You are currently viewing ক্ষীরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদ | Kshirode Prasad Vidyavinode

ক্ষীরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদ | Kshirode Prasad Vidyavinode

ক্ষীরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদ

বাংলা নাট্যসাহিত্যে ক্ষীরােদপ্রসাদ বিদ্যাবিনােদের  অবদান আলোচনা কর ।

উত্তর : বাংলা নাট্যসাহিত্যের  ইতিহাসে  ক্ষীরােদপ্রসাদ বিদ্যাবিনােদের গুরুত্ব অপরিসীম ।  প্রতিদিন রঙ্গমঞ্চের প্রয়ােজনে  নতুন নাটকের যোগান দিয়ে তিনি একসময়ে দর্শক মহলে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন । ক্ষীরোদপ্রসাদের  নাটকে একাধারে যেমন গিরিশচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলালের প্রভাব পড়েছিল তেমনি ভাবেই রবীন্দ্রনাথেরও প্রভাব লক্ষ্যনীয় তাঁর নাটকে ।  তিনি যে সময়ে নাট্য রচনা শুরু  করেছিলেন সে সময়ে একদিকে যেমন বাংলা রঙ্গমঞ্চে গিরিশচন্দ্রের আধিপত্য ছিল তেমনি অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব লক্ষ্যনীয় ।  রবীন্দ্রনাথের  নাটকে রােমান্টিক ভাব কল্পনার প্রবলতা লক্ষ্য করা যায় । তাঁর প্রথম রচনা ‘ফুলশয্যা’ (১৮৯৪) নাটকে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব স্পষ্ট ।  তবে গিরিশচন্দ্রের প্রভাব   ক্ষীরোদপ্রসাদের উপরে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে । অবশ্য গিরিশচন্দ্রের ভক্তিরসের পরিবর্তে তাঁর নাটকে রােমান্সরই প্রাধান্য অধিক লক্ষ্য করা যায় ।

ক্ষীরােদপ্রসাদ প্রায় পঞ্চাশটি নাটক রচনা করেছিলেন । তাঁর নাটকগুলিকে ঐতিহাসিক, পৌরাণিক, কাল্পনিক, রােমান্টিক,  গীতিনাট্য নানা শ্রেণীতে ভাগ করা যায় । 

তার গীতিনাট্য গুলির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ‘আলিবাবা’ (১৮৯৭) ‘ ‘বরুণা’ (১৯০৮), “কিন্নরী’ (১৯১৮) ইত্যাদি । ‘আলিবাবা’ নাটকের মত জনপ্রিয় নাটক বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাসে বিরল । একমাত্র এই নাটকটির জন্যেই ক্ষীরােদপ্রসাদ বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে  অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন । লঘু তরল ভাবধারার সঙ্গে কৌতুকরস মিলিত হওয়ায় নাটকটি হয়ে ওঠে সর্বসাধারণের উপভােগ্য ।   আবদুল্লা ও মর্জিনা চরিত্র দুটি পেশাগত দিক দিয়ে নিন্দনীয় হলেও বাঙালি হৃদয়ে তারা চিরকালীন স্থান দখল করে নিয়েছে ।  ‘আলিবাবা’ নাটকের  অভিনয় সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ক্ষীরােদপ্রসাদ কিন্নরী, বরুনা প্রভৃতি নাটক রচনা করেন । কিন্নরী নাটকের রােমান্টিকতা, কল্পনা দর্শকের মনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল ।

ক্ষীরােদপ্রসাদের উল্লেখ যোগ্য  পৌরাণিক নাটকগুলি হল –  ‘সাবিত্রী’ (১৯০২) ‘উলুপি’ (১৯০৬), ‘ভী’ (১৯১৩) ‘ নবনারায়ণ’ (১৯২৬), সাবিত্রী নাটকটির মধ্যে নাট্যবৈশিষ্ট্য তেমনভাবে পরিস্ফুট না হলেও  তিনি তার নাট্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন উলপী নাটকে । অর্জুন কর্তৃক পরিত্যক্তা নাগকন্যা উলুপীর কাহিনী নিয়ে  রচিত হয় নাটকটি । উলুপীর চরিত্রের মধ্যে তিনি যে নাটকীয় দ্বন্দ্বের পরিচয় দিয়েছেন তা অত্যন্ত উচ্চমানের । 

   ক্ষীরােদপ্রসাদের পৌরাণিক নাটকগুলির মধ্যে দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যনীয় –

i)  সমসাময়িক অন্যান্য পৌরাণিক নাটকে ভক্তিরসের যে প্রাধান্য দেখা যায়, ক্ষীরােদপ্রসাদের নাটকে তার লেশমাত্র নেই । সেদিক থেকে তাঁর নাটক গিরিশচন্দ্রের চেয়ে উন্নততর ।

ii)  পৌরাণিক চরিত্র গুলির মধ্যে তিনি আধুনিক মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বের প্রতিফলন ঘটিয়ে ছিলেন । 

সংলাপ রচনাতেও ক্ষীরােদ প্রসাদ রবীন্দ্রনাথের পয়ার এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দের অনুসরণ করেন । তাঁর ঐতিহাসিক নাটক গুলি হল –

“বঙ্গের প্রতাপাদিত্য’ (১৯০৩) ‘পদ্মিনী’ (১৯০৬) ‘চাদবিবি’ (১৯০৭), ‘ নন্দকুমার’ (১৯০৭) ‘অশােক’ (১৯০৮) ‘বঙ্গে রাঠোর’ (১৯১৭) ‘আলমগীর’ (১৯২১) ইত্যাদি ।  নাটকগুলি ইতিহাস কেন্দ্রিক । স্বাদেশিক আন্দোলনের পটভূমিকায় রচিত হওয়ায় সে সময়ে দারুণ উন্মাদনার সৃষ্টি করেছিল এই নাটক গুলি । স্বাধীনতাকামী বীর যােদ্ধারূপে এবং সংগ্রামী বীরপুরুষরূপে  প্রতাপাদিত্যকে উপস্থাপিত করা হয়েছে এই নাটকে । তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে নাট্যকার দেশানুরাগের বাণী প্রচার করেছেন সর্ব সাধারণের উদ্দেশ্যে ।  শিল্পরীতির দিক দিয়ে বিচার করলে নাটকটিকে রসােত্তীর্ণ বলা যায় না, একদিকে স্বদেশী আন্দোলনের আবেগ ও উচ্ছ্বাস অন্যদিকে অনৈতিকহাসিক ঘটনা ও চরিত্রের অবতারণা নাটকটির শিল্পগুণকে ব্যাহত করেছে ।

ক্ষীরােদপ্রসাদ দ্বিজেন্দ্রলালের মতাে প্রতিভাবান বা গিরিশচন্দ্রের মতাে অসাধারণ জনপ্রিয় নাট্যকার ছিলেন না ঠিকই, কিন্তু রঙ্গমঞ্চের প্রয়ােজনে বিভিন্ন ধরনের নাটক লিখে বাংলা নাটকের কাল-প্রবাহকে তিনি সঞ্জীবিত রেখেছিলেন । এবং নিজেকে  একজন মর্যাদাসম্পন্ন নাট্যকার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন সে বিষয়ে সন্দেহ  নেই।

বিষয় সংযুক্তি👉( বাংলা নাট্যসাহিত্যে ক্ষীরােদপ্রসাদ বিদ্যাবিনােদের  অবদান,  ক্ষীরােদপ্রসাদের পৌরাণিক নাটক, ক্ষীরােদপ্রসাদ বিদ্যাবিনােদ, Kshirode Prasad Vidyavinode, ক্ষীরােদপ্রসাদ বিদ্যাবিনােদের নাটক, )

আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇

নাট্যসাহিত্যে উৎপল দত্তের অবদান

বাংলা নাটকে অমৃতলাল বসুর অবদান

বাংলা নাটকে মন্মথ রায়ের অবদান

নাট্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান

নাট্যসাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান

নাট্যসাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান

নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্র-র অবদান

নাট্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান

বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান

গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।

বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা

আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান

গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান

কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান

বাংলা উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা সাহিত্যে রাজশেখর বসু(পরশুরাম)-এর অবদান আলোচনা করো।

Leave a Reply