ভাত গল্পের বড় প্রশ্ন ৪

প্রশ্নঃ৪।  মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্প অবলম্বনে উৎসব চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা কর।  (৫)

উত্তর:  মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’  শীর্ষক ছোটোগল্পের প্রধান কাহিনিবৃত্ত গড়ে উঠেছে এক ভূমিহীন মজুরকে কেন্দ্র করে,যার নাম উৎসব নাইয়া।তার পিতা হরিচরণ নাইয়া।স্ত্রী,পুত্র,কন‍্যাকে নিয়ে সুন্দর বনের মাতলা নদীর তীরে বাদা অঞ্চলে বাস করে।ঝড়-জল বন‍্যায় ঘরবাড়ি পরিবার হারিয়ে সে নিঃস্ব হয়ে যায়,একমুঠো ভাতের জন‍্য সে পাগল হয়ে ওঠে।আলোচ‍্য গল্পে উৎসব চরিত্রটির যে বৈশিষ্ট‍্যগুলি ফুটে উঠেছে-সেগুলি আলোচনা করা হল—

১) সারল‍্য:   সরল সাদা সিদা উৎসব বছরের কয়েকমাস জন মজুর খাটে সতীশ মিস্ত্রির জমিতে,আর তাতেই তারা কয়েকমাস ভাত খেতে পাবে।সতীশ মিস্ত্রির তিন প্রকার ধানে মড়ক লাগলে উৎসবেরও কান্না পায়।

২) পরিবারের প্রতি ভালোবাসা:  অভাবের সংসার হলেও স্ত্রী,পুত্র পরিবার নিয়ে ভরা সংসার ছিল।ঝড় জলে সবাইকে হারিয়ে সে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে — “অ চন্নুনীর মা।চন্নুনীরে!তোমরা রা কাড় না ক‍্যান-কোতা অইলে গো!”

৩) স্বাভাবিক প্রবৃত্তি:  বেঁচে থাকার জন‍্য মানুষের প্রাথমিক চাহিদা অন্ন।সর্বস্ব হারিয়ে প্রথম কদিন উপবাসে কাটলেও জৈবিক সত্তার তাড়নায় ভাতের জন‍্য উৎসব যেন প্রেত হয়ে ওঠে— “পেটে ভাত নেই বলে উৎসবও প্রেত হয়ে আছে।”

৪) পরিশ্রমী মানসিকতা:  একমুঠো ভাতের আশায় উৎসব বাসিনীর মনিব বাড়িতে  যজ্ঞের জন‍্য আড়াই মণ কাঠ কেটে ফেলে।ভাতের ক্ষুধায় উতলা হলেও সে পরিশ্রম করে চলে।

          এইভাবে উৎসব চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে লেখিকা বড়লোক বাড়ির প্রাচুর্যের বিপরীতে দরিদ্র অসহায় মানুষের যন্ত্রণাকে তুলে ধরেছেন।উপরিলিখিত বৈশিষ্ট‍্যগুলি উপস্থাপন করে চরিত্রটিকে রক্তমাংসের সজীবতা দান করেছেন বলেই নিদারুণ ব‍্যঞ্জনায় আমাদের অশ্রুসিক্ত করতে পেরেছেন লেখিকা।

     —————————————-

Leave a Reply