প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো ।
উত্তরঃ প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদানঃ-
প্রবন্ধ সাহিত্যের ধারায় রবীন্দ্রনাথ যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ছোটগল্প , কবিতা , উপন্যাস রচনার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারাজীবন অজস্র প্রবন্ধ রচনা করেছেন । তাঁর রচিত বেশিরভাগ প্রবন্ধ সাধনা , বঙ্গদর্শন , হিতবাদী , সবুজপত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল । তাঁর রচিত প্রবন্ধ গুলিকে ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ , রাজনীতি , সমাজ , বিজ্ঞান , ইতিহাস ও শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধ , ধর্ম , দর্শন ও আধ্যাত্ম বিষয়ক প্রবন্ধ , ব্যক্তিগত প্রবন্ধ ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে ।
তাঁর ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘প্রাচীন সাহিত্য’(১৯০৭) , ‘সাহিত্য’(১৯০৭ , ‘আধুনিক সাহিত্য’(১৯০৭) , ‘লোকসাহিত্য’(১৯০৭) , ‘সাহিত্যের পথে’(১৯৩৬) , ‘সাহিত্যের স্বরূপ’(১৯৪৩) , ‘বাংলা ভাষা পরিচয়’ , ‘বাংলা শব্দতত্ত্ব’ , ‘ছন্দ’ প্রভৃতি গ্রন্থ ।
তাঁর স্বদেশ ও সমকালীন সমাজ সম্পর্কিত ভাবনা চিন্তার প্রতিফলন ‘আত্মশক্তি’ , ‘ভারতবর্ষ’ , ‘রাজাপ্রজা’ , ‘স্বদেশ’ , ‘কালান্তর’ ও ‘সভ্যতার সংকট’ প্রভৃতি গ্রন্থে লক্ষ করা যায় । ‘শিক্ষা’ গ্রন্থে শিক্ষাসংক্রান্ত তাঁর রচিত যাবতীয় প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে । ‘ধর্ম’(১৯০৯) , ‘শান্তিনিকেতন’ , ‘মানুষের ধর্ম’(১৯৩৩) প্রভৃতি গ্রন্থে তাঁর অধ্যাত্ম দর্শনের কথা রয়েছে ।
তাঁর ভ্রমণকাহিনী , স্মৃতিকথা , ডায়েরি , রম্য রচনা , চিঠিপত্রের মতো ব্যক্তিগত রচনা গুলির মধ্যে ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’ , ‘য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরি’ , ‘জাপান যাত্রী’(১৯১৯) , ‘জীবনস্মৃতি’(১৯১২) , ‘ছেলেবেলা’ , ‘রাশিয়ার চিঠি’ , ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ , ‘পথের সঞ্চয়’ , ‘ছিন্নপত্র’ , ‘বাতায়নিকের পত্র’ , ‘পঞ্চভূত’(১৮৯৭) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষায় যেসব গদ্য গ্রন্থ রচনা করেন বিষয়বৈচিত্র্যে তা যেমন অভিনব , মননশীল , গুরুগম্ভীর তেমনই মৌলিকতার উপাদানের স্বতন্ত্র । তাঁর রচিত প্রবন্ধ গুলিতে মননশীলতার সঙ্গে কবি ধর্মের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে ।
রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা PDF সহ
প্রবন্ধ, প্রকাশকাল, উৎসর্গ, বিষয়, অন্তর্গত প্রবন্ধ ইত্যাদি বিস্তারিত আলোচনা । শেষে PDF Download link দেওয়া হল।
রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে এমন একজন ব্যক্তি , সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যা তাঁর হাতের স্পর্শে উজ্জ্বল হযে উঠেনি । রবীন্দ্র-প্রবন্ধ তথ্য ও তত্ত্বে সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল, যুক্তি ও বিচার বিশ্লেষণের তীক্ষ্ণতায় সমৃদ্ধ। এ কারণেই প্রচলিত প্রবন্ধের ধারা থেকে তাঁর প্রবন্ধ স্বতন্ত্র। তাঁর প্রবন্ধের বিষয়বৈচিত্র্যও যথেষ্ট—তা আকৃতিতে যেমন বিশাল রচনারীতিতে তেমনই বৈচিত্র্যময়। শিল্প ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, আর্থ-রাজনৈতিক চিন্তা, সমাজ-সংস্কার সম্পর্কিত সমস্যা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, দর্শন, শিক্ষা প্রভৃতি সমস্ত বিষয়ই রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাছাড়া পত্র, স্মৃতিচিত্র, ডায়েরী প্রভৃতি আত্মনিষ্ঠ রচনাও তার প্রবন্ধকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে ।
রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ:-
(গ) সাহিত্য-সমালোচনা মূলক :-
‘সমালোচনা’ (১৮৮৮), ‘প্রাচীন সাহিত্য’ (১৯০৭), ‘সাহিত্য’ (১৯০৭), ‘আধুনিক সাহিত্য’ (১৯০৭), ‘লোকসাহিত্য’ (১৯০৭), “সাহিত্যের পথে’ (১৯৩৬), “সাহিত্যের স্বরূপ’ (১৯৪৩)।
(খ) শিক্ষা-সমাজ-রাজনীতি বিষয়ক :-
মন্ত্রী অভিষেক'(১৮৯০), ‘সংস্কৃত শিক্ষা’—দ্বিতীয় ভাগ (১৮৯৬),‘আত্মশক্তি’ (১৯০৫), ‘ভারতবর্ষ’ (১৯০৬), ‘শিক্ষা’(১৯০৮), ‘রাজা প্রজা’ (১৯০৮), ‘স্বদেশ’ (১৯০৮),’সমাজ’ (১৯০৮), ‘সমূহ’ (১৯০৮), ‘পরিচয়’ (১৯১৬), ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ (১৯১৭), ‘সমবায় নীতি’ (১৯২৮), ‘কালান্তর’ (১৯৩৭),‘সভ্যতার সঙ্কট’ (১৯৪১), ‘পল্লীপ্রকৃতি’ (১৯৬২)।
(গ) ধর্ম ও দর্শনমূলক প্রবন্ধ :-
‘ধর্ম’ (১৯০৯), ‘শান্তিনিকেতন’ (১৯০৯-১৯১৬), ‘সঞ্চয়'(১৯১৬), ‘মানুষের ধর্ম’ (১৯৩৩),উপনিষদ ব্ৰহ্ম’ (১৯০১),‘প্রাক্তনী’ (১৯৩৬),‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ’ (১৯৪১), ‘বিশ্বভারতী'(১৯৪১)
(ঘ) ব্যক্তিগত প্রবন্ধ :-
‘পঞ্চভূত’ (১৮৯৭), ‘বিচিত্র প্ৰবন্ধ’ (১৯০৭), ‘লিপিকা’ (১৯২২), ‘ভারতপথিক রামমোহন রায়’ (১৯৩৩)
(ঙ) জীবনী, ভ্রমণকাহিনি ও পত্রসাহিত্য-
#জীবনী বিষয়ক রচনা -রামমোহন রায় (১৮৮৫) চারিত্র পূজা'(১৯০৭), ‘বিদ্যাসাগর চরিত’ (১৯০৯),মহাত্মা গান্ধী (১৯৪৮)’জীবনস্মৃতি’ (১৯১২),
#পত্র সাহিত্য- ‘ছিন্নপত্র’ (১৯১২),ছিন্নপত্রাবলী (১৯৬০)ভানুসিংহের পত্রাবলী (১৯৩০)পথে ও পথের প্রান্তে(১৯৩৮)
#ভ্রমণকাহিনি বিষয়ক –
য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র(১৮৮১)য়ুরোপযাত্রীর ডায়েরি(১৮৯১-১৮৯৩),জাপানযাত্রী’ (১৯১৯),‘যাত্রী’-‘পশ্চিম যাত্রীর ডায়রি’ ও ‘জাভা-যাত্রীর পত্র’ (১৯২৯), ‘জাপানে পারস্যে’ (১৯৩৬),পথে ও পথের প্রান্তে (১৯৩৮)‘পথের সঞ্চয়’ (১৯৩৯),
চিঠিপত্র –
রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১)জাভাযাত্রীর পত্র (১৯২৯)
‘চিঠিপত্র’ (১৮৮৭)প্রভৃতি।
ঐতিহাসিক প্রবন্ধ –
ভারতবর্ষ ১৯০৬
স্বদেশ ১৯০৮
ইতিহাস ১৯৫৫
আত্ম কথামূলক প্রবন্ধ –
জীবনস্মৃতি ১৯১২
ছেলেবেলা ১৯৪০
আত্মপরিচয় ১৯৪৩
রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:-
১. সমালোচনা (১৮৮৮) –
গ্রন্থের একটি প্রবন্ধ ‘সত্যের অংশ’ ছাড়া সমস্তই ‘ভারতী’ পত্রিকায় ১২৮৭ বঙ্গাব্দ থেকে ১২৯১ বঙ্গাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থে মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ১৬টি। প্রথম প্রবন্ধের নাম ‘অনাবশ্যক’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘একটি পুরাতন কথা’। উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি প্রবন্ধ হল ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, ‘নীরব কবি ও অশিক্ষিত কবি’, ‘চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি’, ‘বসন্তরায়’ ইত্যাদি।
গ্রন্থটি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
২. প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭) –
গ্রন্থে কবি প্রাচীন ভারতীয় কবি যেমন কালিদাস, বাল্মীকি, বাণভট্ট প্রমুখদের সাহিত্যকৃতি আলোচনা করেছেন। গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ বিভিন্ন সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। যেমন ‘সাহিত্য’ পত্রিকার অগ্রহায়ণ সংখ্যায় প্রকাশ পায় ‘মেঘদূত’ প্রবন্ধটি। ‘কাদম্বরী-চিত্র’ প্রকাশিত হয় ‘প্রদীপ’ পত্রিকায়। ‘ভারতী’তে প্রকাশিত হয় ‘কাব্যের উপেক্ষিতা’ আর ‘বঙ্গদর্শন’ এর পৃষ্ঠায় মুদ্রিত হয়েছিল ‘শকুন্তলা’ এবং ‘কুমারসম্ভব ও শকুন্তলা’।
গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধের নাম ‘রামায়ণ’ এবং শেষ প্রবন্ধের নাম ‘কাব্যের উপেক্ষিতা’।
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধ আছে ৬ টি।
৩. সাহিত্য (১৯০৭) –
সাহিত্যের বিচিত্র তত্ত্ব ও তার বিভিন্ন রূপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে।
গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ ‘সাহিত্যের তাৎপর্য’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘সাহিত্য পরিষৎ’।
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধ আছে ২৬টি।
৪. আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭) –
রবীন্দ্র সমকালীন কিংবা তাঁর কিছু পূর্ববর্তী বিখ্যাত লেখকদের কাব্য, উপন্যাস নিয়ে এক সাহিত্যিক আলোচনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। গ্রন্থে কবির সুতীক্ষ্ণ বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়।
গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধের নাম ‘বঙ্কিমচন্দ্র’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘জুবেয়ার’।
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধ আছে ১৭টি।
গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ ‘সাধনা’ পত্রিকায় প্রকাশিত। এছাড়া কিছু প্রবন্ধ ‘ভারতী’, ও ‘বঙ্গদর্শনে’ প্রকাশ পায়।
৫. লোকসাহিত্য (১৯০৭) –
বাংলার গ্রাম্য ও লোকসাহিত্য সম্পর্কে মনোগ্রাহী আলোচনা করেছেন কবি। গ্রন্থের প্রবন্ধগুলি বিভিন্ন সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত। ‘সাধনা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল গ্রন্থের ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ ও ‘কবি-সঙ্গীত’। পত্রিকায় প্রকাশকালে ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ ‘মেয়েলি ছড়া’ নামে মুদ্রিত হয়েছিল। ‘ছেলেভুলানো ছড়াঃ ২’ প্রকাশিত হয় ‘সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা’য়। ‘গ্রাম্যসাহিত্য’ প্রকাশিত হয়েছিল ‘ভারতী’পত্রিকায়।
গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ ‘ছেলে ভুলানো ছড়া’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘গ্রাম্যসাহিত্য’।
এই গ্রন্থে মোট ৪ টি প্রবন্ধ আছে।
৬. সাহিত্যের পথে (১৯৩৬) –
সাহিত্যের বিচিত্র তত্ত্ব ও তার বিভিন্ন রূপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে।
গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ ‘বাস্তব’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ’।
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ১৯টি।
গ্রন্থভুক্তহওয়ার আগে প্রবন্ধগুলি ‘সবুজপত্র’, ‘বঙ্গবাণী’, ‘বিচিত্রা’, ‘পরিচয়’ ও ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
গ্রন্থটি অমিয় চক্রবর্তীকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
৭. সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩) –
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ১০টি।
প্রথম প্রবন্ধটি হল ‘সাহিত্যের স্বরূপ’ এবং শেষ প্রবন্ধের নাম ‘সত্য ও বাস্তব’।
গ্রন্থের প্রবন্ধগুলি ‘কবিতা’, ‘পরিচয়’, ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
৮. য়ুরোপ যাত্রীর ডায়ারি (১৮৯১) –
গ্রন্থে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ ভ্রমণকালে ২২শে আগষ্ট থেকে ৪ ঠা নভেম্বর পর্যন্ত নানা ঘটনা দিনলিপি আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে লোকেন্দ্রনাথ পালিতকে।
৯. চারিত্রপূজা (১৯০৭) –
এই গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধের নাম ‘বিদ্যাসাগর চরিত’ এবং শেষ প্রবন্ধের নাম ‘মহাপুরুষ’।
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধ আছে ৬ টি।
১০. বিচিত্র প্রবন্ধ (১৯০৭) –
গ্রন্থের পরিচয় প্রসঙ্গে স্বয়ং কবি লিখেছিলেন, ‘ইহার যদি কোনো মূল্য থাকে তাহা বিষয়গৌরবে নয়, রচনারসসম্ভোগে।’ গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ ‘লাইব্রেরি’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘সরোজিনী প্রয়াণ’।
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ১৪টি। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রবন্ধ হল ‘মাভৈঃ’, ‘পাগল’, ‘কেকাধ্বনি’, ‘বাজে কথা’ ইত্যাদি। গ্রন্থের প্রবন্ধগুলি ‘বালক’, ‘বঙ্গদর্শন’ ও ‘ভারতী’তে প্রকাশিত হয়।
১১. পঞ্চভূত (১৮৯৭) –
গ্রন্থ আকারে প্রকাশের পূর্বে ‘পঞ্চভুতের ডায়েরী’ নামে ‘সাধনা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধ আছে ১৬টি।
প্রথম ‘ পরিচয় ‘ , শেষ প্রবন্ধ ‘ বৈজ্ঞানিক কৌতূহল ‘। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রবন্ধ হল ‘নরনারী’, ‘পল্লীগ্রামে’, ‘মনুষ্য’ ইত্যাদি।
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে মহারাজ শ্রী জগদিন্দ্রনাথ রায় বাহাদুরকে।
১২. আলোচনা (১৮৮৫) –
গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
গ্রন্থটি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গকরা হয়েছে।
১৩. বিবিধ প্রসঙ্গ (১৮৮৩) –
লেখকের প্রথম প্রবন্ধ পুস্তক। গ্রন্থের ‘সমাপন’ প্রবন্ধটি ছাড়া সমস্ত প্রবন্ধই ‘ভারতী’তে প্রকাশিত।
মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ৩৯টি। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রবন্ধ হল ‘মনের বাগান-বাড়ি’, ‘শূন্য’, ‘জমা খরচ’,‘প্রকৃতি পুরুষ’ ইত্যাদি।
১৪. রাজা প্রজা (১৯০৮) –
গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ‘সাধনা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। থ্রন্থে নানাপ্রকার রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রবন্ধ হল ‘ইংরাজ ও ভারতবাসী’, ‘সুবিচারের অধিকার’, ‘রাজনীতির দ্বিধা’ ইত্যাদি। মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ১০টি। গ্রন্থের প্রবন্ধগুলি ‘সাধনা’, ‘ভারতী’, ‘ভাণ্ডার’, ‘প্রবাসী’ ও ‘বঙ্গদর্শনে’ প্রকাশিত।
১৫. সমাজ (১৯০৮) –
কবির সমাজ-চিন্তার পরিচয়বাহী এই গ্রন্থ। মোট প্রবন্ধ সংখ্যা ৮টি। প্রথম প্রবন্ধের নাম ‘আচারের অত্যাচার’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘পূর্ব ও পশ্চিম’। গ্রন্থের প্রবন্ধগুলি ‘সাধনা’, ‘ভাণ্ডার’, ‘ভারতী’ সহ নানা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৬. শিক্ষা (১৯০৮) –
কবির শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নানা সমস্যা, শিক্ষাদান পদ্ধতি, বিভিন্ন শিক্ষা-পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে কবির সুগভীর বিচার বিশ্লেষণ ধরা পড়েছে। গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ ‘শিক্ষার হেরফের’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘আবরণ”।
গ্রন্থটিতে মোট ৫টি প্রবন্ধ আছে।
১৭. স্বদেশ (১৯০৮) –
গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ ‘নূতন ও পুরাতন’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘ধর্মবোধের দৃষ্টান্ত’।
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধআছে ৩টি।
১৮. শান্তিনিকেতন (১৯০৯) –
লেখকের ধর্ম ও দর্শন বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ। শান্তিনিকেতনের মন্দিরে কিংবা অন্য অনুষ্ঠানে কবি যে যে সমস্ত উপদেশ দিয়েছিলেন তার সংগৃহীত রূপ এই গ্রন্থ। গ্রন্থটি ১৭টি খন্ডে বিন্যস্ত। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রবন্ধ হল ‘সত্যকে দেখা’, ‘জাগরণ’, ‘ব্রাহ্মসমাজের সার্থকতা’, ‘সৃষ্টির অধিকার’ ইত্যাদি।
১৯. শব্দতত্ত্ব (১৯০৯) –
বাংলা উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য, শব্দতত্ত্বের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে।
মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ১১টি।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রবন্ধ হল ‘বাংলা উচ্চারণ’, ‘টা টো টে’, ‘বাংলা বহুবচন’ ইত্যাদি।
এছাড়া পরিশিষ্টে আরো দুটি প্রবন্ধ যুক্ত হয়েছে। গ্রন্থের প্রবন্ধগুলি ‘বালক’, ‘সাধনা’, ‘ভারতী’, ও ‘সাহিত্য-পরিষৎ’পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
২০. ধর্ম (১৯০৯) –
লেখকের ধর্ম ও দর্শন বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ। গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ শান্তিনিকেতনে পৌষ উৎসব, নববর্ষ কিংবা বর্ষশেষ উপলক্ষে পঠিত হয়েছিল। গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধের নাম ‘উৎসব’ এবং শেষ প্রবন্ধের নাম ‘আনন্দরূপ’।
গ্রন্থটিতে মোট প্রবন্ধ আছে ১৫টি। গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ ‘বঙ্গদর্শনে’ প্রকাশিত হয়। এছাড়া‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকাতেও দুটি প্রবন্ধের প্রকাশ ঘটে।
২১. ছিন্নপত্র (১৯১২) –
মোট পত্র আছে ১৫১ টি। এর মধ্যে প্রথম ৮টি চিঠি শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে লেখা। বাকিগুলি ইন্দিরা দেবীকে। কবি এই চিঠিগুলি ইন্দিরা দেবীকে লিখেছিলেন প্রায় সাত বছর ধরে। গ্রন্থে কবিমানস সম্পর্কে অধ্যাপক ভূদেব চৌধুরী লিখেছেন, ‘কবির অনাড়ষ্ট অসঙ্কুচিত ব্যক্তিত্বটি এখানে সহজ বিকাশের প্রেরণায় অভিব্যক্ত হয়েছে।
২২. জীবনস্মৃতি (১৯১২) –
আত্মপরিচয়মূলক গ্রন্থ। প্রথম প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে। স্বয়ং লেখকের ভাষায় এ হল ‘স্মৃতিকথা’। গ্রন্থের চিত্রগুলি গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারা অঙ্কিত।
২৩. পরিচয় (১৯১৬) –
মোট ৯ টি প্রবন্ধ আছে এই গ্রন্থে। প্রথম প্রবন্ধটি হল ‘ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা’ এবং শেষ প্রবন্ধের নাম ‘শরৎ’।
উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি প্রবন্ধ হল ‘শিক্ষার বাহন’, ‘কৃপণতা’, ‘হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়’ ইত্যাদি। গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায় প্রকাশিত। এছাড়াও ‘প্রবাসী’ ও ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকাতে কয়েকটি রচনা প্রকাশিত।
২৪. সঞ্চয় (১৯১৬) –
মোট ৭ টি প্রবন্ধ আছে এই গ্রন্থে।
প্রথম প্রবন্ধের নাম ‘রোগীর নববর্ষ এবং শেষ প্রবন্ধের নাম‘আমার জগৎ’।
প্রবন্ধগুলির অধিকাংশ ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশিত। এছাড়া ‘প্রবাসী’ ও ‘সবুজপত্রে’ও কিছু প্রবন্ধপ্রকাশ পায়।
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে ডাক্তার ব্রজেন্দ্রনাথ শীলকে।
২৫. কর্তায় ইচ্ছায় কর্ম (১৯১৭) –
গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে রচনাটি এই বছরের ভাদ্র মাসে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার আগে কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরিতে রচনাটি পঠিত হয়েছিল
২৬. জাপানযাত্রী (১৯১৯) –
কবির জাপান যাত্রার সময়কালে লিখিত পত্রের সংকলন এই গ্রন্থটি।
মোট পত্রের সংখ্যা ১৫টি। গ্রন্থের রচনাগুলি ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
গ্রন্থটি শ্রীযুক্ত রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে উৎসর্গ করা হয়েছে।
২৭. যাত্রী (১৯২৯) –
গ্রন্থটি দুটি প্রবন্ধগ্রন্থের সংগ্রহ – ‘পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি’ ও ‘জাভা-যাত্রীর পত্র’।
‘পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি’ মোট ২৩টি পত্রের সংকলন।
‘জাভা-যাত্রীর পত্র’তে মোট ২১টি পত্র আছে।
এই দুই গ্রন্থ একত্রে পরবর্তীকালে ‘যাত্রী’ নামে অভিহিত হয়।
২৮. রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১) –
১৯৩০ খ্রিঃ রাশিয়া ভ্রমণকালে সেখানকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা শিক্ষাব্যবস্থা তথা সমাজজীবন সম্পর্কে কবি যা দেখেছিলেন তার সরস উপস্থাপনা আছে এই গ্রন্থে। গ্রন্থটি মোট ১৪টি পত্রের একটি সংকলন।
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে সুরেন্দ্রনাথ করকে।
২৯. মানুষের ধর্ম (১৯৩৩) –
লেখকের ধর্ম ও দর্শন বিষয়ক গ্রন্থটি ৩টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত।
এছাড়া গ্রন্থের ‘পরিশিষ্ট’ অংশে ‘মানবসত্য’ নামে একটি প্রবন্ধ আছে।
৩০. আত্মশক্তি (১৯০৫) –
দেশ ও জাতিগঠন সম্পর্কে নানা ভাবনার পরিচায়ক এই গ্রন্থটি। রাষ্ট্র সম্পর্কিত সাধনা, কর্মনিষ্ঠা, আত্মশক্তিতে বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে স্বদেশি সমাজ গঠনের কথা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ ‘নেশন কী’ এবং শেষ প্রবন্ধ ‘দেশীয় রাজ্য’।
গ্রন্থটিতে মোট প্রবন্ধ আছে ১টি।
৩১. কালান্তর (১৯৩৭) –
সমকালীন ভারতবর্ষের নানা রাজনৈতিক সমস্যার কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে এই গ্রন্থে। গ্রন্থের প্রবন্ধগুলিতে রাজনীতি, ইতিহাস, অর্থনীতি বেশ সুষ্ঠুভাবে আলোচনা করেছেন কবি। প্রথম প্রবন্ধ ‘কালান্তরে’র নামানুসারে গ্রন্থের এই নামটি দেওয়া হয়েছে।
৩২. বিশ্বপরিচয় (১৯৩৭) –
গ্রন্থটি লেখকের বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ। বিজ্ঞানের নানা বিষয় তথ্যযোগে সুন্দরভাবে আলোচনা করেছেন কবি।
মোট অধ্যায় সংখ্যা ৬টি। অধ্যায়গুলির নাম ‘পরমাণুলোক’, ‘সৌরজগৎ’, ‘গ্রহলোক’, ‘ভুলোক’, ও ‘উপসংহার’।
৩৩. পথের সঞ্চয় (১৯৩৯) –
গ্রন্থটি মোট ২২টি পত্রের সংকলন। প্রথম প্রবন্ধটির নাম ‘যাত্রার পূর্বপত্র’ শেষ পত্রটির শিরোনাম ‘আমেরিকার চিঠি’। গ্রন্থের অধিকাংশ পত্র ‘তত্ত্ববোধিনী’ ও ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
৩৪. ছেলেবেলা (১৯৪০) –
আত্মপরিচয়মূলক গ্রন্থ। লেখকের ছোটবেলার নানা কাহিনিকথা লিপিবদ্ধ হয়েছে এই গ্রন্থে। ছেলেবেলার বৈচিত্র্যময় পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা বালক ও কিশোর রবীন্দ্রনাথের কথা পাওয়া যায়।
মোট ১৪টি পরিচ্ছেদে সমগ্র গ্রন্থটি বিন্যস্ত।
৩৫. আশ্রমের রূপ ও বিকাশ (১৯৪১) –
কবির শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নানা সমস্যা, শিক্ষাদান পদ্ধতি, বিভিন্ন শিক্ষা-পরিকল্পনা, আশ্রমের শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে কবির সুগভীর বিচার বিশ্লেষণ ধরা পড়েছে।
মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ৩টি।
৩৬. সভ্যতার সংকট (১৯৪১) –
১৩৪৮ বঙ্গাব্দে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রজন্মোৎসব উপলক্ষে পুস্তিকা আকারে বিতরন করা হয়েছিল। পটভূমিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সংকট থেকে সভ্যতাকে রক্ষা করার কথা ব্যক্ত হয়েছে এই গ্রন্থে।
৩৭. আত্মপরিচয় (১৯৪৩) –
আত্মপরিচয়মূলক গ্রন্থ। গ্রন্থে মোট ৫টি প্রবন্ধ আছে। বিশ্বভারতী প্রকাশিত ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’র চতুর্দশ খণ্ডে এই গ্রন্থে পাঁচটি প্রবন্ধ থাকলেও মূল গ্রন্থে প্রবন্ধের সংখ্যা ছয়টি। ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’র উক্ত খন্ডের ‘গ্রন্থপরিচয়’ অংশে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে ‘৫ সংখ্যক প্রবন্ধটি উক্ত গ্রন্থের ৬-সংখ্যক প্রবন্ধ।’ গ্রন্থের এক একটি প্রবন্ধ স্বতন্ত্র শিরোনামে ‘ভারতী’, ‘সবুজপত্র’, ‘প্রবাসী’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
৩৮. ভারতবর্ষ (১৯০৬) –
গ্রন্থের সমস্ত প্রবন্ধই ‘নবপর্যায় বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধের নাম ‘নববর্ষ’ এবং শেষ প্রবন্ধের নাম ‘বিজয়া সম্মিলন’।
গ্রন্থে মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ১০টি।
৩৯. মহাত্মা গান্ধী (১৯৪৭) –
মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে কবি বিভিন্ন সময় যে বক্তব্য রেখেছিলেন তারই সংকলন এই গ্রন্থটি।
মোট প্রবন্ধের সংখ্যা ৫টি।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রবন্ধ হল ‘গান্ধিজী’, ‘চৌঠা আশ্বিন’, ‘ব্রত উদযাপন’ ইত্যাদি। প্রবন্ধগুলি ‘প্রবাসী’ ও ‘বিচিত্রা’য় প্রকাশিত।
রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের আঙ্গিকগত বৈশিষ্ট্য:-
(ক) বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা গদ্য প্রবন্ধের যে গদ্যরীতির যে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তাঁর প্রভাব রবীন্দ্রনাথের প্রথমদিকের প্রবন্ধে থাকলেও নিজ প্রতিভাবলে বাংলা প্রবন্ধের যে গদ্যরীতির যে মৌলিক প্রবর্তন করলেন তাতে তাঁর প্রবন্ধ সাহিত্য সমুজ্বল হয়ে রয়েছে ।
(খ)তাঁর প্রবন্ধের গদ্যরীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তা ভাবের গদ্য, জ্ঞানের গদ্য নয়।। তিনি ঘন ঘন ভাষা ও রীতির পরিবর্তন করেছিলেন বলেই তাঁর গদ্যের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গদ্যের এই ঔজ্জ্বল্য ব্যক্তিত্বের স্পর্শজনিত। তাঁর রীতি যেমন বস্তুধর্মী, ভাষাও তেমনই প্রাণময়। ফলে তাঁর শিল্পীজনোচিত রসস্নিগ্ধ, মধুর ও মোহময় ভাষা
পাঠককে আকর্ষণ করে।
(গ)রবীন্দ্রনাথের শব্দচয়নের দক্ষতায়, শব্দ সংস্থাপনের অভিনব কৌশলে, ভাব প্রকাশের সংযমে, ভাষার স্বরবৈচিত্র্য ও মাধুর্যে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের রীতি হয়ে উঠেছে রমণীয়।
(ঘ) রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের প্রকৃতি নির্ণয় করতে গিয়ে অতুলচন্দ্র গুপ্ত লিখেছিলেন-
“রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ মহাকবির হাতের প্রবন্ধ। সাহিত্যের সমালোচনায়, কী রাষ্ট্র ও সামাজিক সমস্যার আলোচনায়, বাংলা কবিতার ছন্দবিচারে, কি বাংলা ব্যাকরণের রীতি ও শব্দতত্ত্বের স্বরূপ উদঘাটনে —সর্বত্র মহাকবির মনের ছাপ, সর্বত্র মহাকবির বাগ্বৈভব। বিচারে যুক্তির মধ্যে এল উপমা। বিষয়ের সঙ্গে বিষয়ান্তরের স্পর্শে অদ্ভুত ঐক্যের আলোর চমক পথ আলো করে দিল।”
(ঙ) প্রমথনাথ বিশী ও বিজিত কুমার দত্ত ‘বাংলা গদ্যের পদাঙ্ক’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের গদ্যরীতি সম্পর্কে বলেছেন- “কবিচিত্তের একই উৎস থেকে উৎসারিত হয়েছে তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধের ধারা। তাঁর প্রবন্ধেও লেগেছে কবিমনের স্পর্শ। তাঁর গদ্যময় রচনাও কল্পনার ঐশ্বর্যে রসময় হয়ে উঠেছে। প্রবন্ধগুলির ভাষা কাব্যিক, বিষয় কাব্যরসসিক্ত। তাঁর গদ্য—কবির কলমের গদ্য।তাঁর ধর্ম কাব্যধর্ম।”
(চ)গদ্যের অলঙ্করণরীতিও প্রশংসনীয়। বক্রোক্তি, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি প্রভৃতি অলংকারের ব্যবহারও পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধে। চিত্রধর্মও তাঁর গদ্যরীতিকে দিয়েছে সুষমা। সেই সঙ্গে রয়েছে কৌতুকরস।
Important SAQ question 👇
1.রবীন্দ্রনাথের পঞ্চভূত গ্রন্থটি কাকে উৎসর্গ করা হয়েছে ?
