tags: বৈষ্ণব পদ, বিদ্যাপতি, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিদ্যাপতিকে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ কী, বিদ্যাপতি কোন ভাষায় পদ রচনা করেন, বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস, কাকে , কেন দ্বিতীয় বিদ্যাপতি বলা হয়, রূপানুরাগ পর্যায়ের পদ রচনায় শ্রেষ্ঠ কে, চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতির পদের পার্থক্য, মধ্যযুগের দু’জন মুসলমান বৈষ্ণব পদকর্তার নাম, গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ ও গৌরচন্দ্রিকার পদের পার্থক্য, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস , গোবিন্দদাস,
১। বৈষ্ণব পদাবলি ছাড়া বিদ্যাপতি আর কী কী গ্রন্থ রচনা করেছিলেন ? প্রকাশকাল উল্লেখ করে চারটি গ্রন্থের নাম লিখুন।
উঃ- ◼️ বিদ্যাপতির অন্যান্য গ্রন্থ সমূহ : বিদ্যাপতি বৈষ্ণব পদাবলি ছাড়া ভৌগোলিক বিবরণ রচনা করেন, তীর্থকাহিনির আদলে “ভূপরিক্রমা”, স্তোত্র- পূজার্চনা ও শাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ “গঙ্গাবাক্যাবলী”, তুর্কি অত্যাচারের ইতিহাস “কীর্তিলতা” ও “কীর্তি পতাকা”, সংস্কৃতে লেখা ক্ষুদ্র নাটক “গোরক্ষ বিজয়” , “মণিমঞ্জুরী” ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেন।
◼️ প্রকাশকালসহ তাঁর চারটি গ্রন্থ:
ক) ‘পুরুষ পরীক্ষা’ (১৪১০)
খ) ‘ভূপরিক্রমা’ (১৪০০)
গ) ‘দুর্গা ভক্তিতরঙ্গিনী'(১৪৪০-৬০)
ঘ) ‘শৈবসর্বস্বহার'(১৪৩০-৪০)।
২। বিদ্যাপতি কোন ভাষায় পদ রচনা করেন ? বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিদ্যাপতিকে অন্তভূর্ক্ত করার কারণ কী ?
উঃ-◼️ বিদ্যাপতির রচিত পদের ভাষা: বিদ্যাপতি মৈথিলি ভাষায় পদ রচনা করেন।
◼️ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিদ্যাপতির অন্তভূর্ক্তির কারণ :
i) মধ্যযুগের অন্যতম সাহিত্য ধারা বৈষ্ণব পদাবলি। বিদ্যাপতির পাঁচ শতাধিক পদ বাংলা সাহিত্যে রয়েছে।
ii) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিদ্যাপতির পদ সকলেই আস্বাদন করতেন।
iii) বাংলায় বিদ্যাপতির পদগুলো ব্রজবুলি ভাষায় পাওয়া যায়। এই পদগুলি আধুনিক কবিদেরও প্রভাবিত করে।
iv) বিদ্যাপতিকে বাদ দিয়ে বাংলার মধ্যযুগের সাহিত্যের ইতিহাস রচনা সম্ভব নয় বলে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁকে অন্তভূর্ক্ত করা হয়েছে।
৩। বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস কাকে বলে ? সেগুলির নাম লিখুন।
উঃ-◼️ বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস : মানব মনে নিরন্তর যে ভাব চলে মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা সেই ভাব রসে পরিণত হয়। বৈষ্ণব তত্ত্বানুযায়ী রাধা-কৃষ্ণের লীলা কাহিনি ভক্তিরসকে আশ্রয় করে “কৃষ্ণরতি” লাভের পথে এগিয়ে চলেছে। এই “কৃষ্ণরতি”লাভের পথে বৈষ্ণবগণ যে রস আস্বাদন করেন তাকেই বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস বলা হয়।
◼️ বৈষ্ণবীয় পঞ্চরসগুলির নাম : i)শান্ত রস, ii) দাস্য রস, iii) সখ্য রস, iv) বাৎসল্য রস ও v) মধুর রস ।
৪। কাকে কেন দ্বিতীয় বিদ্যাপতি বলা হয় ?
উঃ-◼️ দ্বিতীয় বিদ্যাপতি : বৈষ্ণব পদকর্তা গোবিন্দ দাস হলেন “দ্বিতীয় বিদ্যাপতি”।
◼️দ্বিতীয় বিদ্যাপতি বলার কারণ :
i) বিদ্যাপতির রচিত পদের মতো ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেন গোবিন্দ দাস।
ii) ভাষার ঐশ্বর্য, ছন্দ-অলঙ্কার ও শিল্প বোধের জন্য বিদ্যাপতির সঙ্গে তুলনীয়।
iii) বিদ্যাপতির অসম্পূর্ণ পদ সম্পূর্ণ করেন, যেখানে দু’জনের মধ্যে কোনো ভাবান্তর পাওয়া যায় না।
iv) পরবর্তী বৈষ্ণব পদকর্তাগণ তাঁকে “দ্বিতীয় বিদ্যাপতি” বলে সম্মানিত করেন। যেমন দেখা যায় বল্লভদাসের পদটিতে —
“ব্রজের মধুরলীলা যা শুনি দরবে শিলা
গাইলেন কবি বিদ্যাপতি।
তাহা হইতে নহে ন্যূন গোবিন্দেরকবিত্ব গুণ
গোবিন্দ দ্বিতীয় বিদ্যাপতি।।”
৫। রূপানুরাগ পর্যায়ের পদ রচনায় শ্রেষ্ঠ কে ? তাঁর একটি রূপানুরাগ পর্যায়ের পদের দু’ছত্র লিখুন।
উঃ-◼️ রূপানুরাগ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ পদকর্তা: এই পর্যায়ের পদের শ্রেষ্ঠ পদকর্তা হলেন জ্ঞানদাস।
◼️ তাঁর রূপানুরাগ পর্যায়ের পদের দু’ছত্র:
“রূপলাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর।।
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে।
পরাণ পিরিতি লাগি স্থির নাহি বান্ধে ।।” আরও দেখুন👉 প্রশ্নোত্তরে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য’
৬। চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতির পদের পার্থক্য লিখুন।
উঃ-◼️ বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের পদের পার্থক্য: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের পদের পার্থক্য গুলি হল–
i) বিদ্যাপতির পদ মৈথিলি ভাষায় রচিত, বাংলায় ব্রজবুলি ভাষায় প্রচারিত; যেখানে চণ্ডীদাসের পদ বাংলা ভাষায় রচিত ও প্রচারিত।
ii) বিদ্যাপতি রাজসভার কবি বলে তাঁর পদ ছন্দ-অলঙ্কারে পাণ্ডিত্যপূর্ণ; আর চণ্ডীদাসের পদ সহজ-সরল আবেগপূর্ণ ভাষায় রচিত।
iii) বিদ্যাপতির রাধা Round character; কিন্তু চণ্ডীদাসের রাধা Flat character ।
iv) বিদ্যাপতির পদ রাজকণ্ঠের হার; চণ্ডীদাসের পদ রুদ্রাক্ষের মালার মতো।
৭। গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ ও গৌরচন্দ্রিকার পদের মধ্যে দুটি পার্থক্য লিখুন। একটি করে গৌরাঙ্গ বিষয়ক ও গৌরচন্দ্রিকার পদের উদাহরণ দিন।(প্রথম পংক্তি শুধু)
উঃ-◼️ গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ ও গৌরচন্দ্রিকা পদের মধ্যে পার্থক্য:
i) গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ গৌরাঙ্গের জীবন নিয়ে রচিত ; আর গৌরচন্দ্রিকার পদ পালা কীর্তনের ভূমিকায় গাওয়ার মতো পদ।
ii) গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদে আবেগ , তথ্য ও জীবনীর প্রাধান্য বেশি। আর গৌরচন্দ্রিকার পদ রাধা ভাবে ভাবিত পালা কীর্তনের প্রাধান্য বেশি।
◼️ উদাহরণ:
[১] ” কি লাগিয়া দণ্ড ধরে অরুণ বসন পরে…” ( গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ)।
[২] ” নীরদ নয়নে নীরঘন সিঞ্চনে…” (গৌরচন্দ্রিকার পদ)।
৮। কাকে , কেন চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য বলা হয় লিখুন।
উঃ-◼️ চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য : বৈষ্ণব পদকর্তা জ্ঞানদাস হলেন ” চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য “।
◼️ ভাবশিষ্য বলার কারণ:
i) চণ্ডীদাসের মতো জ্ঞানদাস সহজ-সরল ভাষায় পদ রচনা করেন।
ii) চণ্ডীদাসের মতো জ্ঞানদাস ভাবতন্ময় কবি।
iii) চণ্ডীদাসের পদের মতোই জ্ঞানদাসের পদ সমভাবে প্রচলিত আছে। এবং
iv) চণ্ডীদাসের রাধার মতো জ্ঞানদাসের রাধা প্রেমিকার চেয়ে আরাধিকা – উপাসিকা।
এই কারণে জ্ঞানদাসকে ” চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য” বলা হয়।
৯। দু’জন করে প্রাক্-চৈতন্য, চৈতন্য সমসাময়িক ও চৈতন্যোত্তর কালের বৈষ্ণব পদকর্তার নাম লিখুন।
উঃ-◼️ প্রাক্- চৈতন্য কালের কবি: প্রাক্- চৈতন্য কালের দু’জন বৈষ্ণব পদকর্তা হলেন –– ১) বিদ্যাপতি, ২) চণ্ডীদাস।
◼️ চৈতন্য সমসাময়িক কবি: চৈতন্য সমসাময়িক পদকর্তা হলেন — ১) বাসুদেব ঘোষ, ২) গোবিন্দ ঘোষ।
◼️চৈতন্যোত্তর কালের কবি: চৈতন্যোত্তর কালের পদকর্তা হলেন– ১) গোবিন্দ দাস ও ২) জ্ঞানদাস।
১০। মধ্যযুগের দু’জন মুসলমান বৈষ্ণব পদকর্তার নাম লিখুন। বৈষ্ণব পদ ও শাক্ত পদের দু’টি পার্থক্য লিখুন।
উঃ-◼️ মধ্যযুগের দু’জন মুসলমান বৈষ্ণব পদকর্তা : মধ্যযুগের দু’জন মুসলমান বৈষ্ণব পদকর্তা হলেন– ১) সৈয়দ মতুর্জা ২) আলি রাজা।
◼️ বৈষ্ণব পদ ও শাক্ত পদের পার্থক্য : বৈষ্ণব পদ ও শাক্ত পদের মধ্যে পার্থক্য গুলি হল–
i) বৈষ্ণব পদ গুলি রাধা কৃষ্ণের লীলা বিষয়ক পালাগান বা কীর্তন; আর শাক্ত পদ হল কালী কীর্তন বা মাতৃ সাধনার গান।
ii) বৈষ্ণব পদে রাধা প্রেমিকা, আরাধিকা রূপে আবির্ভূতা ; কিন্তু শাক্ত পদে উমা কন্যা, গৃহিণী ও মাতা রূপে আরাধ্যা হন।
১১) বৈষ্ণবপদ কাকে বলে ? এগুলির নাম বৈষ্ণবপদ কেন ?
উত্তর : বৈষ্ণবপদ : মধ্যযুগে রচিত রাধাকৃষ্ণের লীলা বিষয়ক বিভিন্ন রস নির্ভর গানগুলিকে বৈষ্ণবপদ বলা হয় ।
বৈষ্ণবপদ নাম করণের কারণ : প্রকীর্ণ কবিতার মতো সংক্ষিপ্ত গেয় ছন্দবদ্ধ রচনাকে পদ বলা হয় ।বিভিন্ন ভাবের উপর রচিত ছন্দবদ্ধ বৈষ্ণব গানগুলি তাই পদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ।
১২) মধ্যযুগে বৈষ্ণব পদাবলী সৃষ্টির পিছনে কারণ গুলি কী কী ?
উত্তর : মধ্যযুগে বৈষ্ণব পদাবলী সৃষ্টির পিছনে কারণ গুলি হল –
i) হিন্দু সংস্কৃতির পুনরুত্থান ।
ii) বিজাতীয় ধর্ম সংস্কৃতির বিপরীতে অহিংস প্রেমের ধর্মীয় পরিবেশ রচনা ।
iii) বৈষ্ণবীয় সাধনার প্রধান অঙ্গ হল বৈষ্ণব গানগুলি ।
iv) বৈষ্ণব ধর্মের ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের ফলে সক্ষম কবিদের দ্বারা এই গানগুলি রচিত হতে থাকে ।
১৩) বৈষ্ণব কারা ? তাদের শ্রেণীগত পরিচয় দিন ?
