You are currently viewing বিদ্যাপতি কোথাকার কবি ছিলেন ? তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে তাঁর অবদান আলোচনা করুন ।

বিদ্যাপতি কোথাকার কবি ছিলেন ? তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে তাঁর অবদান আলোচনা করুন ।

১। বৈষ্ণব পদ কাকে বলে ? 

উত্তরঃ মধ্যযুগে রচিত রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলাকে কেন্দ্র করে রাধা ভাবে ভাবিত গীতিধর্মী রচনাগুলিকে বৈষ্ণব পদ বলে। 

২। বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস কাকে বলে ? 

উত্তরঃ বৈষ্ণব শাস্ত্রে উল্লিখিত যে পাঁচটি রসপর্যায়ে সাধনা করা হয় সেই রসপর্যায়গুলিকেই বলা হয় বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস। সেই পাঁচটি রস হল- শান্ত , দাস্য , সখ্য, বাৎসল্য এবং মধুর। 

৩। প্রাকচৈতন্য যুগের দু’জন ও চৈতন্যোত্তর যুগের দুজন বৈষ্ণব পদকর্তার পরিচয় দাও। 

উত্তরঃ  প্রাকচৈতন্য যুগের দু’জন বৈষ্ণব পদকর্তা হলেন – ক) বিদ্যাপতি ও খ) চণ্ডীদাস ।  

চৈতন্যোত্তর কালের দু’জন বৈষ্ণব পদকর্তা হলেন– গ) গোবিন্দ দাস ও ঘ) জ্ঞানদাস। 

৪। বিদ্যাপতি কোথাকার কবি ছিলেন ? তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে তাঁর অবদান আলোচনা করুন ।  

উত্তরঃ বিদ্যাপতি মিথিলার রাজসভার কবি ছিলেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয়  আলোচনা করা হল-    

বিদ্যাপতি

জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ  প্রাকচৈতন্য যুগের বৈষ্ণব পদপকর্তা বিদ্যাপতি ঠাকুর চতুর্দশ শতকের শেষভাগে আনুমানিক ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দে বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলায় (বর্তমানে মধুবনী মহকুমার অন্তর্গত) বিসফি গ্রামে এক বিদ্বান ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কুলগ্রন্থের মতানুসারে বিদ্যাপতির পিতা গণপতি বলে উল্লেখ করা হলেও, বিদ্যাপতির নিজের কোন লেখায় বা কোন প্রামাণিক সূত্র থেকে এর সমর্থন মেলে নি। বিদ্যাপতির কুলপদবী ‘ঠক্কুর’। তিনি ছিলেন  পঞ্চোপাসক (অর্থাৎ শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌর ও গাণপত্য) হলেও হর-গৌরীর প্রতি তাঁর ভক্তি ছিল অকৃত্রিম। বিদ্যাপতি মৈথিলি ভাষায় পদ রচনা করেন। 

মিথিলার কবি হওয়া সত্ত্বেও বাংলায় জনপ্রিয়তার কারণঃ  প্রাক্-চৈতন্যযুগের কবি বিদ্যাপতি অবাঙালি হয়েও বাংলা সাহিত্যে অক্ষয় আসন লাভ করেন। মিথিলা তখন ন্যায়ের প্রধান পাঠকেন্দ্র। বাঙালি ছাত্ররা সেখানে ন্যায় অধ্যয়ন করতে গিয়ে বিদ্যাপতির পদাবলি দ্বারা এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, স্বদেশে বাংলায় ফিরে আসার পর তাদের মুখে মুখেই  বিদ্যাপতির গানগুলি ছড়িয়ে পড়ে। স্বয়ং চৈতন্যদেব নাকি তাঁর পদ আশ্বাদন করতেন।  এর ফলেই একসময় বিদ্যাপতির পদগুলি বাঙলায় স্থায়ী আসন লাভ করে এবং বিদ্যাপতিও ক্রমে বাংলার কবি হয়ে ওঠেন। এ প্রসঙ্গে খগেন্দ্রনাথ মিত্র বলেন, “বিদ্যাপতি যে মৈথিল লোকে তাহা একরূপ ভুলিয়াই গেল। বিদ্যাপতি অনেকের কাছে বাঙালি হইয়া দাঁড়াইলেন।”  এভাবেই ‘মৈথিল কবি’ ক্রমে  ‘অভিনব জয়দেব’ শিরোপায় অভিষিক্ত হয়ে ওঠেন। বিদ্যাপতি মিথিলা রাজ পরিবারের বংশানুক্রমিক পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন এবং বিভিন্ন গ্রন্থও রচনা করেন।  

বিদ্যাপতি রচিত গ্রন্থগুলি সেগুলি হল –

পৃষ্ঠপোষক/ গ্রন্থ / রচনাকাল ক্রমান্বয়ে দেখানো হলঃ  

পৃষ্ঠপোষকগ্রন্থরচনাকাল 
দেবসিংহভূপরিক্রমা ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ।
কীৰ্তিসিংহ কীর্তিলতা ১৪০২-১৪০৪ খ্রিষ্টাব্দ ।
শিবসিংহ পুরুষ পরীক্ষা ও কীর্তিপতাকা  ১৪১০ খ্রিষ্টাব্দ । 
পদ্মসিংহ ও বিশ্বাস দেবী শৈবসর্বস্বহার ও গঙ্গাবাক্যাবলি১৪৩০-৪০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে।
নরসিংহ ও ধীরমতী বিভাগসার ও দানবাক্যাবলি ১৪৪০-৬০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে।  
পুরাদিত্যলিখনাবলি ১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দ 
ভৈরব সিংহ  দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী ১৪৪০-৬০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। 

   বিদ্যাপতির শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদে। বিশেষ করে ‘মাথুর’ ও ‘অভিসার’-এ। তাঁর অভিনবত্ব আছে প্রার্থনা বিষয়ক পদে। এছাড়াও বিদ্যাপতি কিছু হর-পার্বতী বিষয়ক পদ  (যা মহেশবাণী নামে পরিচিত) ও আরও নানা বিষয়ে পদ লিখেছেন। কিন্তু তিনি যে শৈব এ ভাবনাটিই উক্তপদে বেশিমাত্রা প্রকটিত।

বিদ্যাপতির পদগুলির মধ্যে রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলির সংখ্যা পাঁচশোরও বেশি। সংস্কৃত অলঙ্কার শাস্ত্র মেনেই বিদ্যাপতি রাধা-কৃষ্ণের লীলা পর্যায় অঙ্কন করেন। প্রখর বাস্তববোধের অধিকারী বিদ্যাপতির রাধা বয়ঃসন্ধিতে যেমন মধুর, তেমনি ভরা ভাদ্রে বর্ষা-বিরহে বেদনাদীর্ণ।  যেমন- 

          ” এ সখি হামারি দুখক নাহি ওর

           এ ভরা বাদর       মাহ ভাদর

                  শূন্য মন্দির মোর।।”

বিদ্যাপতি, ভক্তি ও আদিরসকে প্রাধান্য দিয়ে শৃঙ্গার রসকে উচ্চতর মহিমায় মহিমান্বিত করেছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় যা ‘বড়ো শক্ত বুঝা, যারে বলে ভালোবাসা, তারে বলে পূজা।’  তাই বিদ্যাপতির ‘প্রার্থনা’ বিষয়ক পদগুলিও একইসঙ্গে অনবদ্য হয়ে উঠেছে। কবি আত্মার অভিব্যক্তি সরাসরি ঘটেছে যা আধুনিক গীতিকবিতার ধর্মকে সুন্দরভাবে প্রকাশ ঘটেছে। যেমন –

     “মাধব, বহুত মিনতি করি তোয়

            দেই তুলসী তিল

     দয়া জনু ছোড়বি মোয়।।”

কবি বিদ্যাপতির এই আর্ত আবেদন যেন বাঙালি ভক্ত হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত – সেই জন্যই বিদ্যাপতি বাঙালি না হয়েও বাঙালির হৃদয়ে অক্ষয় আসন লাভ করেছেন। আর তাই বিদ্যাপতির পদে মোহিত হতেন স্বয়ং চৈতন্যদেবও। যার স্পষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে  ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে– 

১।  “বিদ্যাপতি জয়দেব চণ্ডীদাসের গীত। 

   আস্বাদয়ে রামানন্দ স্বরূপ সহিত।।” 

২। “বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস শ্রীগীতগোবিন্দ।

 এই তিন গীতে করায় প্রভুর আনন্দ।।”  

‘মৈথিল কোকিল’, ‘অভিনব জয়দেব’, দীর্ঘায়ু কবি (সম্ভবতঃ ৮০ বছর) বিদ্যাপতি ঠাকুর পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগে  তথা আনুমানিক ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন। 

বিদ্যাপতির বিখ্যাত কিছু পদ ও সেগুলির রসপর্যায়  

(১) হাথক দরপণ মাথক ফুল (পূর্বরাগ) 

(২) তাতল সৈকত বারিবিন্দু সম (প্রার্থনা) 