উঃ গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে মহারাজ শ্রী জগদিন্দ্রনাথ রায় বাহাদুরকে।
2. রবীন্দ্রনাথের শিক্ষ৷ বিষয়ক প্রবন্ধ গ্রন্থ গুলি কী কী ?
উঃ শিক্ষা (১৯০৮), শিক্ষার বিকিরণ (১৯৩৩), আশ্রমের রুপ ওবিকাশ (১৯৪১), বিশ্ব ভারতী (১৯৫১)
3. রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত প্রবন্ধ গ্রন্থ গুলি কী কী ?
উঃ পঞ্চভূত (১৮৯৭), বিচিত্র প্রবন্ধ (১৯০৭)
4. রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ গ্রন্থ গুলি কী কী ?
উঃ সাহিত্য (১৯০৭), লোক সাহিত্য (১৯০৭), প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭), আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭), সাহিত্যের পথে (১৯৩৬),
সাহিত্যের স্বরুপ (১৯৫০)
5. রবীন্দ্রনাথের ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধ গ্রন্থ গুলি কী কী ?
উঃ ধর্ম (১৯০৯), শান্তিনিকেতন (১৯০৯-১৯১৬), মানুষের ধর্ম (১৯৩৩)।
6. রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রে মোট কটি পত্র রয়েছে ?
উঃ মোট পত্র আছে ১৫১ টি।
7. রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক সংক্রান্ত প্রবন্ধ গুলি কোন সঙ্কলনে সঙ্কলিত হয়েছে ?
উঃ কালান্তর (১৯৩৭)
8. রবীন্দ্রনাথের ইতিহাস সংক্রান্ত প্রবন্ধ গুলি স্থান পেয়েছে কোন গ্রন্থে ?
উঃ ভারতবর্ষ (১৯০৬), ইতিহাস (১৯৫৫)
9. রবীন্দ্রনাথ ধ্রুপদি ভারতীয় সাহিত্য ও আধুনিক সাহিত্যের সমালোচনা করেছেন কোন গ্রন্থে ?
উঃ রবীন্দ্রনাথ ধ্রুপদি সাহিত্য ও আধুনিক সাহিত্যের সমালোচনা করেছেন – প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭) ও আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭)
এই গ্রন্থ দুটিতে।
10. রবীন্দ্রনাথের ভাষাতত্ত্ব মূলক চিন্তা ভাবনা কোথায় লিপিবদ্ধ ?
উঃ শব্দতত্ত্ব (১৯০৯), বাংলা ভাষা পরিচয় (১৯৩৮) ইত্যাদি গ্রন্থে।
11. রবীন্দ্রনাথ কোন কোন গ্রন্থে ছন্দ ও সঙ্গীত বিষয়ে আলোচনা করেছেন ?
উঃ ছন্দ (১৯৩৬), ও সঙ্গীত চিন্তা (১৯৬৬)।
12. রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা সংক্রান্ত চিন্তা ভাবনার প্রকাশ পেয়েছে কোন প্রবন্ধে ?
উঃ শিক্ষা (১৯০৮) প্রবন্ধ গ্রন্থে ।
13)রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকথা মূলক প্রবন্ধ গুলি কী কী ?
উঃ জীবনস্মৃতি (১৯১২) ও ছেলেবেলা (১৯৪০)
14)রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রীয় ভাবনা মূলক প্রবন্ধ গ্রন্থ গুলি কী কী ?
উঃ ভারতবর্ষ (১৯০৬), স্বদেশ (১৯০৮), কালান্তর (১৯৩৭),সভ্যতার সঙ্কট (১৯৪১)।
রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ আলোচনার সম্পূর্ণ PDF টি ডাউনলোড করে নিতে পারো 👇
আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇
বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান
বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান
গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।
বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান