প্রশ্নঃ নাট্য সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।
(আজকের আলোচ্য বিষয় বাংলা নাটকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান।)
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মূলত কবি । সেইজন্যে তাঁর গল্প , উপন্যাস যেমন কাব্যধর্মী হয়েছিল , তাঁর নাটকগুলিও কাব্যাশ্রয়ে গঠিত হয়েছিল । রবীন্দ্রনাথের নাটকে ঘটনার ঘনঘটা নেই । তাঁর নাটকে ঘটনার আবর্ত যুদ্ধবিগ্রহ কিংবা জীবনের দ্বন্দ্ব সংঘাত তেমন নেই । তাঁর নাটক গীতোচ্ছ্বাসময় , গীতি কবিতার আবেগে রঞ্জিত ।
রবীন্দ্র নাট্যপ্রবাহকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন —
ক) গীতিনাট্য – ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ (১৮৮১) , ‘কালমৃগয়া'(১৮৮২) , ‘মায়ার খেলা’ (১৮৮৮) ইত্যাদি ।
খ) কাব্যনাট্য – ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ'(১৮৮৪) , ‘রাজা ও রাণী'(১৮৮৯) , ‘বিসর্জন'(১৮৯০) , চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২) ইত্যাদি ।
গ) নাট্যকাব্য – ‘বিদায় অভিশাপ’ (১৮৯২) , ‘গান্ধারীর আবেদন’ (১৯০০) , ‘সতী’ (১৯০০) , ‘নরকবাস'(১৯০০) , ‘লক্ষ্মীর পরীক্ষা’ (১৯০০) , ‘কর্ণকন্তী সংবাদ’ (১৯০০) ইত্যাদি ।
ঘ) প্রহসন – ‘গোড়ায় গলদ’ (১৮৯২) , ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’ (১৮৯৭) , ‘প্রজাপতি নিবন্ধ’ (১৯০৮) , ‘চিরকুমার সভা’ (১৯২৬) ইত্যাদি ।
ঙ) রূপক সাংকেতিক নাটক – ‘শারদোৎসব’ (১৯০৮) , ‘অচলায়তন’ (১৯১২) , ‘ফাল্গুনী’ (১৯১৬) , ‘মুক্তধারা’ (১৯২৫) , ‘রাজা’ (১৯১০) , ‘ডাকঘর’ (১৯১২) , ‘রক্তকরবী’ (১৯১৬) , ‘কালের যাত্রা’ (১৯৩২) ইত্যাদি ।
চ) সামাজিক নাটক – ‘শোধবোধ'(১৯২৬) , ‘বাঁশরী'(১৯৩৩) ইত্যাদি ।
ছ) নৃত্যনাট্য – ‘নটীর পূজা'(১৯২৬) , ‘চিত্রাঙ্গদা’ (১৯৩৬) , ‘চণ্ডালিকা’ (১৯৩৮) , ‘শ্যামা’ (১৯৩৯) ইত্যাদি ।
‘বাল্মীকি প্রতিভা’র বাল্মিকী চরিত্রটি মধ্যে সূক্ষ্ম নাটকীয়তা দেখা যায় । তবে তা ভাবময় ও অন্তর্নিহিত । ‘মায়ার খেলা’তে সুরের মধ্য দিয়ে নাটকীয় ঘটনা বিবৃত হয়েছে ।
‘বিসর্জন’ রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক । হিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত , যুক্তিহীন ধর্মাচার কখনো প্রকৃত ধর্মের অঙ্গ হতে পারে না এটাই নাটকের প্রতিপাদ্য বিষয় ।
‘কর্ণকুন্তীরসংবাদ’ এ মাতা ও পুত্রের আদর্শগত বিরোধীদের মধ্য দিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে । ‘সতী’ নাটকের মধ্যেও সন্তান ও পিতা-মাতার সংঘাত লক্ষ করা যায় ।
‘রক্তকরবী’ কর্ষণজীবী এবং অ-কর্ষণজীবীর দ্বন্দ্ব দেখানো হয়েছে এই নাটকে । কর্ষণজীবী সভ্যতার প্রতীক নন্দিনী , আর অ-কর্ষণজীবী সভ্যতার প্রতীক রাজা ।
তার রূপক সাংকেতিক নাটক গুলির মধ্যে তথ্য বস্তু ও নাট্য সংঘাতের মধ্যে রয়েছে একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব এবং সেই দ্বন্দ্ব হল প্রাণধর্মের সঙ্গে জড়ধর্মের । আর এই প্রাণধর্ম প্রকাশ পেয়েছে প্রত্যেকটি নায়ক চরিত্রের মধ্যে । এভাবেই রবীন্দ্রনাথ নাটক রচনায় নিপুণ দক্ষতার মাধ্যমে বাংলা নাট্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তোলেন ।
আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇
নাট্যসাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান
নাট্যসাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান
নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্র-র অবদান
নাট্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান
বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান
গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।
বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা
আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান
গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান
কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
কথাসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান