[আজকের আলোচ্য বিষয় রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস, বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান, ‘রাজর্ষি'(১৮৮৭) , ‘চোখের বালি'(১৯০৩) , ‘নৌকাডুবি”(১৯০৬) , ‘গোরা'(১৯১০) , ‘ঘরে বাইরে'(১৯১৬) , ‘চতুরঙ্গ'(১৯১৬) , ‘যোগাযোগ'(১৯২৯) , ‘শেষের কবিতা'(১৯২৯) , ‘দুই বোন'(১৯৩৩) , ‘মালঞ্চ'(১৯৩৪) , ‘চার অধ্যায়'(১৯৩৪) প্রভৃতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়া হল। একাদশ শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস এর জন্য ৫ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর এখানেই আলোচিত হল। ]
উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান আলোচনা করো।
উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদানঃ-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্কিম পরবর্তী আধুনিক যুগে উপন্যাস সাহিত্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন । তাঁর কিশোর বয়সের প্রথম উপন্যাস ‘করুণা’ ‘ভারতী’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় । কিন্তু এটি গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয়নি । রবীন্দ্রনাথের প্রথম সার্থক উপন্যাস ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’ (১৮৮৩) ।
তাঁর রচিত উপন্যাস গুলি হল — ‘রাজর্ষি'(১৮৮৭) , ‘চোখের বালি'(১৯০৩) , ‘নৌকাডুবি”(১৯০৬) , ‘গোরা'(১৯১০) , ‘ঘরে বাইরে'(১৯১৬) , ‘চতুরঙ্গ'(১৯১৬) , ‘যোগাযোগ'(১৯২৯) , ‘শেষের কবিতা'(১৯২৯) , ‘দুই বোন'(১৯৩৩) , ‘মালঞ্চ'(১৯৩৪) , ‘চার অধ্যায়'(১৯৩৪) প্রভৃতি ।
রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলিকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন —
ক) ঐতিহাসিক উপন্যাস – ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’ , ‘রাজর্ষি’।
খ) পারিবারিক ও সামাজিক উপন্যাস – ‘চোখের বালি’ , ‘নৌকাডুবি’ , ‘গোরা’ , ‘যোগাযোগ’ , ‘চার অধ্যায়’ ।
গ) চেতনাশ্রয়ী উপন্যাস – ‘ঘরে বাইরে’ , ‘চতুরঙ্গ’ ।
ঘ) কাব্যোপন্যাস – ‘শেষের কবিতা’ , ‘দুই বোন’ , ‘মালঞ্চ’ ।
ঙ) দেশাত্মবোধক উপন্যাস – ‘গোরা’ , ‘ঘরে বাইরে’ , ‘চতুরঙ্গ’ ।
‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’ মূলত ইতিহাসাশ্রিত উপন্যাস । এই উপন্যাসে ইতিহাসের অংশটি হল রাজা প্রতাপাদিত্যের কাহিনি । ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’ অপেক্ষা ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসটি অনেক পরিণত ও শিল্পগুণান্বিত রচনা । এই উপন্যাসের পটভূমি ত্রিপুরার রাজবংশের ইতিহাস ।
‘চোখের বালি’ দ্বন্দ্ব মূলক উপন্যাস । মহেন্দ্র , আশালতা , বিহারী ও বিনোদিনী — দুজন পুরুষ ও দুজন স্ত্রীলোকের জীবন সমস্যা কীভাবে জটিল আবর্তে আবর্তিত হয়ে যুগসন্ধিতে সংস্কারের আঘাত পেল তারই বর্ননা এই উপন্যাসের প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ।
স্বদেশচেতনার সর্বোত্তম প্রকাশ ঘটেছে ‘গোরা’ উপন্যাসে । রবীন্দ্রনাথের এই স্বদেশ জিজ্ঞাসার ভিন্নতর রূপ মূর্ত হয়েছে ‘ঘরে বাইরে’ এবং ‘চার অধ্যায়ে’ । প্রথমটিতে আছে বয়কট আন্দোলনের নামে জাতীয় উন্মাদনার মত্ততার চিত্ররূপ । দ্বিতীয়টিতে আছে স্বভাবধর্ম উপেক্ষা করে সন্ত্রাসবাদে আত্মদানের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী ।
রবীন্দ্রনাথের সমস্ত উপন্যাসেই অল্পবিস্তর রোমান্টিকতা লক্ষ করা যায় । তবু ‘চতুরঙ্গ’ এবং ‘শেষের কবিতা’ এ ব্যাপারে অনন্য । রবীন্দ্রনাথ দুটি আখ্যানধর্মী গদ্য রচনা করেছেন — যা পুরোপুরি উপন্যাসের আকার লাভ করতে পারিনি । সেগুলি হল ‘দুই বোন’ ও ‘মালঞ্চ’ ।
রবীন্দ্র উপন্যাসের ভাষাশৈলী বাংলা সাহিত্যের চিরস্থায়ী সম্পদ । প্রথম দিকের ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’ ও ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসের ভাষায় সাধু গদ্যের প্রকৃতি অনেক পরিণামে বঙ্কিমী গদ্যের চালে বিন্যস্ত হয়েছিল । পরবর্তীকালে কিন্তু তার বিস্ময়কর পরিবর্তন দেখা দেয় । এই পরিবর্তন শুরু হয় ‘ঘরে বাইরে’ থেকে । সব দিক বিচার করে বাংলা কথাসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ কালোত্তীর্ণ এই কারণে যে , তাঁর সৃষ্টির মধ্যে একটি সর্বজনীন ও সর্বকালীন আবেদন বিদ্যমান ।
আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇
বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান
বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান
গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।
বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা
আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান
গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান