You are currently viewing ‘গুরু’ নাটক || রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || প্রশ্নোত্তরে ‘গুরু’ নাটক

‘গুরু’ নাটক || রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || প্রশ্নোত্তরে ‘গুরু’ নাটক

আজ তমাদের জন্য থাকছেঃ রবীন্দ্রনাথের ‘গুরু’ নাটক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রশ্নোত্তরে ‘গুরু’ নাটক, গুরু নাটকের নোটস পিডি এফ, অচলায়তন নাটকের প্রশ্ন, পাঁচ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর, একাদশ শ্রেণির সাজেশন, গুরু নাটক, গুরু নাটকে কয়টি গান আছে, ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন ও উত্তর।

১) “ও আজ যেখানে বসছে সেখানে তোমাদের তলোয়ার পৌঁছায় না।” – কার সম্পর্কে কে এই কথা বলেছেন ? এই বক্তব্যের তাৎপর্য কী ?

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু ‘ নাটকে গুরু মহাপঞ্চক সম্পর্কে এই কথাগুলি বলেছিলেন ।

উদ্ধৃত বক্তব্যটি এই নাটকের মূল চরিত্র দাদাঠাকুরের। 

∆  অচলায়তনের  জীবন যাত্রা ছিল মূলত পুঁথিনির্ভর, সেখানে শাস্ত্র আচরণই একমাত্র পালনীয় বিষয়। কিন্তু অচলায়তনের দৃষ্টিতে ‘অস্পৃশ্য যূনকরা ছিল নিছকই কর্মজীবী! তারা মন্ত্র জানে না, গুরুবাদ মানে না। সারাদিন ধরে নানারকম মন্ত্র আওড়ানাের পরিবর্তে যুনকেরা জীবনের সার্থকতা খোঁজে কাজের মধ্যে। তাই মাঠে চাষ করে তারা আনন্দ পায়—সেই কাজের মধ্যেই তারা প্রাণের গানের সুর ও ভাষা খুঁজে পায়। চষা মাটির গন্ধে তারা বাতাস ভরিয়ে তােলে। রােদ বা বৃষ্টি, কোনাে কিছুই তাদেরকে এই কর্মমুখর দিনযাপন থেকে বিরত করতে পারে না। কাকুড়ের চাষ, খেসারি ডালের চাষ—যাকে অচলায়তনের দৃষ্টিকোণ থেকে গহিত কাজ বলে মনে করা হয়, তার মধ্যে খাদ্য জোগানাের আনন্দকেই খুঁজে নেয় খুনকেরা। যুনকেরা বজ্রবিদারণ মন্ত্র পড়েনি, মরীচী, মহাশীতবতী বা উয়ীষবিজয় মন্ত্রও জানে না। কিন্তু তারা লােহার কাজ করে, ক্ষৌরকর্মের সময় গাল কেটে রক্ত বেরােলেও খেয়া নৌকোয় উঠে নদী পেরােতে ভয় পায় না। এইভাবে অচলায়তনের অন্ধকার কক্ষে নয়, যূনকরা জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায় তাদের‌ কাজের মধ্যে, মুক্ত পৃথিবীতে। কাজের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর সঙ্গে‌ নিজেদের নিবিড় যােগাযােগ এখানে স্পষ্ট ।

২) “পৃথিবীতে জন্মেছি পৃথিবীকে সেটা খুব কষে বুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি” – কে কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছে ? উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’  নাটকের ‘পাহাড় মাঠ’ শীর্ষক  দ্বিতীয় দৃশ্যে মন্তব্যটি করেছেন প্রথম যুনক । 

∆ অচলায়তনের  প্রাচীর ভেঙে পড়ার পরই সকলেই ধীরে ধীরে গুরুকে স্বীকার করেছে । নতুনকে আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছেন তাদের গুরুর মধ্য দিয়েই । একমাত্র মহাপঞ্চক ছিলেন এর ব্যতিক্রমী । সকলের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন হাসির পাত্র । যুনকদের কেউ তাকে পরিহাসের ছলে শাস্তি দেওয়ার কথা বলে, কেউ তাঁকে বন্দি করতে চায় । এই প্রসঙ্গেই গুরু মন্তব্যটি করেন ।

মহাপঞ্চকের সাথে গুরুর মতাদর্শগত বিরোধ থাকলেও গুরু তাকে অকারণে অপমানের মধ্যে টেনে আনতে চাননি । গুরু বিশ্বাস করেন, শাস্তি দেওয়ার তিনি কেউ নন, বরং মহাপঞ্চক যে মানসিক স্তরে বিরাজমান সেটা তার স্পর্শেরও বাইরে ।  যুনকদের সঙ্গে নিয়ে অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে ফেলে তা মুক্তাঙ্গনে পরিণত করেছিলেন । বাইরের প্রাচীর  ভেঙে ফেললেও অন্তরের প্রাচীর ভাঙা সম্ভব হয়ে ওঠেনি ।

৩) “একটু উৎপাত হলে যে বাঁচি” – কে বলেছে ? কোন উৎপাত ? সে কেনো উৎপাত চায় ?

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্য ‘পাহাড় মাঠ’-এ আগত পঞ্চক দাদা ঠাকুরকে একথা বলেছিল । 

∆ দাদা ঠাকুর যখন যুনকদের গ্রামে  কথাবলছিল তখন  পঞ্চক জানায় যে,  অচলায়তনে ‘গুরু আসছেন’ । দাদা ঠাকুরের ছদ্মবেশে গুরু সে কথা শুনে বলেন — “ভারী উৎপাত করবে তাহলে তো”। এই ধরনের কথার মধ্যে দাদাঠাকুরের   এক ধরনের কৌতুক আছে তা বলাই বাহুল্য । পঞ্চক এই কৌতুকের অর্থ না বুঝেই বলেন — “একটু উৎপাত হলে যে বাঁচি”। 

     প্রতিদিনের একঘেয়ে বদ্ধ জীবনযাপনে সে হাঁপিয়ে উঠেছে । এর মধ্যে সে কিছু পরিবর্তন চায়, নতুনত্বের আস্বাদ পেতে চায়, খােলা আকাশের নীচে মুক্ত কণ্ঠে গান গেয়ে মুক্ত মনে ছুটে বেড়াতে চায় । খাঁচায় বদ্ধ পাখির মতাে জীবন তার দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, এর থেকে সে মুক্তি পেতে চায় । নড়াচড়াবিহীন অচল জীবন বদ্ধ জলাশয়ের মতাে মজে যায় । সেটা তখন মৃত্যুরই দোসর হয়ে ওঠে । তাই জীবনের গতি  পাল্টে নিতে হয়, যাতে সে মুক্তির আনন্দ উপভােগ করতে পারে । কাজের মধ্য দিয়েই পঞ্চক জীবনে গতির সঞ্চার করতে চায় । এই বিপ্লবের মধ্য দিয়েই আসতে পারে পরিবর্তন, যা এনেদিবে নূতন দিন, যাতে ভেঙে যাবে অন্ধসংস্কার । তাই পঞ্চক তাদের বৈচিত্র্যহীন, নীরস একঘেঁয়ে জীবনে একটু উৎপাত-ই চেয়েছে ।

৪) “উনি গেলে তোমাদের অচলায়তনের পাথরগুলো সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে, পুঁথিগুলোর মধ্যে বাঁশি বাজবে” — বক্তা কে ? উনি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?  তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ” নাটকের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘গুরু’ নাটকের অন্তর্গত উদ্ধৃত অংশের বক্তা প্রথম যুনক ।

     আলোচ্য অংশে ‘উনি’ বলতে দাদাঠাকুরকে বোঝানো হয়েছে । 

∆ তাৎপর্য : প্রথম যুনকের এই বক্তব্যের মধ্যেদিয়ে গতিহীনতার বিরুদ্ধে  আনন্দময় প্রাণধর্মের জয় প্রকাশিত হয়েছে ।

অচলায়তনের বন্ধ প্রাচীরের মধ্যে বাইরের আলো-বাতাসেরও প্রবেশ নিষেধ । যুনকরা মনে করে, অচলায়তনে দাদাঠাকুরের প্রবেশ জীর্ণ সংস্কারের বন্ধনকে চুর্ণ করবে । জীবনে আনবে মুক্তির আনন্দ । মুক্তির আনন্দে নৃত্য করে উঠবে অচলায়তনের জর্জরিত পাথরগুলো । বাঁশির সুরের মধ্যে শোনা যাবে জীর্ণ আচারের সংকলিত পুঁথিগুলোর আর্তি । 

    দাদাঠাকুরের এই  আগমনে অচলায়তনের কারাপ্রাচীর  ভেঙে গিয়ে দীপ্তিময় আলোকের উত্থান ঘটবে ।

৫) “গুরু নাটকে মোট ক’টি সংগীত আছে ? নাটকটিতে সংগীতের ভূমিকা আলোচনা কর ।

👉🏻 উত্তর :  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে মােট সাতটি সংগীত বা গান রয়েছে।

∆ নাটকে সংগীতের ভূমিকা : গুরু নাটকের সাতটি গানের মধ্যে ছটি গান ‘অচলায়তন’ নাটকেও  ছিল ।  একটি নতুন গান নাটকে সংযােজিত হয়েছে। “তুমি ডাক দিয়েছে কোন সকালে” গানটির সম্পূর্ন রুপ পাই ‘অচলায়তন’ -এ ।  ‘গুরু’ নাটকে তার দুই মাত্র চরণ ব্যবহৃত হয়েছে । পঞ্চকের মুক্তির ইচ্ছা, আকুলতা এই গানের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে । পঞ্চকের দ্বিতীয় গান, “ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে” – এই গানেও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা গুঞ্জরিত হয়ে উঠেছে । তৃতীয় গানে পঞ্চক গেয়ে ওঠে – “এ পথ গেছে কোনখানে গো কোনখানে ।”  গানটিতে ‘দুরাশার দিকপানে’ শব্দদের দ্বারা পঞ্চকের ব্যাকুলতা প্রকাশিত হয়েছে । 

 যূনকদের “আমরা চাষ করি আনন্দে” আর “সব কাজে হাত লাগাই মোরা” -গান দুটিতে এই যৌথ কর্মমুখর জীবনের আনন্দের কথাই প্রকাশ পায়। “ও অকূলের কুল, ও অগতির গতি” দর্ভকদের এই গানটিতে প্রকাশ পেয়েছে অকৃত্রিম ঈশ্বরভক্তি। ‘গুরু’ নাটকের শেষে “ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়” গানটি অচলায়তন নাটকে ছিল না। যে গুরুর নেতৃত্বে অচলায়তনে দীর্ঘকাল ধরে সযত্নে লালিত যাবতীয় প্রথাসর্বস্বতা বা সংস্কার ভেঙে পড়েছে, তাকে কেন্দ্র করেই এই গানটি গাওয়া হয়েছে। এইভাবে ঘটনার আবহ, চরিত্রের তাৎপর্য এবং নাট্যব্যঞ্জনাকে সার্থক করে তুলতে ‘গুরু’ নাটকে গান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ।

৬) “উনি আমাদের সব দলের শতদল পদ্ম” — এখানে কাকে ‘শতদল পদ্ম’ বলা হয়েছে ? কেন তিনি ‘শতদল পদ্ম ‘ ?

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গুরু নাটক থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে । এখানে  ‘শতদল পদ্ম’ বলতে যুনকদের দাদাঠাকুরকে বলা হয়েছে । বক্তা প্রথম যুনক । 

∆ অচলায়তনের প্রান্তের বাইরে যেখানে যুনকদের বাস সেখানে রয়েছে পাহাড় ও খোলা মাঠ ।  যুনকরা ম্লেচ্ছ, অন্ত্যজ । অচলায়তন তাই তাদের সংস্পর্শ বাঁচিয়ে চলে । যুনাকরা যুক্তির স্বাভাবিক বিকাশে  চাষ করে, লোহা গলায় এসব কাণ্ডকারখানা দেখে পঞ্চক  অবাক হয়ে যায় । যুনকরা শাস্ত্র জানে না, তারা গান জানে । 

    নাটকের শেষে যাকে আমরা গুরু বলে জানতে পারি তিনিই যুনকদের ঠাকুর দাদা । কারণে অকারণে যুনকরা তাকে ভালোবেসে বারবার ডাকে । পঞ্চকের ও ইচ্ছে করে দাদা ঠাকুরকে ডাকতে কিন্তু সেতো যুনক নয় । দাদা ঠাকুর যে, ঠিক কার দলে এ নিয়ে পঞ্চকের মনেও সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত দাদা ঠাকুরকে ডেকে পঞ্চক সে কথা জানায়ও । প্রথম যূনক তার প্রত্যুত্তরে বলে যে, দাদা ঠাকুরের কোন দল নেই, তিনি শতদল পদ্মের মতো সব দলেই বিরাজমান । নাটকে উল্লেখিত ‘শতদল পদ্ম’ শব্দের মধ্য দিয়ে বিশ্বমানবতার প্রাণস্বরূপ কে বুঝিয়েছেন ।  রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে লিখেছেন — “আজি খুলিও হৃদয় দল খুলিও, আজি ভুলিও আপন পর ভুলিও  ।”  প্রথম যূনক এর কথায় দেখি এই গানেরই পুনরুত্থান । এর থেকে স্পষ্ট যে দাদাঠাকুর সংকীর্ণতার আধার নন, তিনি বিশ্ব মানবতার প্রাণস্বরূপ ।

৭) “আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি ।”– বক্তা কে ? কোন প্রসঙ্গে, কাকে উদ্দেশ্য করে বক্তা এ কথা বলেছেন ? এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে ?

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে উদ্ধৃত সংলাপের বক্তা হলেন আচার্য অদীনপুণ্য ।

        সুভদ্রের মর্ম নিঙড়ানাে চোখের জল ও কান্নার  কথা বলতে গিয়ে আদীনপুন্য  পঞ্চককে উদ্দেশ্য করে একথা বলেছেন ।

∆ গুরু মুক্তি সাধনার জন্যে যে আয়তনের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাকে  সংস্কারশাসিত অচলায়তনে পরিণত করেন স্বয়ং আচার্য ।

 অচলায়তনে যারা গুরুস্থানীয় আদীনপুন্য তাদের মধ্যে অন্যতম ।  সকলে যখন শাস্ত্রের মোহে নিমজ্জিত তখন আদীনপুন্যই কেবল নিজের মতো করে গুরুর আগমনের বার্তা জানতে চেয়েছেন । সুভদ্রকে মহাপঞ্চক  সহ অন্যান্যরা যখন মহাতামস ব্রত  পালন করতে বাধ্য করেছে, তখনও তার কণ্ঠে একমাত্র প্রতিরোধ শুনি ।

    সুভদ্রের মর্ম নিঙড়ানো চোখের জল ও ক্রন্দনরত মুখটা মনে পড়লেই আচার্যের চোখের পাতা ভিজে ওঠে ।  সুভদ্রের প্রতি এই সহানুভূতিশীলতার  জন্যেই তিনি দর্ভকপল্লীতে নির্বাসিত । সুভদ্রের কান্নাটুকু ভুলতে পারেননি তিনি অচলায়তন থেকে দূরে এসেও । আদীনপুন্যের মানবিক রূপটিকে আমরাও চিনে নিয়েছি । আচার্য অদীনপুণ্য মনে করতেন সকল শিশুর মধ্যেই দেবতার অবস্থান । অথচ তিনি যে মন্ত্রের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা এক শিশুর মনকে কিভাবে চেপে বসেছে তাই দেখে তিনি শিহরিত হন । তাই তিনি প্রাণরোধকারি এই চক্রাবর্তন থেকে বেড়িয়ে এসেছেন মানবিকতার পথে ।

৮) “শুনছি অচলায়তনে কারা সব লড়াই করতে এসেছে ।”– শিক্ষায়তন কীভাবে অচলায়তনে পরিণত হয়েছিল ? সেখানে কারা, কেন লড়াই করতে এসেছিল ?

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গুরু’ নাটকে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষের বিজ্ঞান বিরোধী চিন্তা – ভাবনার নিয়ম নীতি তুলে ধরেছেন । অচলায়তন আপাতভাবে শিক্ষায়তন হলেও দীর্ঘকাল ধরে শাস্ত্র, আচার এবং অন্ধ অনুসরণে তা পরিণত হয়েছে এক অচল আয়তনে ।  বাইরের জগতের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই । প্রকৃতির প্রবেশ সেখানে নিষেধ । কুলদত্তের ক্রিয়াসংগ্রহ বা ভরদ্বাজ মিশ্রের প্রয়োগ প্রবৃত্তি অচলায়তন পথের সন্ধান খোঁজে ।  আচার্য এর ব্যাখ্যায় বলেন, — “এখানকার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখানকারই সমস্ত শাস্ত্রের ভিতর থেকে পাওয়া যায় ।”  বালক সুভদ্র উত্তর দিকের জানালা সামান্য কৌতূহল  বসে খুললে তা এখানে মহাপাপ বলে বিবেচিত । ‘খাঁচার ময়না’ পাখি যেমন শেখানো বুলি আওড়ায় তেমনই এখানকার  শিক্ষার্থীরাও না বুঝে শেখানো বুলি আওড়ে যায় । মানবতার ওপর শাস্ত্রের এই স্থাপন   শিক্ষার পক্ষে ক্ষতিকর । যার ফলে  শিক্ষালয়ের আচলায়তনে পরিণত হওয়া নিশ্চিত হয়ে যায় ।

∆ দাদাঠাকুরের নেতৃত্বে সেখানে যুনকেরা লড়াই করতে এসেছিল।

    আপাতভাবে চন্ডকের হত্যা এবং দশজন যুনককে কালঝন্টি দেবীর কাছে বলি দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে যাওয়ার শােধ নেওয়া, এসব বাহ্যিক কারণ । আসলে তারা এসেছিল অচলায়তনের পাপের প্রাচীরকে ধুলােয় মিশিয়ে দিতে।

৯) “আমরা প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধি, থাকি তার মাঝেই ।”– এই গান কারা গেয়েছে ? প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধার উদ্যম কীভাবে তাদের গানে ভাষা পেয়েছে ?

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকে “আমরা প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধি, থাকি তার মাঝেই” গানটি গেয়েছিল যুনকরা ।

∆  ‘গুরু’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্য হল – ‘পাহাড়ের মাঠ’ । সেখানে পঞ্চক যুনকদের সাথে মিলিত হয় । মিলিত হয়ে পঞ্চক জানতে পারে যুনকদের কোনো মন্ত্র-তন্ত্র শিখতে হয় না । এবং তাদের দৈনন্দিন জীবন কর্মময় । অথচ অচলায়তন কঠিন পাথরে বাঁধা এক শিক্ষায়াতন । নিয়মের শৃঙ্খল সেখানে প্রতি পদে পদে । এমনকি সূর্যালোকের প্রবেশাধিকারও নেই সেখানে । এর ঠিক বিপরীতে যুনকদের অবস্থান । কোনো কাজে নামার আগে হার জিতের কথা ভাবে না, তাদের কাছে কাজ করাটাই আসল আনন্দ । অবাধ আনন্দে যুনকেরা  ঘর বাঁধে, চাষ করে, নাচে, গায় — নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করে । পঞ্চকও অবাক হয়ে দেখে তাদের প্রাণশক্তি । একইসাথে  যুনকরা কোনো কাজে নামলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়ে না । খেসারির ডাল থেকে কাঁকুড় কোনো চাষেই যুনকদের কোনো বাঁধা নেই । তাদের ঘর বাঁধার মতো আছে প্রাণের আনন্দ । যে আনন্দকে অচলায়তন বারবার অস্বীকার করতে চেয়েছেন । তারা কর্মকেই জীবন বলে মনে করেন । সংকীর্ণতা তাদের গ্রাস করেনি । যুনকরা অদৃষ্টবাদি নয় তারা মন্ত্র-তন্ত্রে বিশ্বাস করেন না । তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যের কারিগর ।  আর এভাবেই তারা প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধে এবং জীবন অতিবাহিত করে ।

এই নয়টি প্রশ্নের উত্তর এর PDF টি ডাউনলোড করে নাও 👇

আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇

বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান

বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান

বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান

বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান

গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।

বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা

আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান

গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান

প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান

Leave a Reply