You are currently viewing প্রশ্নোত্তরে বৈষ্ণবপদ  ও বৈষ্ণব  পদকর্তা || বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাস PDF

প্রশ্নোত্তরে বৈষ্ণবপদ  ও বৈষ্ণব  পদকর্তা || বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাস PDF

প্রশ্নোত্তরে বৈষ্ণবপদ  ও বৈষ্ণব  পদকর্তা 

নিচে PDF Link দেওয়া আছে।

(বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাস) 

বৈষ্ণব রসশাস্ত্র বিষয়ক তথ্য 

১. বৈষ্ণব পদাবলি বলতে কি বোঝায় ? এর বিষয়বস্তু কী ? 

উত্তরঃ রাধাকৃষ্ণের লীলা বিষয়ক পদকেই ‘বৈষ্ণব পদাবলি’ বলে ।

এর বিষয়বস্তু হল রাধাকৃষ্ণের প্রেম।

২। বৈষ্ণব মতে কৃষ্ণ ও রাধিকা কে ? রাধা শব্দটি প্রথম কোথায় ব্যবহৃত হয়েছিল ?

উত্তর:- বৈষ্ণব মতে কৃষ্ণ হলেন পরমাত্মা ও রাধিকা হলেন জীবাত্মা। ‘রাধা’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দে’। 

৩. বৈষ্ণবপদাবলি সাহিত্যকে কটি পর্যায়ে ভাগ করা হয় ? পর্যায়গুলি কী কী ? 

উত্তর:-  বৈষ্ণবপদাবলি সাহিত্যকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়।

সেগুলি হল – চৈতন্যপূর্ব, চৈতন্য সমসাময়িক ও চৈতন্যোত্তর।

৪. কোথায় রাধাকৃষ্ণের কাহিনির প্রথম কাব্যরূপ পাওয়া যায় ?

উত্তর:- জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যে প্রথম রাধাকৃষ্ণ কাহিনির কাব্যরূপ পাওয়া যায়।

৫. প্রাকচৈতন্য,চৈতন্য সমসাময়িক ও চৈতন্য পরবর্তী যুগের দুজন করে শ্রেষ্ঠ কবির নাম লিখ।

উত্তর:- প্রাকচৈতন্য যুগের দু’জন শ্রেষ্ঠ কবি – চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি।

 চৈতন্য সমসাময়িকযুগের কবির নাম হলঃ মুরারী গুপ্ত ও নরহরি সরকার এবং 

 চৈতন্য পরবর্তী যুগের দু’জন শ্রেষ্ঠ দু’জন শ্রেষ্ঠ কবি – জ্ঞানদাস ও গোবিন্দ দাস।

৬. বৈষ্ণবপদাবলি সাহিত্যে পূর্ণ বিকাশ কখন ঘটে ?

 উত্তর:- বৈষ্ণবপদাবলি সাহিত্যে পূর্ণ বিকাশ ঘটে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের পরে। এই সময় পদাবলিতে যে নতুন বিষয়ের সংযোজন ঘটে সেটি হল, গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ ।

৭. গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের মতে শ্রীচৈতন্য কে ? তাঁর যুগল বিগ্রহের স্বরূপই বা কী ? 

উত্তর:- গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের মতে শ্রীচৈতন্য রাধাকৃষ্ণের যুগল বিগ্রহ।

মহাপ্রভুর যুগল বিগ্রহের স্বরূপ হল চৈতন্যদেব অন্তরঙ্গে কৃষ্ণ, বহিরঙ্গে রাধা।

৮. প্ৰাক্‌চৈতন্য ও চৈতন্য পরবর্তী কবিদের মূল পার্থক্য কী ? 

উত্তর:-প্রাকচৈতন্য যুগের কবিরা বৈষ্ণব না হয়েও বৈষ্ণবপদ রচনা করেছেন, কিন্তু চৈতন্য পরবর্তী কবিরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়ে বৈষ্ণবপদ রচনা করেছেন ।

৯. সংক্ষেপে গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ ও গৌরচন্দ্রিকার পদ বলতে কী বোঝায় ? এই পর্যায়ের বিশিষ্ট কবির নাম লিখ।  

উত্তর:- গৌরাঙ্গের লৌকিক জীবনকে কেন্দ্র করে রচিত যে সমস্ত পদ এককথায় সেগুলিকে গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ বলা হয় । অন্যদিকে গৌরাঙ্গের ভাব জীবনকে কেন্দ্র করে রচিত পদগুলি হল- গৌরচন্দ্রিকার পদ । মনে রাখতে হবে সমস্ত গৌরচন্দ্রিকার পদ গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ হলেও সমস্ত গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ গৌরচন্দ্রিকার পদ নয়।

এই পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কবি হলেন – গোবিন্দ দাস, অন্যান্য বিশিষ্ট কবি হলেন বলরাম দাস,

গোবিন্দ ঘোষ, মাধব ঘোষ, বাসু ঘোষ এবং রাধামোহন ঠাকুর ।

১০. অভিসার কাকে বলে ? এই পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি কে ? অভিসারের একটি পদের নাম লিখ।  

উত্তর:- অভিসরণ বা উভয়মুখী চলা অর্থেই ‘অভিসার’ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। নায়িকার

উদ্দেশ্যে নায়কের কিংবা নায়কের উদ্দেশ্যে নায়িকার সংকেত কুঞ্জে মিলনের যে যাত্রা তাকে

অভিসার  বলে। এই পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি গোবিন্দ দাস।

‘কন্টক গাড়ি কমল সম পদতল’ – পদটি হল অভিসার পর্যায়ের।

১১. মান কাকে বলে ?

উত্তর:- নায়ক নায়িকা যেখানে পরস্পরের প্রতি অনুরক্ত এবং কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও যে বিশেষ মানসিক অবস্থায় (নায়িকার মনে সামান্য কারণে ঈর্ষার সঞ্চার হয় সেহেতু নায়কের প্রতি বিরূপ আচরণ) উভয়ের মিলনে বাধা জন্মায় তাই হল মান।

১২. মাথুর কাকে বলে ?

উত্তর:- কৃষ্ণের মথুরা গমনে রাধিকার মনে এবং সমগ্র বৃন্দাবনে যে অন্ধকার সঞ্চারিত হয়েছিল

তাই মাথুর বিরহের পদগুলির বিষয় অর্থাৎ মাথুর শ্রীকৃষ্ণের মথুর প্রবাস বিষয়ের

বিপ্রলম্ভশৃঙ্গারের পদ। মাথুর বিরহেই সৃষ্টির আগুন জ্বালা যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছে বিরহিনী

নায়িকার মন।

১৩. দু’জন মুসলমান বৈষ্ণব পদকর্তার নাম লিখ।

উত্তর:- সৈয়দ মুর্তজা এবং নাসির মামুদ হলেন মুসলমান বৈষ্ণব পদকর্তা।

১৪. ‘গৌরচন্দ্রিকা’ শব্দের অর্থ কী ? 

উত্তর:- ‘গৌর’ অর্থাৎ গৌরাঙ্গ অথবা চৈতন্যদেব এবং ‘চন্দ্রিকা’ অর্থে ভণিতাকেই বোঝানো হয়।

সামগ্রিকভাবে ‘গৌরচন্দ্রিকা’ অর্থে ‘ভূমিকা’ শব্দটিও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বৈষ্ণবপদাবলিতে গৌরচন্দ্রিকা শব্দের অর্থ — গৌর রূপ চন্দ্রের কিরণ ।

১৫. পূর্বরাগ কাকে বলে ? এর শ্রেষ্ঠ কবি কে ?

উত্তর:-‘’উজ্জ্বল নীলমণি’ গ্রন্থে বলা হয়েছে-

 “রতির্যা সঙ্গমাৎ পূর্বং দর্শন শ্রবণাদিজা।

তয়োরুন্মীলতি প্রাজ্ঞৈঃ পূর্বরাগঃ স উচ্যতে।।”

অর্থাৎ মিলনের পূর্বে পরস্পরের দর্শন শ্রবণ ইত্যাদির দ্বারা নায়ক নায়িকার চিত্তে যে অনুরাগ

জন্মে তাকেই পূর্বরাগ বলে। এর শ্রেষ্ঠ কবি চণ্ডিদাস।

১৬. আক্ষেপানুরাগ ও প্রেমবৈচিত্ত কাকে বলে ?  

উত্তর:- প্রেমবৈচিত্ত ও আক্ষেপানুরাগ এই দুইয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয়ের  উপজীব্য প্রেম । যখন নায়িকার অন্তরে প্রেম জাগ্রত কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনুকূল নয় বলে মিলন সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় নায়িকার মনে যে আক্ষেপ তাকেই বলে আক্ষেপানুরাগ। অন্যদিকে প্রেমের গভীরতা হেতু মিলনের মধ্যেও গভীর বিরহ বোধের অন্য নাম প্ৰেম বৈচিত্ত। চণ্ডীদাস লেখেন – “দুহু ক্রোড়ে দুহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া”।  

কয়েকজন বিখ্যাত বৈষ্ণব পদকর্তার পরিচয় 

(বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাস) 

বিদ্যাপতি

প্রশ্নঃ পদকর্তা বিদ্যাপতির পরিচয় দিয়ে তাঁর অবদান সম্পর্কে লিখ। 

উত্তরঃ জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ  প্রাকচৈতন্য যুগের বৈষ্ণব পদপকর্তা বিদ্যাপতি ঠাকুর চতুর্দশ শতকের শেষভাগে আনুমানিক ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দে বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলায় (বর্তমানে মধুবনী মহকুমার অন্তর্গত) বিসফি গ্রামে এক বিদ্বান ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কুলগ্রন্থের মতানুসারে বিদ্যাপতির পিতা গণপতি বলে উল্লেখ করা হলেও, বিদ্যাপতির নিজের কোন লেখায় বা কোন প্রামাণিক সূত্র থেকে এর সমর্থন মেলে নি। বিদ্যাপতির কুলপদবী ‘ঠক্কুর’। তিনি ছিলেন  পঞ্চোপাসক (অর্থাৎ শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌর ও গাণপত্য) হলেও হর-গৌরীর প্রতি তাঁর ভক্তি ছিল অকৃত্রিম। বিদ্যাপতি মৈথিলি ভাষায় পদ রচনা করেন। 

মিথিলার কবি হওয়া সত্ত্বেও বাংলায় জনপ্রিয়তার কারণঃ  প্রাক্-চৈতন্যযুগের কবি বিদ্যাপতি অবাঙালি হয়েও বাংলা সাহিত্যে অক্ষয় আসন লাভ করেন। মিথিলা তখন ন্যায়ের প্রধান পাঠকেন্দ্র। বাঙালি ছাত্ররা সেখানে ন্যায় অধ্যয়ন করতে গিয়ে বিদ্যাপতির পদাবলি দ্বারা এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, স্বদেশে বাংলায় ফিরে আসার পর তাদের মুখে মুখেই  বিদ্যাপতির গানগুলি ছড়িয়ে পড়ে। স্বয়ং চৈতন্যদেব নাকি তাঁর পদ আশ্বাদন করতেন।  এর ফলেই একসময় বিদ্যাপতির পদগুলি বাঙলায় স্থায়ী আসন লাভ করে এবং বিদ্যাপতিও ক্রমে বাংলার কবি হয়ে ওঠেন। এ প্রসঙ্গে খগেন্দ্রনাথ মিত্র বলেন, “বিদ্যাপতি যে মৈথিল লোকে তাহা একরূপ ভুলিয়াই গেল। বিদ্যাপতি অনেকের কাছে বাঙালি হইয়া দাঁড়াইলেন।”  এভাবেই ‘মৈথিল কবি’ ক্রমে  ‘অভিনব জয়দেব’ শিরোপায় অভিষিক্ত হয়ে ওঠেন। বিদ্যাপতি মিথিলা রাজ পরিবারের বংশানুক্রমিক পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন এবং বিভিন্ন গ্রন্থও রচনা করেন।  

বিদ্যাপতি রচিত গ্রন্থগুলি সেগুলি হল –

পৃষ্ঠপোষক/ গ্রন্থ / রচনাকাল ক্রমান্বয়ে দেখানো হলঃ  

পৃষ্ঠপোষকগ্রন্থরচনাকাল 
দেবসিংহভূপরিক্রমা ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ।
কীৰ্তিসিংহ কীর্তিলতা ১৪০২-১৪০৪ খ্রিষ্টাব্দ ।
শিবসিংহ পুরুষ পরীক্ষা ও কীর্তিপতাকা  ১৪১০ খ্রিষ্টাব্দ । 
পদ্মসিংহ ও বিশ্বাস দেবী শৈবসর্বস্বহার ও গঙ্গাবাক্যাবলি১৪৩০-৪০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে।
নরসিংহ ও ধীরমতী বিভাগসার ও দানবাক্যাবলি ১৪৪০-৬০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে।  
পুরাদিত্যলিখনাবলি ১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দ 
ভৈরব সিংহ  দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী ১৪৪০-৬০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। 

