মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন
সিরাজদ্দৌলা ( নাটক ) শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
[দশম শ্রেণি (WBBSE) বাংলা , সিরাজদ্দৌলা (নাটক ) শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত – প্রশ্ন ও উত্তর , WBBSE Bengali, MP Bengali , Sirajuddoula natok, ]
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরের PDF 👇
নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখোঃ- প্রশ্নমান – ৪
১. সিরাজদ্দৌল্লার প্রতি জাফর অলি খাঁ , মোহনলাল , মীরমদনের ব্যবহার সম্পর্ক একটি তুলনামূলক আলোচনা করো ।
উত্তরঃ- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক নাটক ‘সিরাজউদ্দৌলা’র দ্বিতীয় অংকের প্রথম দৃশ্যটি আমাদের পাঠ্য নাটক হসেবে গৃহীত । এই অংশে দেখা যায় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের অসহায়তা । এই যেন ট্রাজিক নায়কের করুণ পরিণতি । জাফর আলি খাঁ নবাব সিরাজউদ্দৌলা’র একজন মন্ত্রী এবং প্রধান সেনাপতি ছিলেন । সিরাজউদ্দৌলা বাংলার নবাব হওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি । তাই তিনি প্রধান সেনাপতি হয়েও সিরাজউদ্দৌলার বিপক্ষেই কাজ করেছেন । ইংরেজদের সাথে মীর জাফরের পূর্বেই এই মর্মে একটি চুক্তি ছিল যে , যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হলে মীর জাফর হবেন বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যার নবাব ।
মোহনলাল নবাবের একজন বিশ্বস্ত সেনাপতি। শওকতজঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন । সিরাজ তাঁকে দেওয়ানখানার পেশকার বানিয়েছিলেন। পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাননি । ক্লাইভের আদেশে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মীরমদন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার অন্যতম বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন । তিনি পলাশির যুদ্ধে নিজ সৈন্যাদল সহকারে ইংরেজ সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হন । ইংরেজ পক্ষের গুলির আঘাতে পলাশির প্রান্তরে তাঁর মৃত্যু হয় ।
২. “আছে শুধু প্রতিহিংসা ।” — মন্তব্যটি কার ? কী কারণে সে প্রতিহিংসাপরায়ণা হয়েছে ?
উত্তরঃ- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদৌল্লা’ নাট্যাংশে প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন ঘসেটি বেগম ।
আলীবর্দ্দীর নিজের কোনো পুত্র না থাকায় তৃতীয় মেয়ের পুত্র সিরাজদ্দৌলাকে নিজের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছিলেন । সেই মতো আলীবর্দ্দীর মৃত্যর পরে সিরাজ বাংলার মসনদে বসেন । কিন্তু এই ঘটনায় সর্বাপেক্ষা বিরূপ হয়েছিলেন ঘসেটি । তিনি আরেক বোনের পুত্র পুর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকতজঙ্গকে বাংলার মসনদে বসাতে চেয়েছিলেন । তাই তিনি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন । ফলে সিরাজ ঘসেটিকে নিজ প্রাসাদে বন্দি করেন । সিরাজ তাঁকে গৃহহারা করেছে , তাঁর সর্বস্ব লুট করেছে , তাঁকে দাসী করে রেখেছে । তখন ঘসেটি পরিণত হন সিরাজের প্রত্যক্ষ বিরোধীতে । এই পরিপ্রেক্ষিতে ঘসেটি বলেন যে তাঁর রাজ্য নেই , রাজনীতি নেই , আছে শুধু প্রতিহিংসা । বন্দিনী ঘসেটির প্রতিহিংসার এই ছিল মূল কারণ ।
………………………………………….
৩. “আজ কার রক্ত সে চায় । পলাশি , রাক্ষসী পলাশি ।” — কার লেখা নাটকের সংলাপ ? নাট্যাংশের সংলাপ রচনায় নাট্যকারের কৃতিত্ব আলোচনা করো ।
উত্তরঃ– প্রশ্নোদ্ধৃত সংলাপটি শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদৌল্লা’ নাট্যাংশের ।
অ্যারিস্টটল নাটকের যে ছয়টি উপাদানের কথা বলেছেন তার মধ্যে চতুর্থ উপাদান হল সংলাপ । নাট্যকাহিনীর সার্থক রূপায়নে সংলাপের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে । ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকের সূচনা সিরাজ ও ওয়াটসের সংলাপ দিয়ে । ওয়াটস ইংরেজ চরিত্র । তাই তাঁর সংলাপ ইংরেজি ভাষায় রচিত হয়েছে । তিনি যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করেছেন তা অন্বয়গত দিক থেকে ত্রুটিযুক্ত । এই ত্রুটিযুক্ত ভাষা একজন ইংরেজ চরিত্রের পক্ষে সুপ্রযুক্ত হয়েছে বলা যায় । অন্যদিকে মঁসিয়ে লা পুরোপুরিই ইংরেজিতে কথা বলেছেন । না হলে তাঁর চরিত্রটি বাস্তবতা হারাত । নাট্যদৃশ্যে সিরাজের সংলাপগুলি সম্রাটসুলভ গান্তীর্য এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয়বাহী । অন্যদিকে মীরজাফর ও ঘসেটি বেগমের সঙ্গে কথোপকথনে সিরাজ চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ ধরা পড়েছে । অপ্রধান চরিত্রগুলিও উপযুক্ত সংলাপের গুণে স্বমহিমায় ভাস্বর। ঐতিহাসিক নাটকের গাস্তীর্য বজায় রাখতে গিয়ে নাট্যকার সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ শিল্পকৌশলের পরিচয় দিয়েছেন ।
………………………….
৪. “তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত ।” — কে লজ্জিত ? সে কেন লজ্জিত তা বুঝিয়ে দাও ।
উত্তরঃ- নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত ‘সিরাজদ্দৌল্লা’ নাটকে সিরাজদ্দৌল্লা ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা সহ সমস্ত ফরাসিদের কাছে লজ্জিত ।
ফরাসিরা দীর্ঘকাল বাংলাদেশে বানিজ্য করেছে । তাদের ব্যাবসা কেন্দ্র ছিল চন্দননগর । কিন্তু নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী ইংরেজরা নবাবের সম্মতি না নিয়ে নবাবের রাজ্যের মধ্যে থাকা চন্দননগর আক্রমণ করে এবং সমস্ত ফরাসি বানিজ্যকুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে । ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা এই আক্রমণের প্রতিবাদ জানিয়ে নবাবের সাহায্য প্রার্থনা করেন । কিন্তু দীর্ঘদিন বিভিন্ন যুদ্ধের ফলে নবাবের লোকবল ও অর্থবল এতই কমে গিয়েছিল যে ফরাসিদের হয়ে ইংরেজকে প্রতিহত করার ক্ষমতা তাঁর ছিল না । তাই এই অক্ষমতার জন্য মঁসিয়ে লা-র কাছে নবাব সিরাজদৌল্লা ক্ষমা প্রার্থনা ও লজ্জা প্রকাশ করেছেন ।
………………………..
৫. “আমার এই অক্ষমতার জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো ।” –— বক্তা কে ? কাদের তিনি একথা বলেছেন ? কোন অক্ষমতার কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন ?
উত্তরঃ– নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত ‘সিরাজদ্দৌল্লা’ নাটকের প্রশ্নোদ্ধৃত সংলাপটির বক্তা হলেন নবাব সিরাজদ্দৌল্লা ।
ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা সহ সমস্ত ফরাসিদের উদ্দেশ্যে সিরাজদৌল্লা একথা বলেছেন ।
ফরাসিরা দীর্ঘকাল বাংলাদেশে বানিজ্য করেছে । তাদের ব্যাবসা কেন্দ্র ছিল চন্দননগর । কিন্তু নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী ইংরেজরা নবাবের সম্মতি না নিয়ে নবাবের রাজ্যের মধ্যে থাকা চন্দননগর আক্রমণ করে এবং সমস্ত ফরাসি বানিজ্যকুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে । ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা এই আক্রমণের প্রতিবাদ জানিয়ে নবাবের সাহায্য প্রার্থনা করেন । কিন্তু দীর্ঘদিন বিভিন্ন যুদ্ধের ফলে নবাবের লোকবল ও অর্থবল এতই কমে গিয়েছিল যে ফরাসিদের হয়ে ইংরেজকে প্রতিহত করার ক্ষমতা তাঁর ছিল না । এই অক্ষমতার কথা সিরাজদৌল্লা ব্যক্ত করেছেন — “আমার এই অক্ষমতার জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো ।”
………………………..
৬. সিরাজদ্দৌল্লা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজের চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো ।
উত্তরঃ– নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব । তাঁর চরিত্রের যে গুণগুলি আমাদের আকর্ষণ করে , সেগুলি হল —
ক) দেশাত্মবোধঃ– সিরাজ তাঁর নিজের বিরুদ্ধে যাবতীয় ষড়যন্ত্রকে কখনোই ব্যক্তিগত আলোকে দেখেননি । বরং বাংলার বিপর্যয়ের দুশ্চিন্তাই তাঁর কাছে প্রধান হয়ে ওঠেছে । বাংলাকে বিদেশি শক্তির হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি শত্রুর সঙ্গে সন্ধিতেও পিছপা হননি ।
খ) সাম্প্রদায়িকতা-মুক্ত ও জাতীয়তাবাদঃ– সিরাজ বুঝেছিলেন হিন্দু-মুসলমানের মিলিত প্রতিরোধই বাংলাকে ব্রিটিশের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে পারে । সাম্প্রদায়িকতা-মুক্ত এই জাতীয়তাবাদই সিরাজকে ইতিহাসের নায়ক করেছে ।
গ) উদার ও আর্দশবাদীঃ- সিরাজের চরিত্রের মধ্যে উদারতা ও আদর্শের এক সমন্বয় ছিল । মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত শত্রুতাকে তিনি ভুলে যেতে পেরেছেন । এমনকি ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভের পর নিজের বিচারের মুখোমুখি হতে বা সিংহাসন ছেড়ে দিতেও রাজি ছিলেন ।
ঘ) দুর্বল মানসিকতাঃ- সিরাজ তাঁর শত্রুদের চক্রান্ত বুঝতে পারলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি । তেমনি ঘসেটি বেগমের অভিযোগেরও তিনি প্রতিবাদ করতে পারেন না । বরং নিজের দুর্বলতা নিজে মুখেই স্বীকার করে নেন ।
ঙ) যন্ত্রণাদীর্ণঃ- আদর্শের আগে অবশ্য আর এক সিরাজকে পাওয়া যায় যিনি সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত , রক্তাক্ত । আদর্শের বলিষ্ঠতা আর ব্যক্তিগত যন্ত্রণার দ্বন্দ্বে তিনি দীর্ণ হয়েছেন ।
……………………………………
৭. “আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে শুধু এই আশ্বাস দিন ।” — বক্তা কে ? তিনি কোন আশ্বাস ভিক্ষা করেছেন ?
উত্তরঃ- নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত সংলাপটির বক্তা হলেন নবাব সিরাজদৌল্লা ।
নবাবের সভাসদ জগৎশেঠ , রাজবল্লভ , দুর্লভ রায় , মীরজাফর প্রমুখ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁকে বাংলা মসনদ থেকে উৎখাত করতে চাইছিলেন । এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় মীরজাফরকে লেখা ওয়াটসের একটি চিঠি যখন নবাবের হাতে আসে । তবুও নবাব তাঁদের শাস্তি বিধান না করে সৌহার্দ্যের ডাক দেন । মীরজাফরদের চক্রান্ত যেমন অন্যায় , তেমন তাঁর নিজের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ আছে । নবাব বুঝেছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে দেশীয় শক্তিকে একত্রিভূত করতে গেলে মীরজাফরদের সহায়তা প্রয়োজন । আর এজন্যই বাংলাকে ইংরেজদের হাত থেকে বাঁচাতে সিরাজ তাঁর সভাসদদের কাছ থেকে সৌহার্দ ও সহযোগিতার আশ্বাস চেয়েছেন । তাঁর অনুরোধ তাঁরা যেন এই দুর্দিনে তাঁকে ছেড়ে না যান । বহিশত্রুর হাত থেকে বাঁচতে ন্যায়-অন্যায় ভুলে সকলের মধ্যে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সহৃদয়তার বীজ বপন করতে চেয়েছেন । নবাব এই আশ্বাস ভিক্ষা চেয়েছেন ।
………………………..
৮. সিরাজদ্দৌল্লা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে লুৎফা চরিত্রের বিশেষ দিকগুলি আলোচনা করো ।
উত্তরঃ- নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে যে দুটি নারী চরিত্র আছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সিরাজ পত্নী লুৎফা । নাট্যাংশে সংক্ষিপ্ত উপস্থিতিতে লুৎফা এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে । তাঁর চরিত্রের যে বিশেষ দিক গুলি পরিস্ফুট হয়েছে , সেগুলি হল —
ক) সরলতাঃ- সভাসদদের সঙ্গে মানসিক সংঘর্ষে সিরাজ যখন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত তখন লুৎফার আবির্ভাব ঘটে । নবাবের বেগম হয়েও সহজসরল লুৎফা রাজনীতির বৃত্তে না ঢুকে সাংসারিক বৃত্তেই আবর্তিত হয়েছে । ঘসেটির ভর্ৎসনা সত্ত্বেও লুৎফা তাঁর উদ্দেশ্যে একটা কটু কথা উচ্চারণ করেননি ।
খ) যোগ্য সঙ্গিনীঃ- স্বামীর প্রতি একনিষ্ঠ , তাই স্বামীর বিপদের বিষয়ে সে উদবিগ্না । বিভিন্ন সময়ে তিনি স্বামীর পাশে থেকে কাজে সাহায্য করেছেন । স্বল্প রাজত্বকালে নানান সমস্যায় দীর্ণ সিরাজকে বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে যোগ্য সঙ্গিনীর পরিচয় দিয়েছেন ।
গ) সহমর্মিতাঃ- নাটকে কোমল-হৃদয়ের লুৎফা নবাবের চোথে জল দেখে বেদনার্ত হয়ে ওঠেন । নবাবের অমঙ্গল চিন্তায় লুৎফা আতঙ্কিত । লুৎফার কাছে রাজনীতি নয় , প্রাধান্য পেয়েছে স্বামীর কল্যাণ । ঘসেটিকে মা বলে সম্মান করেছেন কিন্তু মায়ের স্নেহের পরিবর্তে যখন প্রতিহিংসার কথা শুনেছেন তখন ঘসেটির উপস্থিতি তাঁর কাছে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে । লুৎফা হলেন সেই নারী যিনি ট্রাজিক নায়কের পাশে থেকে তাকে ভালোবাসা-সেবা-সাহস ও আস্থা জুগিয়েছেন ।
ঘ) সাধারণ নারীচরিত্রঃ- মহিষী হয়েও লুৎফার মধ্যে বেগমসুলভ কোনো অহংকার নেই । তাই তিনি পলাশির আসন্ন যুদ্ধের কথা শুনে বিচলিত হয়ে ওঠেন । সাধারণ নারীর মতোই তিনি স্বামী সিরাজ আসন্ন যুদ্ধে অবতীর্ণ হোক তা চান না ।
………………………..
৯. “জাতির সৌভাগ্যসূর্য আজ অস্তাচলগামী” — বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ ‘সিরাজদ্দৌল্লা’ নাট্যাংশের কাহিনিসূত্র অবলম্বনে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ- নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগ্রপ্তের রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটির বক্তা হলেন নবাব সিরাজদ্দৌলা । তিনি তাঁর রাজদরবারের বিশিষ্ট কর্মচারীদের উদ্দেশে আলোচ্য উক্তটি করেছেন । আলিবর্দির মৃত্যুর পর বাংলার মসনদে বসেন তাঁর দৌহিত্র সিরাজদ্দৌলা । সিংহাসন আরোহণের পরই নানা কারণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সিরাজের বিরোধ অনিবার্য হয়ে ওঠে । ইংরেজরা বিনা শুল্কে ব্যাবসাবাণিজ্য শুরু করে । নবাবের আদেশ উপেক্ষা করে কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ করতে থাকে । সিরাজের সিংহাসন আরও সমস্যাসঙ্কুল হয়ে ওঠে নিজের মাসি ঘসেটিবেগম , প্রধান সেনাপতি মীরজাফর ও কিছু রাজকর্মচারীর ষড়যন্ত্রে । বাংলার এই ঘোর দৃ্দিনে সিরাজ সকলের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক বক্তব্য রাখেন । সেই বক্তব্যে বাংলাকে ইংরেজদের হাত থেকে রক্ষা করার করুণ আবেদন ধ্বনিত হয় । যেভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার ক্ষমতা বিস্তার করছে তাতে করে বাংলা তার স্বাধীনতা হারাবে । সিরাজ জানিয়েছে — “বাঙালি জাতির সৌভাগ্যসূর্য আজ অস্তাচলগামী ।”
তাঁর এই উক্তির মধ্যে দিয়ে গভীর বেদনাবোধ ধরা পড়েছে । বাংলার প্রতি তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসার
প্রকাশ পেয়েছে আলোচ্য উক্তিটির মধ্যে দিয়ে ।
১০. “মুন্সিজি , এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন ।” — কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন ? এই পত্রে কী লেখা ছিল ?
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা “সিরাজদ্দৌলা” নাটকের অংশ ।
অ্যাডমিরাল ওয়াটসন পত্র লিখেছিলেন সিরাজের দরবারে থাকা কোম্পানির নিয়োজিত প্রতিনিধি ওয়াটস কে ।
উল্লেখিত সেই পত্রে বাংলার বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ ছিল । সমগ্র পত্রটি পড়া হয়নি শেষের অংশটুকু পড়া হয় যাতে উল্লেখ ছিল “কর্নেল ক্লাইভ যে সৈন্যের কথা উল্লেখ করেছেন তা দ্রুত কলকাতা পৌঁছাবে । আমি আর একটা জাহাজ মাদ্রাজে পাঠাইয়া খবর দিব বাংলায়, আরও জাহাজ ও সৈন্য আবশ্যিক । আমি এমন আগুন জালাইবো যা সমগ্র গঙ্গার জল দিয়েও নেভানো যাইবে না ।” নবাবের প্রতি এহেন অমর্যাদা প্রদর্শন ও চক্রান্ত স্বভাবতই সিরাজের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না । তাছাড়া তিনি আরো জানতে পারেন যে, ওয়াটস তাঁরই সভায় স্থান পেয়ে সভাসদ ও আত্মীয়স্বজনের কানে কুমন্ত্রণা দিয়ে তাদের নবাব বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হতে বাধ্য করেছেন । তারা নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য রাতের আঁধারে অস্ত্রে শান দিচ্ছে । কোম্পানির এহেন কুচক্রী কার্যকলাপে বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়েই নবাব সিরাজ ওয়াটসকে বলেছিলেন — “কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা ।” এইভাবেই পত্রের মাধ্যমে ইংরেজদের কূটচক্রী মনোভাব ধরা পড়েছে।
………………………..
সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশের PDF টি ডাউনলোড করে নাও 👇
আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকিঃ দশম শ্রেণি
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রশ্নোত্তর