You are currently viewing আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান

আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান

আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান

রবীন্দ্র-পরবর্তী কবিদের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যধারায় এক ভিন্ন শ্রেনির কবি। রবীন্দ্রনাথের কথায়, তিনি ‘চিত্ররূপময় কবি’। সমসাময়িক কবিদের থেকে তিনি স্বতন্ত্র। সেই স্বাতন্ত্রের প্রধান কারন তাঁর কবিতার পরাবাস্তব চেতনা। এই Surrealistic কবি ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন স্কুলশিক্ষক ও সমাজসেবক। তিনি ব্রহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন কবি।কবির মৃত্যু খুভ দুঃখজনক। যন্ত্রসভ্যতায় উদাসী কবির মৃত্যু হয়েছিল যন্ত্রের আঘাতেই। ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর রাত্রি ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

আধুনিক বাংলা কাব্যে জীবনানন্দ দাশের অবদান /কাব্য বৈশিষ্ট্য:

জীবনানন্দের কবিতা বহুমাত্রিক। কোনো নির্দিষ্ট কয়েকটি দিক দিয়ে তাঁর সমগ্র রচনাকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এখনে জীবনানন্দ দাশের কবিতার প্রধান কিছু বৈশিষ্ট তুলে ধরা হলোঃ

১. জীবনানন্দের কবিতার প্রধান রং ধূসরতা। জীবনের অচরিতার্থতার ব্যর্থতার ক্লান্তির অবসন্নতার মৃত্যুর রং। তাই “মরা চাঁদের আলোর”, “হিমের কুয়াশার রাতের”, “পৌষের শস্যরিক্ত মাঠের” চিত্ররূপ তাঁর কবিতায় পুনরাবৃত্ত।

২. কবির কবিতায় কয়েকটি বিশিষ্ট এবং উদ্ভট উপমার প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন- “প্রেত চাঁদ”, “বুনোহাঁস” , “ভিজে মাঠ” , “কুয়াশা” , “ঘাসের বুক”।

৩. কবির কবিতায় ব্যবহৃত ব্যক্তির নামে, নায়িকার নামে সিম্বলিক প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন- “বনলতা সেন”।

৪.তিনি বিশ্বাস করতেন উপমাই কবিত্ব। বহুমুখী উপমায় বাংলার চিরায়ত রুপকে আঁকতে পেরেছেন একমাত্র তিনিই। যেমন-
‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।’/ ‘উটের গ্রীবার মতো কোন এক নিস্তব্ধতা এসে’

৫. ‘রূপসী বাংলা’র কবি জীবনানন্দ তাঁর কবিতায় বারবার ফিরে গেছেন বাংলার প্রকৃতির কাছে। আর কোনো কবির কবিতায় এমন করে বাংলাদেশ কিংবা ফুল, পাখি, জীবজন্তু আসেনি। কার্তিকের ছায়া, হেমন্তের মিষ্টিরোদ, হিজলের জানলায় আলো আর বুলবুলি, হলুদ পাতায় শিশিরের শব্দ, বুনোহাঁস, শঙ্খচিল, পেঁচা, সোনালি ডানার চিল, নক্ষত্রের তারা জ্বলা রাত, শিরীষের ডাল, অশ্বথের চূড়া, কলমির ঘ্রাণ, হাঁসের পালক তাঁর কবিতায় বারবার ফিরে ফিরে এসেছে।

৬.মৃত্যুচেতনাও তাঁর কবিতায় প্রায় প্রথম থেকেই দেখা যায়। সুচেতনা, বোধ ইত্যাদি কবিতায় মৃত্যুচেতনা ফুটে উঠেছে। এই মৃত্যুচেতনা যুগযন্ত্রণারই ফলশ্রুতি। 

৭.অদ্ভূত সমকাল সচেতনা ও সমাজ সচেতনতা জীবনানন্দের কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, একটি মাত্র উদাহরনই এ প্রসঙ্গে যথেষ্ট-‘- ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,/ যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশী আজ চোখে দেখে তারা;/ যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই- প্রীতি নেই- করুণার আলোড়ন নেই/ পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।’ (অদ্ভুত আঁধার এক)

৮.শুধুমাত্র সমকাল সচেতনাতাই নয় ইতিহাস চেতনাও জীবনানন্দের কাব্যের লক্ষণীয় দিক।জীবনানন্দ নিজেই বলেছেন,
’কবিতার অস্থির ভিতরে থাকবে ইতিহাসচেতনা ও মর্মে থাকবে পরিছন্ন কালজ্ঞান।’
হাওয়ার রাত, নগ্ন নির্জন হাত কবিতা দুটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

৯।এছাড়া পরাবাস্তবতা, অবচেতন মনের প্রতিকি উপস্থাপন ও নির্জনতাকে তিনি তাঁর কাব্যে তুলে ধরেছিলেন।

জীবনানন্দ দাশের কাব্য সমূহ:

মৃত্যুর পূর্বে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সমূহ :

১. প্রথম কাব্যগ্রন্থ “ঝরাপালক” (১৯২৭)
২. ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
৩. বনলতা সেন (প্রথম প্রকাশ ১৯৪২), (দ্বিতীয় প্রকাশ ১৯৫২ সালে সিগনেট প্রেস থেকে)
৪. মহাপৃথিবী (১৯৪৪)
৫. সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮)
৬. জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪)

মৃত্যু পরবর্তী প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ :

৭.রূপসী বাংলা (১৯৫৭)
৮.বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)
৯.প্রেমের কবিতা(১৯৭০)
১০.সুদর্শনা (১৯৭৩), 
১১.মমবিহঙ্গম(১৯৭৯)
১২.আলো পৃথিবী (১৯৮১), 
১৩.হে প্রেম, তোমারে ভেবে ভেবে (১৯৯৮),
১৪.অপ্রকাশিত একান্ন (১৯৯৯) ১৫. আবছায়া (২০০৪)।

জীবনানন্দ দাশের উপন্যাস:

মাল্যবান (১৯৭৩), 
সুতীর্থ (১৯৭৭), 
চারজন (২০০৪ )
এছড়া অন্যন্য উপন্যাস গুলির মধ্যে পূর্ণিমা, জীবন প্রণালী, কারুবাসনা, পেতনীর রূপকথা, জলপাই হাটি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধ গ্রন্থ:

কবিতার কথা(১৯৫৬)
সমালোচনা সমগ্র(১৯৮৩)

পুরস্কার ও সম্মাননা:

রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। এছাড়া জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটিও ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৪) লাভ করে।

আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇

বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান

বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান

গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।

বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা

গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান

কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান

বাংলা উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা সাহিত্যে রাজশেখর বসু(পরশুরাম)-এর অবদান আলোচনা করো।

Leave a Reply