   বিদ্যাপতির শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদে। বিশেষ করে ‘মাথুর’ ও ‘অভিসার’-এ। তাঁর অভিনবত্ব আছে প্রার্থনা বিষয়ক পদে। এছাড়াও বিদ্যাপতি কিছু হর-পার্বতী বিষয়ক পদ  (যা মহেশবাণী নামে পরিচিত) ও আরও নানা বিষয়ে পদ লিখেছেন। কিন্তু তিনি যে শৈব এ ভাবনাটিই উক্তপদে বেশিমাত্রা প্রকটিত।

বিদ্যাপতির পদগুলির মধ্যে রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলির সংখ্যা পাঁচশোরও বেশি। সংস্কৃত অলঙ্কার শাস্ত্র মেনেই বিদ্যাপতি রাধা-কৃষ্ণের লীলা পর্যায় অঙ্কন করেন। প্রখর বাস্তববোধের অধিকারী বিদ্যাপতির রাধা বয়ঃসন্ধিতে যেমন মধুর, তেমনি ভরা ভাদ্রে বর্ষা-বিরহে বেদনাদীর্ণ।  যেমন- 

          ” এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর 

           এ ভরা বাদর       মাহ ভাদর

                  শূন্য মন্দির মোর।।”

বিদ্যাপতি, ভক্তি ও আদিরসকে প্রাধান্য দিয়ে শৃঙ্গার রসকে উচ্চতর মহিমায় মহিমান্বিত করেছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় যা ‘বড়ো শক্ত বুঝা, যারে বলে ভালোবাসা, তারে বলে পূজা।’  তাই বিদ্যাপতির ‘প্রার্থনা’ বিষয়ক পদগুলিও একইসঙ্গে অনবদ্য হয়ে উঠেছে। কবি আত্মার অভিব্যক্তি সরাসরি ঘটেছে যা আধুনিক গীতিকবিতার ধর্মকে সুন্দরভাবে প্রকাশ ঘটেছে। যেমন –

     “মাধব, বহুত মিনতি করি তোয়

            দেই তুলসী তিল

     দয়া জনু ছোড়বি মোয়।।”

কবি বিদ্যাপতির এই আর্ত আবেদন যেন বাঙালি ভক্ত হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত – সেই জন্যই বিদ্যাপতি বাঙালি না হয়েও বাঙালির হৃদয়ে অক্ষয় আসন লাভ করেছেন। আর তাই বিদ্যাপতির পদে মোহিত হতেন স্বয়ং চৈতন্যদেবও। যার স্পষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে  ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে– 

১।  “বিদ্যাপতি জয়দেব চণ্ডীদাসের গীত। 

   আস্বাদয়ে রামানন্দ স্বরূপ সহিত।।” 

২। “বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস শ্রীগীতগোবিন্দ।

 এই তিন গীতে করায় প্রভুর আনন্দ।।”  

‘মৈথিল কোকিল’, ‘অভিনব জয়দেব’, দীর্ঘায়ু কবি (সম্ভবতঃ ৮০ বছর) বিদ্যাপতি ঠাকুর পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগে  তথা আনুমানিক ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন। 

বিদ্যাপতির বিখ্যাত কিছু পদ ও সেগুলির রসপর্যায়  

(১) হাথক দরপণ মাথক ফুল (পূর্বরাগ) 

(২) তাতল সৈকত বারিবিন্দু সম (প্রার্থনা) 

(৩) এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর (মাথুর) 

(৪) সখি হে আজ জায়ব মোয়ী (অভিসার)

(৫) অব মথুরাপুর মাধব গেল (মাথুর)

(৬) মাধব বহুত মিনতি করি তোয় (প্রার্থনা)

(৭) পিয়া যব আয়ব এ মঝু গেহে (ভাবোল্লাস) 

(৮) কি কহব রে সখি আনন্দ ওর (ভাবোল্লাস)

(৯) অঙ্কুর তপন তাপে যদি জারব (মাথুর)

(১০) আজু রজনী হাম ভাগে পোহায়লু (ভাবোল্লাস) 

বিদ্যাপতি সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১) বিদ্যাপতি মোট কত জন রাজার পৃষ্ঠপোষকতা পান ?  

উঃ ৬ জন রাজা ও এক জন রানীর। মোট ৭ জনের। 

২) কার অনুরোধে বিদ্যাপতি কাব্যচর্চা শুরু করেন ?

উঃ দেবসিংহ। 

৩)  বিদ্যাপতি কোন কোন ভাষায় কাব্য রচনা করেন ?

উঃ তিনটি ভাষায়। সংস্কৃত, অবহট্ট ও মৈথিলি ।  

৪) বিদ্যাপতি তার অধিকাংশ পদাবলী কোন রাজার রাজ সভায় থাকাকালীন রচনা করেন ?

উঃ শিবসিংহ।

৫) বিদ্যাপতির আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ কোনটি ?

উঃ বিভাগসার।

৬) বিদ্যাপতির কোন সংস্কৃত গ্রন্থের প্রভাব আজও বর্তমান ?

উঃ দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী।

৭) ‘বিদ্যাপতিগোষ্ঠী’ এই বইটি কার লেখা ?

উঃ সুকুমার সেন।

৮)  ব্রজবুলি ভাষা কী ? 

উঃ মৈথিলি ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার মিশ্রণে গড়ে ওঠা এক শ্রুতিমধুর কৃত্রিম ভাষা হল ব্রজবুলি। 

৯)  বিদ্যাপতির লেখা ইতিহাস গ্রন্থ কোনটি ?

উঃ কীর্তিলতা’ ও’ কীর্তিপতাকা’ (অবহট্ট ভাষায় রচনা )।

১০) তিনি কোন গ্রন্থে নিজেকে ‘খেলন কবি’ বলেছেন ?

উঃ ‘কীর্তিলতা’ তে।

১১) বিদ্যাপতিকে ‘অভিনব জয়দেব’ কে আখ্যা দেন ?

উঃ শিব সিংহ।

১২) বিদ্যাপতিকে ‘মৈথিল কোকিল’ আখ্যায়িত করেন কে ?

উঃ রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়।

১৩)“বিদ্যাপতি ভক্ত নহেন, কবি- গোবিন্দদাস যতবড় কবি, ততোধিক ভক্ত” – মন্তব্যটি কার ?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 

১৪) বিদ্যাপতি কে ‘ পঞ্চোপাসক হিন্দু’ বলে কে প্রচার করেন ?

উঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। 

১৫) বিদ্যাপতি রচিত প্রথম গ্রন্থ কী ? 

উঃ ভূপরিক্রমা।

১৬)  বিদ্যাপতি বাঙালী নন একথা কে প্রমাণ বলেন ?

উঃ রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। 

১৭) বিদ্যাপতির পদ প্রথম কে সংগ্রহ করেন ?

উঃ জর্জ গ্রিয়ার্সন। 

১৮) বিদ্যাপতির পদের সংখ্যা কত ?

উঃ প্রায় ৯০০ টির মত।

১৯) ‘মহাজন পদাবলী’ পদসংকলনটি কার ?কে কবে প্রকাশ করেন ?

উঃ বিদ্যাপতির রচনা । জগবন্ধু ভদ্র ১৮৭৪ খ্রি: প্রকাশ করেন।

২০। বিদ্যাপতির ভাষাকে বিকৃত-মৈথিলী কে বলেন ?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

চণ্ডীদাস 

প্রশ্নঃ পদকর্তা চণ্ডীদাসের পরিচয় দিয়ে তাঁর অবদান সম্পর্কে লিখ। 

উত্তরঃ বৈষ্ণব পদকর্তা চণ্ডীদাসের পরিচয় দিয়ে তাঁর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ  

প্রাকচৈতন্য যুগের বৈষ্ণব বাঙালি পদকর্তা হলেন চণ্ডীদাস।  কৃষ্ণদাস কবিরাজ  ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে চৈতন্যদেবের বিদ্যাপতি, জয়দেব ও চণ্ডীদাসের গীত  আস্বাদনের কথা নির্দেশ করেছেন–

    “বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস শ্রীগীতগোবিন্দ।

     এই তিন গীতে করায় প্রভুর আনন্দ।।”   

সুতরাং এই চণ্ডীদাস যে চৈতন্যপূর্বর্তী এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। অনুমান করা হয় তাঁর জন্ম বীরভূমের নানুরে (মতান্তরে ছাতনা গ্রামে) আনুমানিক ১৪১৭ খ্রিস্টাব্দে। চণ্ডীদাস রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলার পূর্বরাগ, অভিসার, আক্ষেপানুরাগ, মান, বিরহ, ভাবোল্লাস প্রভৃতি পর্যায়ের পদ রচনা করেন, তবে পূর্বরাগের পদেই তাঁর সমধিক কৃতিত্ব। ‘রাধার কি হৈল অন্তরে ব্যথা’- শীর্ষক পদটিতে কৃষ্ণপ্রেমে ব্যাকুল রাধার পরিবার পরিজনের ভীতি ও লোকনিন্দার ঊর্ধ্বে উত্তীর্ণ হয়ে সাধিকা যোগিনীতে পরিণত হন। মরমিয়া কবি চণ্ডিদাসের ভক্ত ও প্রেমিক হৃদয়ের মর্মস্থল নিংড়ানো ভালোবাসার রঙে আঁকা সেই রাধা –

‘’বসিয়া বরলে    থাকয়ে একলে   

        না শুনে কাহারো কথা।।

সদাই ধেয়ানে    চাহে মেঘ পানে 

         না চলে নয়ানতারা।

বিরতি আহারে      রাঙ্গাবাস পরে

        যেমত যোগিনী পারা।”

চণ্ডীদাসের রাধা পূর্বরাগের পদেই পূর্ণযৌবনা।

 ‘এলাইয়া বেণী/ ফুলের গাঁথনি / দেখয়ে খসায়ে চুলি।’  অবেণীবদ্ধ আকুল কৃষ্ণকেশের উপস্থিতিতে চণ্ডিদাস শেষপর্যন্ত রাধাকে সন্ন্যাসের ধূসর পটভূমি থেকে যৌবনের বর্ণাঢ্য রাজ্যে নিয়ে আসেন। কিন্তু, সেখানে তার ভাবনা ইন্দ্রিয়বোধে পর্যবসিত হয় না। রাধার ইন্দ্রিয়বোধ গভীরতম প্রেমপ্রত্যয়ের মধ্যে আত্মহারা হয়। কবি তাই বলেন — 

     “এ ছার রসনা মোর হইল কি বামরে।

    যার নাম নাহি লই লয় তার নাম রে।।”

রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শের জগৎ তাকে আকৃষ্ট করেনি, একটি বিশুদ্ধ সৌন্দর্য ও অনন্ত প্রেমের কুহেলি আচ্ছন্ন রেখাহীন চেতনা তাকে গ্রাস করেছে। তাই কৃষ্ণ শুধু রূপ নয়, কেবল নাম। তাই রাধা কৃষ্ণ নাম শুনেই জপ করে, জপ করতে করতে আপনাকে হারিয়ে ফেলে, আপন কল্পনার মাধুর্যে বলে ওঠে –

       “সই কেবা শুনাইল শ্যামনাম

কানের ভিতর দিয়া      মরমে পশিল গো

          আকুল করিল মোর প্রাণ।”

চণ্ডীদাসের পূর্বরাগের পদে রাধিকার নিবিড় আকুতি আছে, আক্ষেপানুরাগের পদে তেমনি আছে অশ্রু-সজল অভিযোগ। ‘কি মোহিনী জান বঁধু’  পদটিতে অবলা নারীর চিত্তহরণ করে তাকে অবহেলা করায় তীব্র অভিমান জেগে উঠেছে। স্রোতের শ্যাওলার মতো অবলম্বনহীন জীবনে রাধা মৃত্যুবরণের সংকল্প করে। চণ্ডীদাস রাধার প্রতি তাই সহানুভূতি দেখিয়ে ভণিতায় বলেন- 

       ‘’সুখের লাগিয়া যে করে পিরিতি 

                 দুখ যায় তার ঠাঞি।”

শুধু সুখের জন্য প্রেম করলেও দুঃখ সঙ্গে সঙ্গে আসবেই। চণ্ডিদাস রাধার প্রতি সহানুভূতি জানাতে গিয়ে জীবনের এই করুণ অথচ অমোঘ সত্যকে প্রকাশ করেন। অভিসারের পদ চণ্ডীদাস খুব বেশি লেখেননি। অভিসারের শ্রেষ্ঠ কবি বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস নন। তবে অভিসারের পদে চণ্ডীদাসের বিশেষত্ব হল এই যে, তাঁর রাধিকা অভিসার করেননি, প্রেমাস্পদ কৃষ্ণকে দিয়ে অভিসার করিয়েছেন। চণ্ডীদাসের রাধা বড় বেশি শঙ্কাতুরা, ভীরু। সতর্ক শাশুড়ী ননদীর দৃষ্টি এড়িয়ে অভিসারে বেরিয়ে পড়ার সাহস তার নেই। ‘এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা’  শীর্ষক পদটিতে কৃষ্ণ রাধার নির্দেশে বর্ষণমুখর রাত্রিতে তার কুঞ্জের আঙিনায় এসে ভিজছেন কিন্তু গৃহ-গণ্ডীটুকু অতিক্রম করার অক্ষমতায় করুণ বেদনা ও

প্রেমিকের প্রেম গভীরতার জন্য প্রচ্ছন্ন গৌরববোধ এবং আনন্দ বেদনার বিচিত্র মধুর সংমিশ্রণে অভিসারের পদটি ভিন্নতর স্বাদুতায় লাবণ্যময় হয়ে উঠেছে।

নিবেদন পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি চণ্ডীদাস। তাঁর মতো এমন পবিত্র আত্মনিবেদন বৈষ্ণবসাহিত্যে আর নেই–

             “বঁধু কি আর বলিব আমি

           জীবনে মরণে    জনমে জনমে

             প্ৰাণনাথ হৈও তুমি।।”

অলঙ্করণের চেষ্টা নেই বলেই, আবেদন এমন আন্তরিকতার সুরে বেজে উঠেছে।

চণ্ডীদাসের পদাবলিতে আদ্যন্তই বিরহের বিষণ্ণতা। বিদ্যাপতির মতো তাঁর পদে মিলনের  ফেনিলোচ্ছল যৌবনের মাদকতা নেই। মিলনের মধুর লগ্নে চণ্ডীদাসের রাধা প্রেমাস্পদকে কাছে পেয়েও পেয়ে হারানোর বেদনায় বিধুর – ‘দুহুঁ কোরে দুহুঁ কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া।’  চণ্ডীদাস তাঁর পদাবলিতে বিরহের যে করুণ রাগিণী বাজিয়েছেন, ভাবোল্লাসে তার প্রকাশ নেই। চণ্ডীদাস ভাবতন্ময় কবি। চিরন্তন সৌন্দর্য,প্রেমকামনা ও বিরহের সুতীব্র সুগভীর আর্তি চণ্ডীদাসের কবিতার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাই চণ্ডীদাসের পদ বাংলা সাহিত্যের পাঠকের কাছে আন্তরিকতার অমূল্য রত্নের আকর হয়েই থেকে যাবে – এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।  

চণ্ডীদাসের কিছু পদ ও তার পর্যায়ঃ 

(১) রাধার কি হইল অন্তরে ব্যথা (পূর্বরাগ)

(২)  সই কেবা শুনাইল শ্যামনাম (পূর্বরাগ) 

(৩) বঁধু কি আর বলিব আমি (নিবেদন) 

(৪)  ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার (পূর্বরাগ) 

(৫) এমন পীড়িতি কভূ নাহি দেখি শুনি (পূর্বরাগ)

(৬) কাহারে কহিব মনের মরম (পূর্বরাগ)

(৭) এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা (অভিসার)

(৮) বঁধু, কি আর বলিব তোরে (আক্ষেপানুরাগ)

(৯) কাল জল ঢালিতে সই কালা পড়ে মনে (আক্ষেপানুরাগ) 

(১০) কি মোহিনী জান বঁধু (আক্ষেপানুরাগ)

চণ্ডীদাস বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্নোত্তর 

১. চণ্ডীদাসের জন্ম কোথায় ? তাঁর ইষ্ট দেবতা কে ?

উত্তরঃ চণ্ডীদাসের জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকের মতে বীরভূমের নান্নুর গ্রাম আবার কেউ বলেন বাঁকুড়ার ছাতনা গ্রামে চণ্ডীদাসের জন্ম।

চণ্ডীদাসের ইষ্ট দেবতা বাসুলী দেবী।

২. বৈষ্ণব পদাবলির কোন্ পর্যায়ে চণ্ডীদাস শ্রেষ্ঠ ? তাঁর ভাবশিষ্য কে ? 

উত্তরঃ বৈষ্ণব পদাবলির পূর্বরাগ পর্যায়ে চণ্ডীদাস শ্রেষ্ঠ।

জ্ঞানদাসকে চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য বলা হয়।

৩. চণ্ডীদাসের রাধার বৈশিষ্ট্য কেমন ? 

উত্তরঃ এই রাধা মানবী নন, যেন এক অপার্থিব দেবী প্রতিমা, যিনি কৃষ্ণপ্রেমের ঘনীভূত নির্যাস। যৌবনের প্রথম প্রহরেও ধ্যানস্তব্ধ যোগিনী মূর্তিতে শাশ্বত। তিনি “যেমত যোগিনী পারা।”  

৪. চণ্ডীদাসের তিনটি উল্লেখযোগ্য পদের নাম লিখ। 

উত্তরঃ চন্ডীদাসের তিনটি উল্লেখযোগ্য পদ হল –

ক) সখী কে বা শুনাইল শ্যাম নাম (পূর্বরাগ)

খ) কাল জল ঢালিতে সই কালা পড়ে মনে (আক্ষেপানুরাগ)  

গ) বঁধু কি আর বলিব আমি (নিবেদন)  

৫. ‘চণ্ডীদাস সহজভাষার কবি’ ও ‘চণ্ডীদাস দুঃখের কবি’ – কে এই উক্তি করেছিলেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চণ্ডীদাসের পদাবলি আলোচনা করতে গিয়ে একথা বলেছিলেন।

৬. ‘সায়াহ্ন সমীরণের দীর্ঘশ্বাস’ – কার সম্পর্কে, কে এই কথা বলেছেন ? 

উত্তরঃ চণ্ডীদাস সম্পর্কে, বঙ্কিমচন্দ্র একথা বলেছিলেন।

৭. চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতির পদের পার্থক্য সংক্ষেপে লিখ ।  

উত্তরঃ বিদ্যাপতি রাজসভার কবি, তাঁর রচনায় বাগবৈদগ্ধ্য, মন্ডন কলা, নাগরিক জীবনের

চাকচিক্য, ভাষার ঐশ্বর্য, অলংকারের মাধুর্য ও বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছে। অন্য দিকে চণ্ডীদাস

বাসুলীর দীন সেবক। তাঁর কবি ধর্ম সহজ ও সরল ভাবের। অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের 

ভাষায় – ‘নিরাভরণ বৈরাগ্যের গৈরিক শ্রী-ই তাঁর কাব্যের মূল আকর্ষণ’ ।  

গোবিন্দদাস 

প্রশ্নঃ পদকর্তা গোবিন্দদাসের পরিচয় দিয়ে তাঁর অবদান সম্পর্কে লিখ।  

 উত্তরঃ গোবিন্দদাস কবিরাজের জন্ম ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি বর্ধমান জেলার অন্তর্গত কুমার নগরে। কিন্তু অল্পবয়সে পিতার মৃত্যুর কারণে তাঁর প্রথম জীবন কাটে ‘শ্রীখণ্ডে’ অবস্থিত সেকালের বিখ্যাত সঙ্গীতশাস্ত্রী ও শাক্ত মতবাদে বিশ্বাসী মাতামহ দামোদর সেন-এর গৃহে। যদিও শেষ জীবনে গোবিন্দদাস বাস করেন বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত ভগবানগোলার নিকটবর্তী তেলিয়া বুধুরী গ্রামের পশ্চিম পাড়াতে। তাঁর পিতা ছিলেন চৈতন্যভক্ত চিরঞ্জীব সেন এবং মাতা সুনন্দা। অগ্রজ রামচন্দ্র কবিরাজ। গোবিন্দদাস চৈতন্যভক্ত পিতার জীবৎকালেই বাল্যবয়সে নিত্যানন্দের কাছে দীক্ষা নেন এবং পরিণত বয়সে (চল্লিশ বছর) শ্রীনিবাস আচার্যের কাছে পুনরায় দীক্ষা নিয়েছিলেন। গোবিন্দদাসের পুত্র দিব্যসিংহ বৈষ্ণবসাহিত্যে সুপরিচিত। বৃন্দাবনের প্রসিদ্ধ ভক্ত পণ্ডিত জীবগোস্বামী তাঁকে বন্ধু বলে ভাবতেন বলে, গোবিন্দদাস কোন নূতনপদ লিখলে বৃন্দাবনে বন্ধু জীবগোস্বামীর কাছে তা পাঠিয়ে দিতেন।

গোবিন্দদাস সংস্কৃত সাহিত্যে সুপণ্ডিত হওয়ায় সংস্কৃতে ‘সংগীতমাধব’ নাটকখানি রচনা করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গোবিন্দদাস শ্রীনিবাসের কাছে পদ রচনার অনুমতি চাইলে, তিনি তাঁকে রূপগোস্বামীর ‘ভক্তিরসামৃতসিন্ধু’‘উজ্জ্বলনীলমণি‘ পাঠ করার পরামর্শ দেন। তিনি তা পাঠ করে বৈষ্ণবপদাবলি রচনায় নিযুক্ত হন। ফলে তাঁর পদাবলী বৈষ্ণব তত্ত্বের রসভাষ্য হয়ে উঠেছে। নানা সংকলন গ্রন্থকে সংগ্রহ করে ড. বিমানবিহারী মজুমদার মহাশয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তাঁর ৮০০টির মত পদ প্রকাশ করেন। যদিও হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়-এর সংকলন গ্রন্থে তাঁর লেখা ২৯৭টি পদ আছে। খেতুরী বৈষ্ণব সম্মেলনে তাঁর পদ কীর্তনের আসরে গাওয়া হয়। চৈতন্যদেবকে অবলম্বন করে তাঁর অনেক ‘গৌরচন্দ্রিকা’র পদ এখনও কীর্ত্তনীয়াদের একমাত্র অবলম্বন। তাঁর ‘গৌরাঙ্গ বিষয়ক’ পদগুলি শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করে। নিজের কল্পনা এবং ভক্ত হৃদয়ের আকুতি মিশিয়ে শ্রীগৌরাঙ্গের ভাবতন্ময় দিব্যমূর্তি অঙ্কন করেন – ‘নীরদ নয়নে নীরঘনসিঞ্চনে’ পদটিতে । আবার অভিসার পর্যায়েও গোবিন্দদাস শ্রেষ্ঠ কবি। বর্ষার মত্তবাদলের চিত্র –

 “মন্দির বাহির কঠিন কপাট

চলইতে শঙ্কিল পঙ্কিল বাট।

পৌখলি রজনি পবন বহ মন্দ

চৌদিশে হিম হিমকর কর বন্ধ।’’ 

এমনকি দুর্যোগের রাত্রিকে অতিক্রম করে তার অভিসার– 

‘’কন্টক গাড়ী     কমল-সম পদতল

মঞ্জীর চীরহি ঝাঁপি

গাগরি-বারি       ঢারি করি পিছল 

চলতহি অঙ্গুলি চাপি।”

আবার কোথাও কোথাও প্রকৃতির সৌন্দর্য যেন তনুতে তরঙ্গিত। যেমন –

“যাঁহা যাঁহা নিকসয়ে তনু তনু-জ্যোতি।

তাঁহা তাঁহা বিজুরি চমকময় হোতি।।”

রূপানুরাগ পর্যায়ের এ জাতীয় পদে গোবিন্দদাসের সৌন্দর্যসৃষ্টি আমাদের আবিষ্ট করে। গোবিন্দদাসের কবিতার ভাষা ‘ব্রজবুলি’ । বিদ্যাপতির কাব্যরীতিকে তিনি অনেকাংশে গ্রহণ করেছিলেন বলে তাকে ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

গোবিন্দদাসের কিছু পদ ও তার পর্যায় :

(১) যাঁহা পহু অরুণ চরণে জাত (মাথুর) 

(২) যাঁহা যাঁহা নিকষয়ে তনু তনু জ্যোতি (পূর্বরাগ)

(৩) কুল মরিয়াদ কপাট উদ্ঘাটলু (অভিসার) 

(৪) রূপে ভরল দিঠি সোঙ্গারি পরশ বিঠি (পূর্বরাগ)

(৫) মন্দির বাহির কঠিন কপাট (অভিসার) 

(৬) আধক আধ আধ দিঠি অঞ্চলে (পূর্বরাগ)

(৭) কণ্টক গাড়ি কমলসম পদতল (অভিসার)

গোবিন্দদাস বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্নোত্তর 

১। পদকর্তা গোবিন্দদাস কবে কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ? 

উত্তরঃ বর্ধমানের কাটোয়ার নিকটবর্তী শ্রীখণ্ডে আনুমানিক ১৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দে কবি গোবিন্দদাস জন্ম গ্রহণ করেন।

২। পদকর্তা গোবিন্দদাসকে কে ‘কবিরাজ’ উপাধি দেন ?   

উত্তরঃ বৃন্দাবনের গোস্বামী শ্রীজীব গোস্বামী(মতান্তরে শ্রীনিবাস আচার্য্য) পদকর্তা গোবিন্দদাসকে  ‘কবিরাজ’ উপাধি দিয়েছিলেন। ‘দাস’ উপাধি তিনি নিজে ব্যবহার করেছিলেন।    

৩। পদকর্তা গোবিন্দদাসের কবি প্রতিভার বৈশিষ্ট্য কী ?  

উত্তরঃ বৈষ্ণবসাহিত্যে ভাস্বর প্রতিভা গোবিন্দদাসের। পূর্ববর্তী কবিদের মতো রাধাকৃষ্ণ লীলা

বিষয়ক পদ রচনা করলেও অলঙ্কার ব্যবহারে, মণ্ডনকলা নৈপূণ্যে, অপূর্ব ছন্দ ঝংকারে

এবং শব্দ ব্যবহারের সীমিত কুশলতায় গোবিন্দদাস বিদ্যাপতির সার্থক উত্তরসূরি। একদিকে

গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনে সুপরিপক্ক জ্ঞান এবং অন্যদিকে ভক্তির মার্জিত দ্যুতিতে তাঁর পদাবলি

কঠিন সুসংবদ্ধ ক্লাসিক সৌন্দর্যে ভরপুর।

৪। কাকে, কেন ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ বলা হয় ? কার কোন পদে এ কথা পাওয়া যায় ?  

উত্তরঃ বৈষ্ণব পদকর্তা গোবিন্দ দাসকে “দ্বিতীয় বিদ্যাপতি” বলা হয়। 

দ্বিতীয় বিদ্যাপতি বলার কারণ :

i) বিদ্যাপতির রচিত পদের মতো ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেন গোবিন্দ দাস।

ii) ভাষার ঐশ্বর্য, ছন্দ-অলঙ্কার ও শিল্প বোধের জন্য বিদ্যাপতির সঙ্গে তুলনীয়।

iii) বিদ্যাপতির অসম্পূর্ণ পদ সম্পূর্ণ করেন, যেখানে দু’জনের মধ্যে কোনো ভাবান্তর পাওয়া যায় না।

কার পদে এ কথা পাওয়া যায়ঃ  পরবর্তী বৈষ্ণব পদকর্তাগণ তাঁকে “দ্বিতীয় বিদ্যাপতি” বলে সম্মানিত করেন। যেমন দেখা যায় বল্লভদাসের পদটিতে —

“ব্রজের মধুরলীলা     যা শুনি দরবে শিলা

গাইলেন কবি বিদ্যাপতি।

তাহা হইতে নহে ন্যূন      গোবিন্দেরকবিত্ব গুণ

গোবিন্দ দ্বিতীয় বিদ্যাপতি।।”

৫। অভিসার ছাড়া আর কোন্ পর্যায়ে গোবিন্দদাস কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। সে পর্যায়ের

একটি পদের নাম লিখ।

অভিসার ছাড়া ‘গৌরাঙ্গবিষয়ক’ পদরচনাতেও গোবিন্দদাস অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

এই পর্যায়ের একটি বিখ্যাত পদ হল — 

‘নীরদ নয়নে নীরঘন সিঞ্চনে’। 

৬। গোবিন্দ দাসের চারটি বিখ্যাত পদের নাম ও সেগুলি কোন্ পর্যায়ের পদ লিখ।

গোবিন্দদাসের চারটি বিখ্যাত পদের নাম হল-

(১) ‘কন্টক গাড়ি কমল-সম পদ তল’ – অভিসার (ব্রজবুলি ভাষার দৃষ্টান্ত)

(২) ‘চম্পক শোন – কুসুম কনকাচল’ — (গৌরচন্দ্রিকা)  

(৩) ‘মন্দির বাহির কঠিন কপাট’ – (অভিসার)

(৪) ‘রূপে ভরল দিঠি / সোঙরি পরশ মিঠি।’ —(রূপানুরাগ) 

জ্ঞানদাস 

প্রশ্নঃ পদকর্তা জ্ঞানদাস পরিচয় দিয়ে তাঁর অবদান সম্পর্কে লিখ। 

  উত্তরঃ চৈতন্য পরবর্তী পদাবলি সাহিত্যে, আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর তৃতীয়-চতুর্থ দশকে জ্ঞানদাসের আবির্ভাব। কাটোয়ার দশমাইল পশ্চিমে কাঁদড়া গ্রামে ব্রাহ্মণ বংশে তাঁর জন্ম হয়। নিত্যানন্দের শিষ্যদের মধ্যে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য।নিত্যানন্দের কনিষ্ঠা পত্নী জাহ্নবী দেবীর মন্ত্রশিষ্য। জ্ঞানদাসের বিপুল পদসম্ভার বৈষ্ণবপদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। জ্ঞানদাসের ভণিতায় ১৮৬টি পদ ‘পদকল্পতরু’তে এবং ৩১১টি পদ ‘বৈষ্ণব পদাবলি’তে স্থান পেয়েছে। আবার ‘বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জ্ঞানদাসের ভণিতাযুক্ত চারশো পদের কথা বলেছেন। এছাড়াও ‘যশোদার বাৎসল্যলীলা’ পুথিতে জ্ঞানদাস ভণিতাযুক্ত কুড়িটি পদ পাওয়া যায়। জ্ঞানদাস ভণিতাযুক্ত এই বিপুল পদভাণ্ডার দেখে একাধিক জ্ঞানদাসের অস্তিত্বের কথা উঠে এলেও, যতদিন এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণ না মেলে ততদিন একজন জ্ঞানদাসকেই স্বীকার করতে হয়।

জ্ঞানদাস ‘ব্রজবুলি’ এবং ‘বাংলা’ উভয় ভাষাতেই পদ লিখেছেন। কিন্তু বাংলা পদ বেশি উৎকৃষ্ট। ব্রজবুলিতে তিনি বিদ্যাপতিকে এবং বাংলা পদে চণ্ডীদাসকে অনুসরণ করলেও তিনি অভিনবত্ব লাভ করেন দানখণ্ড, নৌকাখণ্ড এবং রসোগার প্রভৃতি পর্যায়ের পদে। তবে তিনি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন পূর্বরাগ ও অনুরাগ, মূলতঃ আক্ষেপানুরাগ ও রূপানুরাগ পর্যায়ের পদে। 

তাঁর একটি শ্রেষ্ঠ রূপানুরাগ পর্যায়ের পদঃ 

‘’রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর।

প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর।।’’

পদটিতে রাধার অনন্ত বাসনা ও হাহাকার ফুটে উঠেছে। একইরকম ভাবে রাধার অনন্ত আক্ষেপ ধ্বনিত হয়েছে । তাঁর আক্ষেপানুরাগ-এর অন্য একটি পদে –

“আলো মুঞি জানো না

জানিলে যাইতাম না কদম্বের তলে।…

রূপের পাথারে আঁখি ডুবি সে রহিল।

যৌবনের বনে মন হারাইয়া গেল।।”

এছাড়াও তাঁর আরো একটি উল্লেখযোগ্য পদ –

‘’তোমার গরবে গরবিনী হাম রূপসী তোমার রূপে।

হেন মনে লয় ও দুটি চরণ সদা লয়্যা রাখি বুকে।।’’

এছাড়াও জ্ঞানদাসের নামে অভিসারের ষোলটি পদ রয়েছে। মাত্র একটি পদে সখীদের ছেড়ে রাধা একা অভিসারে গেছেন। বাকি সবগুলিতে সখীদের সঙ্গে নিয়ে গেছেন। জ্ঞানদাস মূলতঃ ‘বর্ষাভিসার’,‘তিমিরাভিসার’, ‘শুক্লাভিসার’ ও ‘দিবাভিসার’ পদ লিখেছেন। এছাড়াও জ্ঞানদাসের পদাবলি সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন ‘বংশীমূলক পদ’ – যা কবির রোমান্টিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। আবার রাধার বেদনাদীর্ণ হাহাকার কে যথার্থভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য জ্ঞানদাসকে যেমন ‘গীতিকবি’ অভিধা দেওয়া সার্থক হয়েছে, তেমনি আবার অনেকক্ষেত্রে চণ্ডীদাসের সঙ্গে জ্ঞানদাসের স্বরূপগত মিল থাকার জন্য তাকে ‘চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য’ও বলা হয়। তবে চণ্ডীদাস মিস্টিক কবি কিন্তু জ্ঞানদাস রোমান্টিক কবি।

তথ্যের অপ্রাচুর্যের জন্য জ্ঞানদাসের জীবনকথা বিস্তৃতভাবে প্রস্তুত করা সমস্যাবহুল হলেও তিনি যে নিত্যানন্দের (যিনি পরলোকগমন করেন আনুমানিক ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি) শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং কাটোয়া ও খেতরীর মহোৎসব (আনুমানিক ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দ)-এ উপস্থিত ছিলেন – এইটুকু তথ্য পাওয়ায় এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই, যে জ্ঞানদাস অন্ততপক্ষে ১৫২০ থেকে ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।

জ্ঞানদাস বিষয়ক কিছু প্রশ্নোত্তরঃ 

১। জ্ঞানদাস কোন যুগের কবি ? তাঁর জন্ম কোথায় হয়েছিল ?  

উত্তরঃ চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য জ্ঞানদাস চৈতন্য যুগের কবি।

 বর্ধমান জেলার কাঁদড়া গ্রামে আনুমানিক ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর জন্ম। 

২। ‘পদকল্পতরু’তে জ্ঞানদাসের ভণিতায় কয়টি পদ পাওয়া গেছে ?

উত্তরঃ বিখ্যাত বৈষ্ণবপদ সংকলন গ্রন্থ ‘পদকল্পতরু’তে জ্ঞানদাসের ভণিতায় ১৮৬টি পদ পাওয়াগেছে।

৩। কোন পর্যায়ের পদ রচনায় জ্ঞানদাস শ্রেষ্ঠ ? তাঁর ওই পর্যায়ের একটি পদের উদাহরণ দাও।   

উত্তরঃ রূপানুরাগ পর্যায়ের পদ রচনায় জ্ঞানদাসের শ্রেষ্ঠত্ব। 

জ্ঞানদাসের রূপানুরাগ পর্যায়ের একটি বিখ্যাত পদ হল –

“রূপলাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর

প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর।”

৪। জ্ঞানদাসকে কেন চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য বলা হয় ?

উত্তরঃ চণ্ডীদাস ও জ্ঞানদাস উভয়ই ভাবতন্ময় কবি। প্রেমের আত্মনিবেদনে উভয়েই মানব জীবনের সীমা ছাড়িয়ে ভাবাদর্শের ঊর্ধ্বলোকের বিচরণ করেছেন। এরদু’জনের রচনার মধ্যে নিবিড় একাত্মতা লক্ষ করা যায় বলেই জ্ঞানদাসকে কেন চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য বলা হয়।  

৫। জ্ঞানদাসের চারটি বিখ্যাত পদের নাম ও সেগুলি কোন্ পর্যায়ের পদ লিখ।

উত্তরঃ জ্ঞানদাসের কিছু পদ ও তাঁর পর্যায় দেখানো হলঃ 

(১) রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর (পূর্বরাগ)

(২) আলো মুঞি জান না (পূর্বরাগ)

(৩) বঁধু তোমার গরবে গরবিনী আমি (নিবেদন) 

(৪) তুমি কি জান সই কাহ্নুর পিরিতি (পূর্বরাগ)

(৫) সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু (আক্ষেপানুরাগ) 

(৬) কানু অনুরাগে হৃদয় ভেল কাতর (অভিসার)

(৭) মেঘ যামিনী অতি ঘন আন্ধিয়ার (অভিসার)

৬।  জ্ঞানদাস ও চণ্ডীদাসের পদাবলির মূল পার্থক্যটি কোথায় ?

চণ্ডীদাস ছিলেন প্রাক চৈতন্যের যুগের কবি। কিন্তুজ্ঞানদাস ষোড়শ শতকের (চৈতন্যদেবের

তিরোধানের পর তাঁর কাব্যচর্চা শুরু হয়) অর্থাৎ চৈতন্য যুগের কবি। সুতরাং জ্ঞানদাসের

পদাবলিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ভাবাদর্শের রসানুভূতি চিত্রিত হলেও চণ্ডীদাসে সে সুযোগ নেই।

………………………………………………………… 

WBSLST Bengali (IX-X & XI-XII) পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যাবতীয় নোটস পেতে ও MCQ Mock Test বিণামূল্যে দেবার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করো। 👉www.shekhapora.com

পিডিএফ ডাউনলোড করে নাও 👇

আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇

নাট্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান

নাট্যসাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান

নাট্যসাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান

নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্র-র অবদান

নাট্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান

বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান

গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।

বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা

আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান

গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান

কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান

বাংলা উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা সাহিত্যে রাজশেখর বসু(পরশুরাম)-এর অবদান আলোচনা করো।

Leave a Reply