অমৃতলাল বসু (১৮৫৩-১৯২৯) Amrita Lal Basu
বাংলা নাটকের ইতিহাসে অমৃতলাল বসুর অবদান আলোচনা করো।
অমৃতলাল বসু (১৮৫৩-১৯২৯) ব্রিটিশ আমলের বিখ্যাত বাঙালি নাট্যকার ও নাট্য অভিনেতা । তার জন্ম হয়েছিল কলকাতায় । নাটক রচনা এবং নাট্যাভিনয়ে সাফল্যের জন্য জনসাধারণের কাছে ‘রসরাজ’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন তিনি । গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফীর উৎসাহে অমৃতলাল ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল অপেরা কোম্পানি, বেঙ্গল, স্টার, মিনার্ভা ইত্যাদি রঙ্গমঞ্চে একাধারে সুনামের সাথে অভিনয় করেন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘জগত্তারিণী’ পদক লাভ করেন অমৃতলাল বসু । তিনি মোট চল্লিশটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার মধ্যে চৌত্রিশটি হলো নাটক । তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে ‘তরুলতা’ (১৮৯১), ‘বিমাতা’ বা ‘বিজয় বসন্ত’ (১৮৯৩), ‘হরিশচন্দ্র’ (১৮৯৯), এবং ‘আদর্শ বন্ধু’ (১৯০০) ইত্যাদি । অমৃতলাল প্রহসন রচনাতে সিদ্ধহস্ত হলেও তিনি এক্ষেত্রে রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন । নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করে তিনি প্রহসন রচনা করেন । সমান ভাবেই তিনি প্রহসনে নিচু জাতির ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্রুপ করেন । এছাড়া ‘কালাপানি’ প্রহসনে হিন্দুদের সমুদ্রযাত্রা, ‘বাবু’ প্রহসনে দেশের প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্রহ্মসমাজকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেন ।
ইংল্যান্ডের যুবরাজের আগমন উপলক্ষে উকিল জগদানন্দের বাড়িতে অনুষ্ঠিত ঘটনাকে ব্যঙ্গ করে রচিত নাটক পরিচালনার জন্য আদালতে শাস্তি পান । এই ব্যাপারে সরকার মঞ্চাভিনয়ের জন্য ১৮৭৬ সনে ন্যাট্যাভিয়ান অ্যাক্ট আইন চালু করেন ।
প্রহসন রচনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত । তার কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য প্রহসন হল: ‘তাজ্জব ব্যাপার’ , ‘কালাপানি’ , ‘বাবু’ , ‘একাকার’ , ‘চোরের উপর বাটপারি’ (১৮৭৬), ‘তিলতর্পণ’ (১৮৮১), ‘ডিসমিস’ , (১৮৮৩) ‘ চাটুজ্যে ও বাঁড়ুজ্যে’ (১৯০৪) ইত্যাদি।
∆ অমৃতলাল বসুর বিখ্যাত নাটকগুলিকে বেশ কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা :
(ক) সামাজিক নাটক: “হীরকচূর্ণ’ (১৮৭৫), ‘তরুবালা’ (১৮৯১), ‘বিমাতা’ (১৮৯৩), ‘আদর্শবন্ধু’ (১৯০০), ‘খাসদখল’ (১৯১২), নবযৌবন’ (১৯১৪) প্রভৃতি।
(খ) পৌরাণিক নাটক: ‘হরিশচন্দ্র’ (১৮৯৯), ‘যাজ্ঞসেনী’ (১৯২৮) প্রভৃতি।
(গ) ব্যঙ্গরসাত্মক বিদ্রুপ মূলক প্রহসন: “বিবাহ বিভ্রাট’, (১৮৮৪), ‘বাবু’ (১৮৯৪), “বৌমা’ (১৮৯৭), ‘গ্রাম্যবিভ্রাট’ (১৮৯৮), ‘সাবাশ আটাশ’ (১৯০০) ইত্যাদি।
(ঘ) প্রহসনমূলক: চোরের ওপর বাটপাড়ি’ (১৮৭৬), চাটুজ্যে বাড়ুজ্যে’ (১৮৮৬), ‘তাজ্জব ব্যাপার’ (১৮৯০), ‘কৃপনের ধন’ (১৯০০), ‘অবতার’ (১৯০১), ‘ব্যাপিকা বিদায়’ (১৯২৬)।
(ঙ) চিত্রনাট্য: ‘বিলাপ’ (১৮৯১), ‘বৈজয়ন্ত বাস’ (১৯০০)।
(চ) গীতিনাট্য: ‘ব্রজলীলা’ (১৮৮২), ‘যাদুকরী’ (১৯০০)।
∆ অমৃতলাল বসুর নাট্য বৈশিষ্ট্য :
১) অমৃতলাল বসুর নাটকগুলি ছিল ব্যঙ্গ-কৌতুক-রসঘন ।
২) প্রহসন জাতীয় লঘু রসাত্মক নাটক রচনাতেই ছিলেন সিদ্ধহস্ত ।
৩) অমৃতলালের প্রহসনের বিষয়ভাবনা ছিল রুচিশীল সম্পূর্ন ।
(৪) হাস্যরসের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষভাবে স্যাটায়ার’-কে গ্রহণ করেছেন ।
(৫) সমকালীন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ভােগবাদী বাবু সম্প্রদায়কে তিনি ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেছেন ।
৬) বাল্যবিবাহ, বিধবা বিবাহকে তিনি নিন্দা ও বিদ্রুপ করেছেন ।
৭) স্বদেশপ্রীতি ও জাতীয়তাবােধের উন্মেষ অমৃতলাল বসুর নাটকে ধরা পড়ে ।
বিষয় সংযুক্তি 👉( অমৃতলাল বসু (১৮৫৩-১৯২৯, Amrita Lal Basu, বাংলা নাটকের ইতিহাসে অমৃতলাল বসুর অবদান, চোরের উপর বাটপারি, অমৃতলাল বসুর নাটক,)
আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇
নাট্যসাহিত্যে উৎপল দত্তের অবদান
বাংলা নাটকে বাদল সরকারের অবদান
নাট্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান
নাট্যসাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান
নাট্যসাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান
নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্র-র অবদান
নাট্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান
বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান
গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।
বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা
আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান
গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান
কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
কথাসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান