আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয়ঃ রাজশেখর বসু (পরশুরাম, ১৮৮০-১৯৬০) , পরশুরাম রচিত গ্রন্থাবলি, রাজশেখর বসু ছোটগল্প, গড্ডালিকা রাজশেখর বসু, পরশুরাম গল্প,
বাংলা সাহিত্যে রাজশেখর বসু(পরশুরাম)-এর অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ পরশুরামের প্রকৃত নাম রাজশেখর বসু । তিনি হাস্যরসাত্মক গল্প রচনা করে বাঙালি পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন । ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকাতে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড’ নামক ব্যঙ্গাত্মক গল্পটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব ।
তাঁর অনেক গল্পের উপাদানই সমকালের সমাজ-জীবন থেকে গৃহীত ; কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সমাজজীবনে বহু পরিবর্তন সাধিত হলেও গল্পগুলির মূল্যবোধ কিন্তু একটুও কমেনি । তার কারণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে , সমাজের বহিরঙ্গা যে অনুপাতে পরিবর্তিত হয়েছে , সমাজ-মানুষের অন্তরঙ্গ জীবনে তদনুরূপ বিবর্তন দেখা যায়নি ।
গল্পকার পরশুরামের ছোটোগল্পে সমাজ-সমস্যা নয় , মানুষের মনস্তত্ত্বের মূলে পৌছে তার অসঙ্গতিগুলিকে উপনীত করে যে সমস্ত গল্প রচনা করেছেন তাদের কোনো সম-সাময়িকতা নেই , আছে চিরক্তনতা । তাই সমাজ-বিবর্তনে এদের রসাস্বাদে কোনো বিঘ্ন ঘটে না , সর্বযুগে সর্বত্রই এদের অস্বাদ্যমানতা বজায় থাকে । বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে গল্পগুলির উপযোগিতার আরও একটি বিশেষ কারণ—এই গল্পগুলির কোনো অনুসৃতি এ কালেও দুর্লভ বলেই এজাতীয় বুদ্ধি ও কৌতুকোদ্দীপ্ত হাস্যরসাত্মক কাহিনির দাবি সমভাবেই বর্তমান।
পরশুরামের গল্পগ্রন্থ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল — ‘গড্ডলিকা’ (১৯২৪) , ‘কজ্জলী’ (১৯২৭) , ‘হনুমানের স্বপ্ন’ (১৯৩৭) , ‘লঘুগুরু’ (১৯৩৯) , ‘গল্পকল্প’ (১৯৫০) , ‘ধুস্তরীমায়া’ (১৯৫২) , ‘কৃষ্ণকলি’ (১৯৫৩) , ‘নীল তারা’ (১৯৫৬) , ‘আনন্দীবাঈ’ (১৯৫৭) প্রভৃতি ।
‘গড্ডলিকা’ গ্রন্থটিতে রয়েছে পাঁচটি গল্প । এগুলি বিচিত্র সাধের গল্প । ‘শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড’ , ‘চিকিৎসা সংকট’ , ‘মহাবিদ্যা’ , ‘ভূশণ্ডীর মাঠে’ প্রভৃতি গল্পে সমাজের নানা ধরনের মানুষের কথা তুলে ধরেছেন ।
‘কজ্জলী’ গ্রন্থিতে চলচ্চিত্র গল্প হল — ‘বিরিঞ্চিবাবা’ ও ‘জাবালী’ । ‘বিরিঞ্চিবাবা’ গল্পে গুরুশিষ্য সংলাপ সমবায়ে গঠিত প্রতারক চক্রের ভন্ডামীর মুখোশ খুলে দিয়েছেন । ‘জাবালী’ গল্পে পাওয়া যায় পৌরাণিক ঋষি চরিত্রের যুগোপযোগী মূল্যায়ন ।
‘কৃষ্ণকলি’ গ্রন্থের ‘নিরামিষ বাঘ’ কিশোরদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় গল্প । বিশ শতকের পরবর্তী সমাজ ও সমাজের মানুষের যাবতীয় অসঙ্গতি ও ত্রুটি-বিচ্যুতিকে তুলে ধরেছেন ‘কচি সংসদ’ , ‘স্বয়ম্বর’ প্রভৃতি গল্পে ।
বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময় ও সমাজের মানুষ এবং তাদের আচার-আচরণের নীতি ও নীতি ভ্রষ্টতার পরিচয় উদ্ভাসিত হয়েছে ‘লম্বকর্ণ’ গল্পে । সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক আচরণে নিহিত হাস্যরস কেমন করে পরিস্থিতির প্রভাবে ঘনীভূত হয়ে ওঠে তা তাঁর রচনায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে ।
তাঁর রচনায় চরিত্রের আচার-ব্যবহার , একমুখী তীক্ষ্ণ সংলাপ রচনায় , পরিবেশ সৃষ্টি ও ঘটনার কৌতুককর সন্নিবেশে গল্পগুলি রসিক সমাজের কাছে শুধুমাত্র চিত্ত বিনোদনের উপকরণ হিসেবে গৃহীত হয়নি , রসোত্তীর্ণ হয়ে চিরকালীন সাহিত্য হয়ে উঠেছে ।
আরো দেখে রাখতে পারো👇👇👇
বাংলা কাব্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কবি-মাইকেল মধুসূদন দত্তর অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান
বাংলা কাব্যে কবি মোহিতলাল মজুমদারের অবদান
বাংলা কাব্য-সাহিত্যে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-র অবদান
বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান
গীতিকবিতার ভোরের পাখি কাকে বলে হয় ? বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো ।
বাংলা কাব্য সাহিত্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান
বাংলা কাব্যে বিষ্ণু দে-র অবদান আলোচনা
আধুনিক বাংলা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অবদান
গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান
প্রবন্ধ সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান
কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
কথাসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
কথাসাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান
উপন্যাস সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান