কর্তার ভূত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর, কর্তার ভূত গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর, একাদশ শ্রেণির বাংলা পাঠ্য গল্প কর্তার ভূত,
১) “ওরে অবোধ আমার ধারাও নেই ছাড়াও নেই তোরা ছারলে আমার ছাড়া”-এখানে কে কাদের অবোধ বলেছেন? উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তারভূত ‘ গল্পে বুড়ো কর্তা ‘ভূতগ্রস্থ ‘ দেশবাসীকে ‘অবোধ ‘ বলে সম্বোধন করেছেন।
∆ উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো: গল্পের শেষ অংশে কর্তা এই কথাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কর্তা মারা যাওয়ার পর দেশবাসী মনে করল যে কর্তা ভূত হয়ে তাদের ধরে রেখেছে। কর্তা অভিভাবকত্বে অনেকে শান্তি অনুভব করলেও দেশের নবীন প্রজন্ম বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এমত অবস্থায় দেশের দু- একজন মানুষ যারা দিনের বেলায় ভুতুড়ে নায়েবের ভয়ে মুখ খুলতে পারে না, গভীর রাতে কর্তার শরণাপন্ন হয়। কর্তাকে তারা জিজ্ঞাসা করে যে কখন তিনি ছাড়বেন। কর্তা দেশবাসীকে বলেন ” তোড়া ছাড়লেই আমার ছাড়া”।
কর্তা সম্পূর্ন বাস্তব কথাই বলেছেন। আসলে কর্তা তো তাদের ধরে রাখেনি বরং তারাই কর্তাকে ধরে রেখেছে। কর্তা অনেক আগেই গত হয়েছেন, কিছু পুরাতনপন্থী মানুষেরা নবীনের কাছে আত্মসমর্পন করবেন না বলেই কর্তার ভূতকে আকড়ে ধরে পড়েছিল। কর্তার ভূতের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। জ্ঞানবিমুখ, ধর্মভীরু মানুষের মনেই তার আধিপত্য। মনোবিজ্ঞান অনুসারে, মানুষের ভয় থেকেই ভুতের জন্ম হয় এবং মানুষ তাকে পোষণ করে। কর্তার ভূত প্রসঙ্গে একই কথা প্রযোজ্য।
২) ‘তারা ভয়ঙ্কর সজাগ আছে।’- কাদের ‘ভয়ঙ্কর সজাগ’ থাকার কথা বলা হয়েছে ? তারা এমন ‘ভয়ঙ্কর সজাগ’ কেন ?
উত্তর:পৃথিবীর অন্য দেশগুলির ‘ভয়ঙ্কর সজাগ’ থাকার কথা বলা হয়েছে।
∆ পৃথিবীর অন্য দেশগুলি ভূতগ্রস্থ নয়। কাজেই সেখানে জেলের কর্তা ভূতের নায়েব নয়।
সেখানে ঘানি ঘোরে। তা থেকে তেল বেরোয়। সে তেল বুকের রক্ত পিষে বেরোয় না।
ভূতের খর্পরে ঢেলে দেওয়ার জন্য নিংড়ানো হয় না। ঘানি চালিয়ে তৈলবীজ থেকে তৈরি তেল দেশের ভবিষ্যতের রথের চাকা ঘোরানোর জন্য,সচল রাখবার জন্য ব্যবহার করা হয়। সেখানকার মানুষ এদেশের ভূতগ্রস্থ মানুষের মতো নিষ্কর্মা,
চেতনাহীন ও সজাগহীন নিশ্চেষ্ট নয়। তারা খুবই সচেতন, খুবই সজাগ। তারা সচেতন ও সজাগ বলেই পরাধীন ভূতগ্রস্থতা তাদের গ্রাস করতে পারেনি।তাদের অন্ন হোক, বস্ত্র হোক, ঘাটতি নেই। শাসকের দয়া ও করুণার ওপর তা নির্ভর করে না।সেখানে ভূতের বাড়াবাড়ি তথা শাসকের অধিপত্য বাড়লেও মানুষ অস্থির হয়ে ওঠে।
ভূত ছাঁড়ানোর ওঝার খোঁজাখুঁজি শুরু করে – এমনই সজাগ ও সচেতন। কিন্তু অমন ঘটনা সেখানে ঘটে না। যেহেতু তারা ভয়ংকর সজাগ।
৩) ‘কর্তার ভূত’- কি নিছক ভূতের গল্প, নাকি রাজনৈতিক রূপক কাহিনি ? ব্যাখ্যাসহ লেখাে।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘লিপিকা’ গ্রন্থে ‘কর্তার ভূত’ রচনাটি আসলে একটি কথিকা।
এর মধ্য দিয়ে লেখক মানুষের চিরকালীন অভ্যাসের সমালােচনা করেছেন। ভূতের কথা বললেও এটি কোনাে ভৌতিক রহস্যময় গল্প নয়। এটি নিছক কোনাে রাজনৈতিক রূপক কাহিনিও নয়। এখানে রূপকের আড়ালে লেখক মানুষের ওপর চেপে বসা চিরকালীন কুসংস্কারের তীব্র সমালােচনা করেছেন।
∆ ‘ভূত’ বলতে এখানে অতীতকে বােঝানাে হয়েছে। অতীতকাল থেকেই আদিম মানুষ গােষ্ঠীবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত। তখন তাদের যাবতীয় ভাবনাচিন্তা তারা অর্পণ করেছিল দলের প্রাচীন ও নেতাস্থানীয় ব্যক্তির ওপর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্তার মৃত্যু ঘটলেও তার ভূত অর্থাৎ অতীত ধারণা এদেশের মানুষকে ছেড়ে যায়নি। সে প্রতি পদে পদে এদের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই জেলখানায় অনেক নিয়মের চাপে পড়ে ঘানি ঘােরাতে ঘােরাতে মানুষ তার তেজ এবং অগ্রগতির পন্থাকে হারিয়ে ফেলে। ভূত বলে প্রকৃত কোনাে বস্তু বা শক্তি কিছুই নেই যাকে অনুভব করা যায়। এটা প্রাচ্যের মানুষের মনে বাসা বেঁধে থাকা এক চিরকালীন ভয়। এই ভয়ই তাকে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে দেয় না। আধুনিক চিন্তাভাবনার পথে এক পা বাড়ালে তার মনের ভয় তাকে বলে ওঠে সে অশুদ্ধ হয়ে জন যাবে, প্রকৃত প্রাচীন ঐতিহ্যের গর্বকে হারিয়ে ফেলবে।
……………
এই গল্পের উত্তরগুলির পিডিএফ ডাউনলোড করে নাও👇👇👇
আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇
বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান
বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান
গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।
বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা
আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান
গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান