যাসিকের মত গভীর বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি।
খ) লেখকের নিজস্ব জীবনদর্শন।
গ) চরিত্রের মনস্তাত্বিক দিক তুলে ধরা।
ঘ) ঘটনা ও চরিত্রের কার্য-কারণ সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করা বা প্লট নির্মানের দক্ষতা।
১৪। ধর্মমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি কে ? তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব কোথায় ?
উত্তরঃ- ধর্মমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবিঃ ধর্মমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি ঘনরাম চক্রবর্তী।
ঘনরামের শ্রেষ্ঠত্বঃ
১৫। ধর্মমঙ্গল কাব্যকে কেন “রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য” বলা হয় ?
উত্তরঃ- ধর্মমঙ্গলকে রাঢ়ের জাতীয় কাব্য বলার কারণঃ–
১.রাঢ় বাংলার ইতিহাস-সমাজ-সংস্কৃতির আলেখ্য নির্মাণ।
২.লাউসেনের মতো জাতীয় বীর চরিত্র নির্মাণ।
৩.স্বর্গ ও মর্ত্যের কাহিনিবৃত্ত রচনা।
৪. মহাকাব্যিক বিশালতা, চরিত্রের মহত্ব,আদর্শ ও ধর্মের জয়,অধর্মের পরাজয় প্রভৃতি মহাকাব্যিক পরিবেশ রচনা করেছেন বলে।
৫. ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ধর্মমঙ্গলকে ‘রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য’ বলেছেন।
১৬। ধর্মমঙ্গলকে কি রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য বলা যায় ? যুক্তিসহ লিখুন।
উত্তরঃ- মহাকাব্যিক বিশালতা ও জাতীয় গৌরবের সম্ভাবনা দেখে ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ধর্মমঙ্গলকে ‘রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য ‘ বললেও কয়েকটি যুক্তির বিচারে একে ‘রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য’ বলা যায় না।
যথা—
১.ধর্মমঙ্গল সমসাময়িক সমাজ ও জীবনকে অতিক্রম করে রাঢ়ের সর্বকালীন উদ্বর্তনকে তুলে ধরতে পারে নি।
২.প্রতিভাধর কবির অভাব।
৩.পাঁচালীর স্তর অতিক্রম করতে পারে নি।
৪.ব্যালাডের সমগোত্রীয় হলেও মহাকাব্যোচিত গাম্ভীর্য ও সর্বজনগ্রাহ্যতা বা জাতির একাত্মতালাভ করতে পারে নি।
১৭। ভণিতাগুলির রচয়িতা ও রচনাকাল লিখুনঃ
ক) ”ঋতুশশী বেদ শশী পরিমিত শক।
সুলতান হুসেন সাহা নৃপতি তিলক।।”
উত্তরঃ মনসামঙ্গলের কবি বিজয়গুপ্তের ভণিতা।
এর থেকে রচনাকাল পাওয়া যায় ১৪১৬ শকাব্দ অর্থাৎ ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দ।
খ) ‘সিন্ধু ইন্দু বেদ মহী শক পরিমান’।/নৃপতি হোসেন শাহা গোড়ের প্রধান।।’
উত্তরঃ মনসামঙ্গলের কবি বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ভণিতা।
রচনার তারিখ : ১৪১৭ শকাব্দ (১৪৯৯ খ্রীঃ)
গ) “জলধির বামেতে ভুবন মাঝে দ্বার।/ শকে রচে দ্বিজ বংশী পুরাণ পদ্মার ॥”
উত্তরঃ- মনসামঙ্গলের কবি দ্বিজ বংশীদাশের ভণিতা।
এর থেকে রচনাকাল পাওয়া যায়- ১৪১৭ শকাব্দ অর্থাৎ ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দ।
ঘ) “ইন্দু বিন্দু বাণ ধাতা শক নিয়োজিত।
হদ্বিজমাধব গায় সারদাচরিত।।“
উত্তরঃ চণ্ডীমঙ্গলের কবি দ্বিজমাধবের ভণিতা।
এর থেকে রচনাকাল পাওয়া যায়-১৫০১ শকাব্দ অর্থাৎ ১৫৭৯ খ্রিষ্টাব্দ।
ঙ) ” শাকে রস রস বেদ শশাঙ্ক গনিতা
কত দিনে দিলা গীত হরের বনিতা ।।”
উত্তরঃ চণ্ডীমঙ্গলের কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর ভণিতা।
এর থেকে রচনাকাল পাওয়া যায়-১৪৯৯ শকাব্দ অর্থাৎ ১৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দ।
চ) “শাকে শীমে জর হৈলে যত শক হয়।
তিন বাণ চারি যুগ বেদ যত হয়।।
রসের উপরে রক্ষা তায় রস দেহ।
এই শকে গীত হৈয়া লেখা করি লেহ।।“
উত্তরঃ ধর্মমঙ্গলের কবি রূপরাম চক্রবর্তীর ভণিতা।
এর থেকে রচনাকাল পাওয়া যায়-১৫২৫ শকাব্দ অর্থাৎ ১৬০৩ খ্রিষ্টাব্দ।( যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধি)
প্রশ্ন ১৮। মুকুন্দ চক্রবর্তীকে ‘কবিকঙ্কন’ উপাধি কে দেন ? কেন তাঁকে এই উপাধি দেওয়া হয় ?
উত্তরঃ মুকুন্দ চক্রবর্তীকে ‘কবিকঙ্কন’ উপাধি দেন – জমিদার রঘুনাথ রায়।
চণ্ডীমঙ্গল কাব্য রচনায় মুকুন্দ চক্রবর্তীর পাণ্ডিত্য ও দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে জমিদার রঘুনাথ রায় তাঁকে ‘কবিকঙ্কন’ উপাধি দেন।
XXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXX
প্রস্তুতির জন্য আরও পরীক্ষাগুলি দিতে পারোঃ👇
১। সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন ও মধ্যযুগ) MCQ
৪। কারক অ-কারক SAQ Practice SET
৫। শব্দভাণ্ডার MCQ Practice SET
৬। কাব্যসাহিত্যের ইতিহাস (আধুনিক যুগ) MCQ
৭। ধ্বনি ও বর্ণ MCQ practice SET