প্রশ্নোত্তরে চর্যাপদ | বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন

১) বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন কোনটি ? এটি কে কোথা থেকে আবিস্কার করেন ? বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই গ্রন্থের গুরুত্ব কোথায় ?

উত্তরঃ- বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ ।
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজদরবারে রয়্যাল লাইব্রেরি থেকে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন ।

২। চর্যার পুঁথিটি কবে কী নামে কোথা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় ?

উত্তরঃ- চর্যার পুঁথিটি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা’ নামে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে প্রকাশিত হয় ।

৩। চর্যাপদের উপর কোন কোন ভাষার দাবি করা হয় এবং দাবিদার কারা ?

উত্তরঃ– চর্যাপদের ভাষার দাবিদার —
ক) ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে চর্যাপদের ভাষা বাংলা ।
খ) বিজয়চন্দ্র মজুমদার ও রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে চর্যাপদের ভাষা হিন্দি ।
গ) ডঃ জয়কান্ত মিশ্রের মতে চর্যাপদের ভাষা মৈথিলি ।
ঘ) ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহের মতে চর্যাপদের ভাষা বঙ্গকামরূপী ।
ঙ) অসমীয়া পন্ডিত বাণীকান্ত কাকতির মতে চর্যাপদের ভাষা অসমীয়া ।

৪। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক প্রকাশিত চর্যাপদের সঙ্গে অন্যান্য গ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলির নাম ও ভাষাগত পরিচয় লিখুন।

উত্তরঃ- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক প্রকাশিত চর্যার পুঁথির সঙ্গে অন্যান্য গ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলি হল — ‘সরহপাদের দোহা’ , কৃষ্ণাচার্যের দোহা’ ও ‘ডাকার্ণব’ । এগুলির ভাষা পশ্চিমা শৌরসেনী অপভ্রংশ ।

৫। চর্যার ভাষায় বাংলা এর প্রমাণ কী ?

উত্তরঃ- চর্যার ভাষা বাংলা এর প্রমাণ হল —
ক) চর্যায় বর্ণিত ভৌগোলিক পরিবেশ নদীমাতৃক বাংলাদেশের ।
খ) বাংলা ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য চর্যায় পাওয়া যায় । যেমন – ‘র’ ধ্বনি ‘ল’ এ রূপান্তর । রুই > লুই ।
গ) বাংলা কথ্য রূপে নেতিবাচক বাক্যে না বাচক শব্দ সমাপিকা ক্রিয়ার আগে আসে । যেমন – না হয়ো ।
ঘ) মাছে ভাতে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস ও পেশা চর্যায় বর্ণিত হয়েছে ।

৬। চর্যায় ব্যবহৃত চারটি প্রবাদ বাক্য লিখুন ।

উত্তরঃ- চর্যায় ব্যবহৃত চারটি প্রবাদ বাক্য হল —
ক) অপণা মাংসে হরিণা বৈরী ।
খ) হাতের কাঙ্কন মা লোউ দাপন ।
গ) দুহিল দুধু কি বেন্টে ষামাঅ ।
ঘ) হাড়ীত ভাত নাহি নীতি আবেশী ।

৭। চর্যার যুগে তৎকালীন মানুষের চারটি পেশার নাম লিখুন ।

উত্তরঃ- চর্যার যুগে তৎকালীন মানুষের চারটি পেশার নাম হল — তাঁত বোনা , খেয়াপারাপার , চৌর্যবৃত্তি ও দস্যুবৃত্তি ।

৮। চর্যার যুগে বিনোদনের কী পরিচয় পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ- চর্যার যুগে বিনোদনের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা হল — দাবাখেলা , অবসর সময়ে মদ্যপান , নাটগীতি পালা অভিনীত হত ।

৯। চর্যার যুগে বাঙালিদের খাদ্য ও আসবাবের কী পরিচয় পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ- বাঙালিদের খাদ্য — ভাত , দুধ , মাছ , মাংস ও তেঁতুল ।
বাঙালিদের আসবাব — হাঁড়ি , পিটা , ঘড়ি ও ঘড়ুলি ।

০। চর্যায় উল্লেখিত বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিচয় লিখুন ।

উত্তরঃ- বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিচয় —
ক) মালভূমি ও সমতল ভূমিরূপের বর্ণনা ।
খ) নদী ও নদীকেন্দ্রিক পেশা ও কার্যাবলির বর্ণনা ।
গ) বাংলার প্রধান ফসল ধান । চর্যায় ভাতের কথা আছে ।
ঘ) বাংলাদেশের জাতিভেদ প্রথা , মানুষের পেশা ও সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায় ।

১১) নাটক কথাটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম কোথায় কীভাবে পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ- নাটক কথাটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম চর্যাপদের ১৭নং পদে পাওয়া যায় । বীণাপাদের পদে উল্লেখ রয়েছে —
“নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী ।
বুদ্ধনাটক বিসমা হোই ।।”

১২। সহজিয়া বৌদ্ধধর্মের মূল কথা সংক্ষেপে লিখুন ।

উত্তরঃ- সহজিয়া বৌদ্ধধর্মের মূল কথাঃ-
বৌদ্ধধর্ম সাধনার দুটি প্রধান ধারা । একটি হল সহজিয়া বা সহজান । এই ধারা অনুযায়ী সংসার ধর্ম বজায় রেখে সামাজিক ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে নিয়মিত কায়া সাধনের মাধ্যমে মহাসুখ লাভ করা সম্ভব । এই মহাসুখ বা মোক্ষলাভই হল সহজিয়া বৌদ্ধ ধর্মের মূল লক্ষ্য ।

১৩। চর্যার পুঁথিটি কোন সময়ে অনুলিখিত ?

উত্তরঃ- লিপি বিশারদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিস্কৃত চর্যার পুঁথিটির লিপিকার আনুমানিক পঞ্চদশ শতকের পরে ।

১৪। চর্যাপদ আবিষ্কারের পূর্বে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম রচনা কাকে বলা হত ?

উত্তরঃ- চর্যাপদ আবিষ্কারের পূর্বে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম আলোচনা হল — ডাক ও খনারবচন , গোরক্ষনাথের পাঁচালি ।

৫। নবচর্যাপদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিন ।

উত্তরঃ– ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্ত ১৯৬৩ সালে নেপাল থেকে ২০ টি প্রাচীন পুঁথি গবেষণা করে ২৫০ টি চর্যা আবিষ্কার করেন । সেগুলির মধ্য থেকে ৯৮ টি পদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘নবচর্যাপদ’ নামে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন । পরে ১৯৮৯ সালে ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্তের মৃত্যুর পর ‘নবচর্যাপদ’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় । ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্তর মত অনুযায়ী এই গ্রন্থের প্রথম ১৯ টি পদ দশম থেকে দ্বাদশ শতকের রচনা । তার পরবর্তী ৪৪ টি পদ ত্রয়োদশ থেকে চতুর্দশ শতকের রচনা এবং শেষের ৩৫ টি পদ পঞ্চদশ শতকের রচনা বলে অনুমান করা হয় ।

Leave a Reply