উত্তর : বিষ্ণুর উপাসকদের এক কথায় বৈষ্ণব বলা হয় ।
∆ শ্রেণিগত পরিচয় : বৈষ্ণবদের দুটি শ্রেণির পরিচয় পাওয়া যায় । যথা –
i) গৌড়ীয় বৈষ্ণব, ii) সাধারণ বৈষ্ণব ।
১৪) প্রাক চৈতন্য বৈষ্ণব পদের সাথে চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব পদের পার্থক্য কোথায় ?
উত্তর : প্রাক চৈতন্য বৈষ্ণব পদের সাথে চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব পদের পার্থক্য গুলি হল –
i) প্রাক চৈতন্য পর্যায়ের বৈষ্ণব পদে ঐশ্বর্য রসের সাধনা প্রধান ছিল । আর চৈতন্যোত্তর পর্যায়ে মধুর রসের সাধনা প্রধান ছিল ।
ii) চৈতন্যপূর্ববর্তী সময়ে রাগানুকা ভক্তির প্রচলন হয়নি । কিন্তু চৈতন্যপরবর্তী সময়ে রাগানুকা ভক্তির প্রচলন ঘটে ।
iii) চৈতন্য পূর্ববর্তী সময়ে গৌরচন্দ্রিকা পদ সৃষ্টি হয়নি । কিন্তু চৈতন্য পরবর্তী সময়ে পালা কীর্তনের পূর্বে গৌরচন্দ্রিকার পদ গাওয়া হত ।
iv) চৈতন্য পূর্ববর্তী সময়ে পালা কীর্তনের অস্তিত্ব ছিল না । কিন্তু চৈতন্য পরবর্তী সময়ে পালা কীর্তন গানের প্রচলন ঘটে ।
১৫) বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস কাকে বলে ? সেগুলি কী কী ?
উত্তর : বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস : মানব মনে নিরন্তন যে ভাব চলে মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা সেই ভাব রসে পরিণীত হয় । বৈষ্ণব তত্ত্বানুযায়ী রাধা কৃষ্ণের লীলা কাহিনী ভক্তিরসকে আশ্রয় করে কৃষ্ণরতি লাভের পথে এগিয়ে চলেছে । এই কৃষ্ণরতি লাভের পথে বৈষ্ণবগন যে রস আস্বাদন করেন তাকেই বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস বলা হয় ।
∆ বৈষ্ণবীয় পঞ্চরস গুলি হল শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুররস ।
১৬) উদাহরণ দিয়ে বৈষ্ণব পদের শ্রেণি বিভাগ করুন ?
উত্তর : বৈষ্ণব পদ দুই প্রকার । যথা – i) রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক । ( পূর্বরাগ, অনুরাগ, মাথুর, মান, প্রার্থনা, অভিসার, প্রেমবৈচিত্র্য বা আক্ষেপানুরাগ ইত্যাদি ) ।
ii) গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ । ইহা আবার দুই প্রকার । যথা ( গৌরচন্দ্রিকা ও গৌরাঙ্গের জীবনী বিষয়ক ) ।
১৭) বিদ্যাপতি কোন ভাষায় পদ রচনা করেন ? বাংলায় সেগুলি কী ভাষার পদ নামে পরিচিত ?
উত্তর : বিদ্যাপতি মিথিলা বা মৈথিলি ভাষায় পদ রচনা করেন ।
∆ বাংলায় বিদ্যাপতির লেখা পদগুলি ব্রজবুলি ভাষার পদ নামে পরিচিত । আরও দেখুন👉 প্রশ্নোত্তরে ‘চর্যাপদ’
১৮) কাকে, কেন অভিনব জয়দেব বলা হয় ?
উত্তর : বৈষ্ণবীয় পদকর্তা বিদ্যাপতি কে অভিনব জয়দেব বলা হয় ।
∆ অভিনব জয়দেব বলার কারণ :
i) জয়দেব গীতগোবিন্দ – এ যেভাবে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা ব্যক্ত করেছেন তার অনুসরণে বিদ্যাপতি বৈষ্ণব পদ রচনা করেন ।
ii) গীতগোবিন্দ এর মতই সংগীত গুণ বিদ্যাপতির পদে বিদ্যমান ।
iii) গীতগোবিন্দ এর রাধা যেভাবে কৃষ্ণ সাধনা করেছে, তার অনুসরণেই বিদ্যাপতির পদগুলি সাধনার জন্যে রচিত ।
iv) ছন্দ, অলঙ্কার, ভাষা, রস বিচারে বিদ্যাপতি সত্যিই ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যায়িত হওয়ার যোগ্য ।
১৯) কাকে, কেন মৈথিলি কোকিল বলা হয় ?
উত্তর : বিদ্যাপতি কে মৈথিলি কোকিল বলা হয় ।
∆ মৈথিলি কোকিল বলার কারণ :
i) মিথিলার একমাত্র বিদ্যাপতিই বহু বৈষ্ণব পদের রচয়িতা ।
ii) ভাষা, ছন্দ, অলঙ্কার ও গীতিধর্মিতায় সুমিষ্ট পদগুলি সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে ।
iii) সুমিষ্ট সংগীত গুলির জন্যই রাজকৃষ্ণ মুখ্যোপাধ্যায় কোকিলের সুমিষ্ট কণ্ঠের সাথে তুলনা করে তাকে ‘মৈথিলি কোকিল’ বলেন ।
২০) বাংলাদেশের বৈষ্ণব সমাজে বিদ্যাপতির জনপ্রিয়তার কারণ কী ?
উত্তর : বাংলাদেশে বিদ্যাপতির জনপ্রিয়তার কারণ :
i) বিদ্যাপতির পদগুলি বাংলার শিক্ষার্থী মারফৎ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ।
ii) বিদ্যাপতির পদগুলি বাংলা ও মৈথিলির মিশ্রণে সুমিষ্ট ব্রজবুলির আকার ধারন করে ।
iii) স্বয়ং চৈতন্যদেব বিদ্যাপতির পদ আস্বাদন করতেন ।
iv) বিদ্যাপতির অনুকরণে অনেক পদকর্তা পদ রচনা করেন ।
২১) বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের রাধা চরিত্রের পার্থক্য লিখুন ।
উত্তর : বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের রাধা চরিত্রের পার্থক্য গুলি হলঃ
i) বিদ্যাপতির রাধা মিলন ও বিরহে কাতর, আর চণ্ডীদাসের রাধা মিলন বিরহে সমান ।
ii) বিদ্যাপতির রাধা Round character, আর চণ্ডীদাসের রাধা Flat character .
iii) বিদ্যাপতির রাধা চপলা, চঞ্চলা কিশোরী আর চণ্ডীদাসের রাধা ধ্যান গম্ভীর উপাসিকা ।
২২) বিদ্যাপতির পদকে ‘রাজকন্ঠের হার’ আর চণ্ডীদাসের পদকে ‘রুদ্রাক্ষের মালা’ বলে কে, কেন অভিহিত করেন ?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাপতির পদকে ‘রাজকণ্ঠের হার ‘ আর চণ্ডীদাসের পদকে ‘রুদ্রাক্ষের মালা ‘ বলেছেন ।
∆ অভিহিত করার কারণ : বিদ্যাপতির পদে বাগ বৈদগ্ধ, মণ্ডন কলা, নাগরিক জীবনের ভাষা ও অলঙ্কারের ঐশ্বর্য প্রকাশ পেয়েছে ; আর অন্যদিকে চণ্ডীদাসের পদে রয়েছে গ্রাম্য সরলতা গৈরিক ও নিরাভরণ আধ্যাত্মিকতা । এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাপতির পদকে রাজকন্ঠের হার আর চণ্ডীদাসের পদকে রুদ্রাক্ষের মালার সাথে তুলনা করেছেন ।
২৩) চণ্ডীদাসের পদের বৈশিষ্ট্য গুলি লিখুন ?
উত্তর : চণ্ডীদাসের পদের বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
i) সহজ সরল ভাষায় পদগুলি রচিত ।
ii) অন্তরের ভক্তি নিষ্ঠা ও গীতিধর্মিতায় পদগুলি হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের বোধগম্য ।
iii) চণ্ডীদাসের রাধা প্রথম থেকেই ধ্যান গম্ভীর উপসিকা ।
iv) রবীন্দ্রনাথ সহজ সরল এই পদগুলিকে ঐশ্বর্যময় রুদ্রাক্ষের মালার সাথে তুলনা করেছেন ।
২৪) চণ্ডীদাসের পদের জনপ্রিয়তার কারণ কী ?
উত্তর : চণ্ডীদাসের পদের জনপ্রিয়তার কারণ গুলি হল –
i) চণ্ডীদাসের পদ সহজ সরল ও আন্তরিক ।
ii) পদগুলি নিরাভরণ ও হৃদয়ের ঐকান্তিকতায় সমুজ্জ্বল ।
iii) স্বয়ং চৈতন্যদেব চণ্ডীদাসের পদ আস্বাদন করতেন । ‘শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত ‘ গ্রন্থে রয়েছে –
” বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস শ্রী গীতগোবিন্দ ।
এই তিন গীতে করায় প্রভুর আনন্দ ।।”
২৫) কোন শ্রেণির পদ রচনায় চণ্ডীদাসের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে ? উদাহরণ দিন ।
উত্তর : চণ্ডীদাস ‘পূর্বরাগ ‘ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি ।
∆ উদাহরণ :
” রাধার কি হইল অন্তরে ব্যথা
বসিয়া বিরলে থাকয়ে একলে ।
না শুনে কাহার কথা “
২৬) কোন শ্রেণির পদ রচনায় বিদ্যাপতি শ্রেষ্ঠ ? উদাহরণ দিন ।
উত্তর : মাথুর পর্যায়ের পদ রচনায় বিদ্যাপতি শ্রেষ্ঠ ।
∆ উদাহরণ :
” এসখি হামারি দুঃখের নাহি ওর ।
এভরা বাদর মাহ ভাদর ।।
শূন্য মন্দির মোর ।”
২৭) ব্রজবুলি ভাষা কী ? এই ভাষায় পদ রচনা করেছেন এমন চারজন পদকর্তার নাম লিখুন ?
উত্তর : ব্রজবুলি ভাষা : ব্রজবুলি হল মূলত এক ধরনের কৃত্রিম উপভাষা । যা বাংলা ও মৈথিলির মিশ্রিত রূপ ।
∆ এই ভাষায় পদ রচনা করেন –
i) গোবিন্দ দাস,
ii) জ্ঞানদাস,
iii) বলরাম দাস ও
iv) যশরাজ খান ।
২৮) মধ্যযুগের দুজন মুসলমান পদকর্তা ও চৈতন্য সমসাময়িক পদকর্তার নাম লিখুন ?
উত্তর : দুজন মুসলমান পদকর্তা হলেনঃ i) সৈয়দ মুর্তজা ও ii) আলিরাজা ।
∆ চৈতন্য সমসাময়িক পদকর্তা হলেন – i) বাসুদেব ঘোষ ও ii) গোবিন্দ ঘোষ ।
প্রস্তুতির জন্য আরও পরীক্ষাগুলি দিতে পারোঃ👇
১। সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন ও মধ্যযুগ) MCQ
৪। কারক অ-কারক SAQ Practice SET
৫। শব্দভাণ্ডার MCQ Practice SET
৬। কাব্যসাহিত্যের ইতিহাস (আধুনিক যুগ) MCQ
৭। ধ্বনি ও বর্ণ MCQ practice SET
৮। মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস SAQ SET
৯। সাহিত্যের রূপরীতি/ নাট্য সাহিত্য SAQ
নাট্যসাহিত্যে উৎপল দত্তের অবদান
বাংলা নাটকে অমৃতলাল বসুর অবদান
নাট্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের অবদান
নাট্যসাহিত্যে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান
নাট্যসাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান
নাট্যসাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্র-র অবদান
নাট্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান
বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান
গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।
বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা
আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান
গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান
কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
কথাসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের অবদান