(৩) এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর (মাথুর) 

(৪) সখি হে আজ জায়ব মোয়ী (অভিসার)

(৫) অব মথুরাপুর মাধব গেল (মাথুর)

(৬) মাধব বহুত মিনতি করি তোয় (প্রার্থনা)

(৭)পিয়া যব আয়ব এ মঝু গেহে (ভাবোল্লাস) 

(৮) কি কহব রে সখি আনন্দ ওর (ভাবোল্লাস)

(৯) অঙ্কুর তপন তাপে যদি জারব (মাথুর)

(১০) আজু রজনী হাম ভাগে পোহায়লু (ভাবোল্লাস) 

বিদ্যাপতি সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১) বিদ্যাপতি মোট কত জন রাজার পৃষ্ঠপোষকতা পান ?  

উঃ ৬ জন রাজা ও এক জন রানীর। মোট ৭ জনের। 

২) কার অনুরোধে বিদ্যাপতি কাব্যচর্চা শুরু করেন ?

উঃ দেবসিংহ। 

৩)  বিদ্যাপতি কোন কোন ভাষায় কাব্য রচনা করেন ?

উঃ তিনটি ভাষায়। সংস্কৃত, অবহট্ট ও মৈথিলি ।  

৪) বিদ্যাপতি তার অধিকাংশ পদাবলী কোন রাজার রাজ সভায় থাকাকালীন রচনা করেন ?

উঃ শিবসিংহ।

৫) বিদ্যাপতির আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ কোনটি ?

উঃ বিভাগসার।

৬) বিদ্যাপতির কোন সংস্কৃত গ্রন্থের প্রভাব আজও বর্তমান ?

উঃ দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী।

৭) ‘বিদ্যাপতিগোষ্ঠী’ এই বইটি কার লেখা ?

উঃ সুকুমার সেন।

৮)  ব্রজবুলি ভাষা কী ? 

উঃ মৈথিলি ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার মিশ্রণে গড়ে ওঠা এক শ্রুতিমধুর কৃত্রিম ভাষা হল ব্রজবুলি। 

৯)  বিদ্যাপতির লেখা ইতিহাস গ্রন্থ কোনটি ?

উঃ কীর্তিলতা’ ও’ কীর্তিপতাকা’ (অবহট্ট ভাষায় রচনা )।

১০) তিনি কোন গ্রন্থে নিজেকে ‘খেলন কবি’ বলেছেন ?

উঃ ‘কীর্তিলতা’ তে।

১১) বিদ্যাপতিকে ‘অভিনব জয়দেব’ কে আখ্যা দেন ?

উঃ শিব সিংহ।

১২) বিদ্যাপতিকে ‘মৈথিল কোকিল’ আখ্যায়িত করেন কে ?

উঃ রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়।

১৩)“বিদ্যাপতি ভক্ত নহেন, কবি- গোবিন্দদাস যতবড় কবি, ততোধিক ভক্ত” – মন্তব্যটি কার ?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 

১৪) বিদ্যাপতি কে ‘ পঞ্চোপাসক হিন্দু’ বলে কে প্রচার করেন ?

উঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। 

১৫) বিদ্যাপতি রচিত প্রথম গ্রন্থ কী ? 

উঃ ভূপরিক্রমা।

১৬)  বিদ্যাপতি বাঙালী নন একথা কে প্রমাণ বলেন ?

উঃ রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। 

১৭) বিদ্যাপতির পদ প্রথম কে সংগ্রহ করেন ?

উঃ জর্জ গ্রিয়ার্সন।

১৮) বিদ্যাপতির পদের সংখ্যা কত ?

উঃ প্রায় ৯০০ টির মত।

১৯) ‘মহাজন পদাবলী’ পদসংকলনটি কার ?কে কবে প্রকাশ করেন ?

উঃ বিদ্যাপতির রচনা । জগবন্ধু ভদ্র ১৮৭৪ খ্রি: প্রকাশ করেন।

২০। বিদ্যাপতির ভাষাকে বিকৃত-মৈথিলী কে বলেন ?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

এই সমগ্র পাঠটির PDF Download করতে হলে এখানে ক্লিক করুন। 👇

…………………………………………………………………………. 

আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇

নাট্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান

নাট্যসাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান

নাট্যসাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান

নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্র-র অবদান

নাট্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান

বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান

গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।

বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা

আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান

গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান

কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান

বাংলা উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা সাহিত্যে রাজশেখর বসু(পরশুরাম)-এর অবদান আলোচনা করো।

Leave a Reply