You are currently viewing বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ | বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ | বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস

বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ

বাংলা সাহিত্যের বয়স কত ? এর উত্তর দিয়েছেন মহামহপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় তাঁর গ্রন্থে। গ্রন্থটির নাম “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা” । অর্থাৎ প্রায় হাজার বছর ধরে বাংলা সাহিত্য রচিত হয়ে আসছে। কিন্তু এই হাজার বছরের সাহিত্যের ইতিহাস সােজা-সরল পথে অগ্রসর হয়নি। যুগ ও রুচির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসেরও পরিবর্তন হয়েছে বার বার। তাই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আলােচনা করতে গিয়ে সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতারা কয়েকটি যুগ-বিভাগকে মেনে নিয়েছেন। এই যুগ-বিভাগ ছাড়া সাহিত্যের ইতিহাস আলােচনা করা যায় না। ভাষাগত পরিবর্তনের সূত্রকে অবলম্বন করে এবং সাহিত্যের গতি প্রকৃতি বিচার করে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে তিনটি যুগে ভাগ করা যায়। যথা –

(১) আদিযুগ 

(২) মধ্যযুগ  

(৩) আধুনিক যুগ। 

তবে এই যুগবিভাগ অঙ্কের নিখুঁত নিয়মে করা যায় না। বিভিন্ন যুগে বাংলা সাহিত্য নানা শাখা উপশাখায় বিভক্ত হয়েছে। সেই সমস্ত শাখা প্রশাখার পরিচয় পেতে হলে এই যুগ-বিভাগের মাধ্যমেই অগ্রসর হতে হবে। 

(১) আদিযুগঃ খ্রিস্টিয় দশম শতাব্দ থেকে বাংলা সাহিত্যের শুরু। ত্রয়ােদশ শতাব্দীতে (১২০৩ খ্রি:) বাংলা দেশে তুর্কী আক্রমণ ঘটে। দশম শতাব্দ থেকে তুর্কী আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত কাল-পরিধিকে বাংলা সাহিত্যের আদিযুগ বলে অভিহিত করা হয়। এই যুগে বাংলা সাহিত্যের একমাত্র প্রামাণিক নিদর্শন চযাচর্যবিনিশ্চয়’ বা ‘চর্যাপদ।  

(২) মধ্যযুগঃ খ্রিস্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দ পর্যন্ত কাল-পরিধিকে এই যুগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। খ্রিস্টিয় ত্রয়ােদশ শতাব্দ থেকেই মধ্যযুগ শুরু হওয়ার কথা, কিন্তু তা হয়নি। এয়ােদশ বা চতুর্দশ শতাব্দে বাংলা সাহিত্যে নতুন কিছু সৃষ্টি হয়নি। যদিও বা হয়ে থাকে তুর্কি আক্রমণের ধ্বংস লীলায় তা বিনষ্ট হয়ে গেছে। তাই ত্রয়ােদশ ও চতুর্দশ শতাব্দকে বাংলা সাহিত্যে বন্ধ্যা যুগ বা অন্ধকার যুগ বলা হয়ে থাকে। সুতরাং পঞ্চদশ শতাব্দ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দ পর্যন্ত – এই দীর্ঘ চারশ বছরের ইতিহাসকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মধ্যযুগ বলে অভিহিত করা হয়। এই যুগ বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধির যুগ। 

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যকে আবার তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। এই পর্ব-ভাগ করা হয়েছে অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন মহাপ্রভুর চৈতন্যদেবের আবির্ভাব কালকে কেন্দ্র করে। যথা : 

(ক) প্রাক্-চৈতন্য পর্ব 

(খ) চৈতন্য-পর্ব 

(গ) চৈতন্যোত্তর পর্ব। 

(ক) প্রাক-চৈতন্য পর্বঃ খ্রিস্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দের শেষ ভাগ পর্যন্ত (যেহেতু ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে চৈতন্যদেবের জন্ম) রচিত বাংলা সাহিত্যকে প্রাক্ চৈতন্য পর্বের বা যুগের সাহিত্য বলা হয়। এই যুগে রচিত হয়েছে বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’, চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতির পদাবলী, কৃত্তিবাসের ‘শ্রীরাম পাঁচালী’ কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দীর মহাভারতের অনুবাদ, মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ এ বিজয় গুপ্ত, নারায়ণ দেব ও বিপ্রদাস পিপিলাইএর মনসামঙ্গল কাব্য।

(খ) চৈতন্য পর্বঃ খ্রিস্টিয় ষােড়শ শতাব্দ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘চৈতন্য যুগ’ বলে অভিহিত করা হয়। চৈতন্যদেব নিজে কোন সাহিত্য রচনা করেন নি, কিন্তু তার দিব্য আবির্ভাব বাংলা সাহিত্যকে এত বেশি প্রভাবিত করেছিল, এত বেশি সমৃদ্ধ করেছিল যে, ষােড়শ শতাব্দকে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করা হয়। অনেকে একে ‘চৈতন্য রেনেসাঁসের’ যুগ বলেও অভিহিত করে থাকেন। চৈতন্য জীবনী কাব্য এবং বৈষ্ণব পদাবলি এই যুগের বিশিষ্ট সম্পদ। বহু মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল কাব্য এই যুগে রচিত হয়। চণ্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি মুকুন্দরামের আবির্ভাব এই শতকেই। চৈতন্য জীবনীকার কৃষ্ণদাস কবিরাজের জন্ম এই যুগেই।

(গ) চৈতনােত্তর পর্বঃ সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দ মধ্য যুগের ইতিহাসে চৈতন্যোত্তর পর্ব বা চৈতন্যোত্তর যুগ নামে অভিহিত। বিভিন্ন মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল কাব্য, রামায়ণ ও মহাভারতের অনুবাদ, অজস্র বৈষ্ণব ও শাক্তপদ, আরাকান রাজসভার মুসলমান কবিদের প্রণয়মূলক উপাখ্যান, গাথা সাহিত্য, বাউল গান প্রভৃতি এই যুগের সৃষ্টি। সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন ও কমলাকান্ত ভট্টাচার্য এবং অন্নদামঙ্গল রচয়িতা ভারতচন্দ্র রায়—এই যুগের তিন বিশিষ্ট কবি প্রতিভা। 

(৩) আধুনিক যুগ : উনবিংশ শতাব্দ থেকে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত রচিত সাহিত্যকে আধুনিক কালের সাহিত্য বলে অভিহিত করা হয়। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের অধ্যাপক এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের দ্বারা রচিত গ্রন্থগুলির দ্বারা আধুনিক যুগের সূত্রপাত ঘটে।

আধুনিক যুগকে আবার চারটি যুগ-পর্যায়ে ভাগ করা যায়। 

(ক) বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রস্তুতি পর্ব 

(খ) প্রাক রবীন্দ্র যুগ  

(গ) রবীন্দ্র যুগ

 (ঘ) রবীন্দ্রোত্তর যুগ

(ক) বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রস্তুতি পর্বঃ ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের অধ্যাপক বৃন্দ ছাড়াও রামমােহনকে এই পর্বের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

(খ) প্রাক রবীন্দ্র যুগঃ ১৮৫০ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই যুগের বিস্তার। (যদিও ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের বয়স হয়েছিল চল্লিশের কাছাকাছি এবং তার বেশ কিছু কাব্য, উপন্যাস ও গল্প এই সময়ের মধ্যে রচিত হয়েছিল তবু রবীন্দ্রপ্রভাব বলতে যা বােঝায় তা তখনও পড়েনি। এই পর্বে আবির্ভূত হয়েছেন বিদ্যাসাগর, প্যারীচাঁদ মিত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহ, বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, বিহারীলাল, দীনবন্ধু, গিরিশচন্দ্র প্রমুখ প্রতিভাবান সাহিত্যিকবৃন্দ।

(গ) রবীন্দ্র যুগঃ এই যুগকে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ অসংখ্য রচনা দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। বহু কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ লিখে বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে পূর্ণ করেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি সত্যেন্দ্রনাথ, যতীন্দ্রনাথ, মােহিতলাল, নজরুলের আবির্ভাব ঘটেছিল। এই সময়ে। শরৎচন্দ্র ও দ্বিজেন্দ্রলালের মতাে বিশিষ্ট প্রতিভাধর শিল্পীরা এই যুগেই তাঁদের জন্য সদি করেছিলেন।

(ঘ) রবীন্দ্রোত্তর যুগঃ ১৯৪১ খৃষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের মহা প্রয়াণের পর সাম্প্রতিকাল পর্যন্ত এর বিস্তার। এই যুগে আবির্ভূত হয়েছেন বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, জীবনানন্দ দাস, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, সমর সেন, সুভাষ মুখােপাধ্যায়, তারাশঙ্কর, মানিক, বিভূতিভূষণ প্রমুখ কবি ও ঔপন্যাসিকগণ। নব নব সাহিত্য সৃষ্টির দ্বারা বাংলা সাহিত্যের বৈচিত্র্যসাধন করেছেন তারা। সত্তর এবং আশির দশকে যারা বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়েছেন তারাও গত কুড়ি বাইশ বছর ধরে আপন আপন প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন এবং বাংলা সাহিত্যের ধারাকে প্রবহমান রাখবার চেষ্টা করেছেন। 

                                               👇বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ 👇 

বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ

[ঋণ স্বীকারঃ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস/ডঃ নিশীথ মুখোপাধ্যায় ] 

আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇

নাট্যসাহিত্যে উৎপল দত্তের অবদান

নাট্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান

নাট্যসাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান

নাট্যসাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান

নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্র-র অবদান

নাট্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান

বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান

গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।

বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা

আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান

গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান

কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান

বাংলা উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা সাহিত্যে রাজশেখর বসু(পরশুরাম)-এর অবদান আলোচনা করো।

Leave a Reply